ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
বর্ষা-বন্যায় দেশের বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা দ্রæত মেরামতের ব্যবস্থা করে যান চলাচলের উপযোগী করার সুপারিশ করেছে সরকারি প্রতিশ্রæতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। একই সঙ্গে মহাসড়কে ক্ষমতার অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক চলাচল করে যাতে ক্ষতিসাধন করতে না পারে সেদিকে কঠোর নজরদারিরও সুপারিশ করেছে। সংসদীয় কমিটির এ সুপারিশ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও জনকল্যাণমূলক নিঃসন্দেহে। এ ধরনের সুপারিশ অনুসরণ করা হলে চলাচলের ক্ষেত্রে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হবে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। যারা এই নির্দেশনা অনুসরণ করে জনগণের জন্য চলাচল উপযোগী সড়ক গড়ে তুলতে ব্যবস্থা নেবেন তাদের মধ্যে অনেকেরই সদিচ্ছার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজধানীর কোনো সড়কেই মেরামতের কাজ শুরু হয়নি। বরং খানাখন্দ এবং ভাঙাচোরা রাস্তার সংখ্যা আরো বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রায়ই নগরবাসীকে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। রাজধানীর অনেক সড়কেই এখন জান হাতে করে চলাচল করতে হয়। পানি ভরা গর্তের পানি ছিটকে প্রতিদিনই শত শত পথচারী নাস্তানাবুদ হচ্ছেন। বিভিন্ন সড়কে গর্তে পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি বা প্রাইভেট কার যাত্রীরা হরহামেশা আতঙ্কিত হচ্ছেন। দেশের প্রায় সব স্থানেই ক্ষতবিক্ষত সড়কে পথ চলতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যায়ও ভুগছেন অনেকে।
এসব ঘটনা নিয়ে বা সড়কের হালহকিকত নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংবাদপত্রে রিপোর্ট বেরুচ্ছে। টিভি চ্যানেলে সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হচ্ছে। যাত্রী বা পথচারীদের অভিযোগেরও অন্ত নেই। কিন্তু তার কোনো ফলাফল এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রাজধানীর রামপুরা থেকে মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর পর্যন্ত এলাকার সড়কে যে বেহাল অবস্থা তার ইতি কবে ঘটবে, তা কেউ জানে না। অথচ এটি রাজধানীতে চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়কের একটি অংশে ফ্লাইওভারের কাজ চলছে কয়েক বছর যাবৎ। এ কাজ শুরু হওয়ার অব্যবহিত পর থেকে চৌধুরীপাড় থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত সড়কটি একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। রাজধানীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলো আগারগাঁও থেকে মিরপুর। এই সড়কটির এক পাশ গত কয়েক মাস ধরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। প্রতিদিনই মিরপুরগামী কয়েক লাখ মানুষ শুধুমাত্র সড়ক সঙ্কটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে ধুঁকতে থাকেন। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, সায়েদাবাদ, উত্তরা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে থাকা সড়কগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। আঞ্চলিক সড়কগুলোর অবস্থা আরো ভয়ানক। সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় সড়ক বলে কিছু আছে এমনটি বলা যাবে না। এ নিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কোনো উদ্যোগও তেমন দেখা যায় না।
মহাসড়কে ক্ষমতার অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক চলাচল করে রাস্তার যে ক্ষতিসাধন করে সে জন্য আজ পর্যন্ত ক’টি ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা কি সংশ্লিষ্ট কেউ অবগত? দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কেল বসানো হয়েছে, কোনো ট্রাক ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত মাল বহন করছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। কিন্তু তাতে কোনো কার্যকর সুফল এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কখনো কখনো লোক দেখানো দু-একটি পদক্ষেপ নেয়া হলেও তার কোনো ধারাবাহিকতা রক্ষা হয় না। অভিযোগ আছে, ট্রাকে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত মালবোঝাই আছে কি না সেটি পরীক্ষা করার সঙ্গে সম্পৃক্তদের একটি অসৎ চক্র নগদের বিনিময়ে ট্রাকগুলো ছেড়ে দেয়। রাজধানীসহ সারাদেশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের ট্রাক বা বিভিন্ন যানবাহন থেকে ‘নগদ পাওনা’ নেয়ার বিষয়টি কিছুক্ষণ সড়কে অবস্থান করলেই দেখা যায়।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি প্রতিশ্রæতি সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির এ সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলো কি হলো না সেটি অবিলম্বে মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। জনগণের জন্য কল্যাণের প্রতিশ্রæতি দিয়ে সরকারের যে যাত্রা সে পথচলায় কোনো কিছুই যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেটি নিশ্চিত হতে হবে।
লেখক : উপ-উপাচার্য, উত্তরা ইউনিভার্সিটি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।