পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষিণ-পূর্বপাশে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার জমি অবৈধ দখলদলে। দীর্ঘদিন ধরে রাজউকের ওই জমি বেদখলে থাকলেও এ নিয়ে যেন রাজউকের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তবে রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যন দায়িত্ব পাওয়ার পর এ নিয়ে রাজউক নড়েচড়ে বসেছে। শিগগিরই অবৈধ দখলদার উদ্ধারে রাজউক সাঁড়াশী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৪০০ কাঠার ৩৯টি প্লট দখল করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ দখলদার চক্র। ৩ কাঠা থেকে ৭০ কাঠা জমির প্লটও রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এ অবৈধ দখলদারেরা রাজনৈতিক প্রভাবকাটি প্লটগুলো জবরদখল করে রেখেছে। এসব জমি প্রতি কাঠার বর্তমান বাজারমূল্য ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। এ হিসাবে এসব জমির দাম প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।সত্তর দশকে রাজউক এসব প্লট বাণিজ্যিক প্লট হিসাবে বরাদ্দার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে ছিল। কিন্ত নানা কারণে ওই প্লটগুলো আর বরাদ্দা দিতে পারেনি রাজউক। পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকার আমলে অবৈধ দখলদারদেরও হাত বদল হয়েছে কয়েক দফায়।
রাজউক জানায়,মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলের পাশ দিয়ে সোজা পূর্ব দিকে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের পাশেই রাজউকের প্রায় সাড়ে ৪০০ কাঠা জমির ৩৯টি প্লট রয়েছে। এই কমিউনিটি সেন্টারের পশ্চিম ও উত্তর পাশের রাস্তা ধরে প্লটগুলোর অবস্থান। রাজউকের কাগজ-কলমে প্লটগুলো মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার (এক্সটেনশন) ১ নম্বর সড়ক থেকে ৫ নম্বর সড়কে হলেও বর্তমানে ব্যবহৃত সাইনবোর্ডগুলোতে সাদেক হোসেন খোকা সড়ক ও বক্সকালভার্ট সড়ক নামে উল্লেখ রয়েছে। ফলে কোনটি কোন সঠিক নম্বর প্লট সেটা বোঝার উপায় নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে,ওই এলাকায় রাজউকের প্লটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট, গাড়ির গ্যারেজ,ওয়ার্কশপ,ভাসমান চায়ের দোকান, হোটেল,ভাঙ্গারির দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে এগুলোর অধিকাংশই ভাড়াটিয়া রয়েছে। দখলদারেরা অভৈধভাবে দভলের পর সেখানে ছোটবড় কাঁচা-পাকা সেমিপাকা ঘর তোলে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছে। নীচু জায়গা হওয়াতে পুর্বে ওই এলাকাটি প্রায় সারা বছরই পানিতে সয়লাব থাকত। কয়েক বছর আগে সেখানে মাটি ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদারেরা।
রাজউকের তালিকা অনুযায়ী মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার (এক্সটেনশন) ১ নম্বর সড়কের ৩, ৫, ৭, ৯, ১২ ও ১৪ নম্বর প্লট অবৈধ দখলে। এগুলোর আয়তন ৮ দশমিক ২৮ কাঠা থেকে ১০ দশমিক ৯ কাঠা পর্যন্ত। ২ নম্বর সড়কের ৫, ৭ ও ৯ নম্বর প্লট অবৈধ দখলে। এগুলোর আয়তন ৮ দশমিক ২ কাঠা থেকে ৭৭ দশমিক ১৩ কাঠা। ২/এ নম্বর সড়কের ২, ৪, ৬ ও ৮ নম্বর প্লট। এগুলোর আয়তন ৭ দশমিক ৫৫ কাঠা থেকে ১২ দশমিক ৯৩ কাঠা। ৩ নম্বর সড়কের ৫, ৭, ৮ ৯, ৯/এ, ১০, ১২ ও ১৪ নম্বর প্লট অবৈধ দখলে। এগুলোর আয়তন ২ দশমিক ৯৪ কাঠা থেকে ১২ দশমিক ৫ কাঠা। ৪ নম্বর সড়কের ১, ৩, ৫ ও ৭ নম্বর প্লট অবৈধ দখলে। এগুলোর আয়তন ৯ দশমিক ৬৭ কাঠা থেকে ১০ দশমিক ৪৮ কাঠা। ৪/এ নম্বর সড়কের ২, ৪, ৬ ও ৮ নম্বর প্লট। এগুলোর আয়তন ৮ দশমিক ০১ কাঠা থেকে ১০ দশমিক ৪৮ কাঠা। ৫ নম্বর সড়কের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৮, ১০ ও ১২ নম্বর প্লট অবৈধ দখলে। এগুলোর আয়তন ৮ দশমিক ০১ কাঠা থেকে ১০ দশমিক ৭৩ কাঠ ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনালী অটোমোবাইলস নামের একটি ওয়ার্কশপে প্রাইভেট কার মেরামতের কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। দোকানের সাইন বোর্ডে ঠিকানা হিসেবে লেখা আছে ১২২, সাদেক হোসেন খোকা সড়ক। শাহেন শাহ অটো মোবাইলস নামের আরেকটি ওয়ার্কশপে প্রাইভেট মাইক্রোবাস রাখা। সেখানে মেরামতসহ পুরনো গাড়িও বিক্রি হয় বলে জানান দোকানের এক কর্মচারী। সাইন বোর্ডে লেখা, ‘এখানে সকল প্রকার গাড়ির পেট্রোল, ডিজেল ইঞ্জিন ওভারহোলিং, ডেন্টিং, পেইন্টিং ও এসি ইলেকট্রিকের কাজ করা হয়’। আরেকটি প্লটে গড়ে তোলা মেহেদি মোবারক অটো মোবাইলসের সাইন বোর্ডে লেখা গাড়ির কাজ ‘অভিজ্ঞ কারিগর দ্বারা করা হয়’। এর পাশেই অপর একটি প্লটে টিনের বেড়া দেওয়া ঘর। নষ্ট ইলেকট্রনিক সামগ্রীতে ভর্ত্তি ঘরটি। ভাঙাচোরা কম্পিউটার মনিটর, সিপিইউ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, ফ্রিজ রাখা সেখানে। খোলা জায়গায় এগুলো পড়ে আছে। একপাশে রয়েছে একটি টিনশেড ঘর।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রাহমান বলেন, আমারা ওই জমি উদ্ধার করে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করার উদ্যোগ নেব। তবে তার আগে অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে হবে। এ জন্য খুব তাড়াতাড়ি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
চেয়ারম্যান বলেন, আদলতে মামলা থাকায় উচ্ছেদে বিলম্ব হচ্ছে। ওই জমির ওপর অনেকরই চোখ পড়েছে। জমিটা খুবই মূল্যমান। টাকার অংকে হিসাব করে এর মূল্য নির্ধারন করা যাবে না। মতিঝিলের ওই জমি সোনার চেয়েও দামী।
রাজউকের সম্পত্তি বিভাগ থেকে জানানো হয়, বেদখলকৃত ওই জমি উদ্ধারের জন্য খুব দ্রæত অভিযান চালানো হবে। আদালতে মামলা থাকার কারণে এবং দখলদারেরা অত্যান্ত প্রভাবশালী হওয়াতে তাদের উচ্ছেদ করতে সময় লাগছে। এবার ওই প্লটগুলো উদ্ধার করা হবে।
রাজউক জানায়, সত্তরের দশকে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা (এক্সটেনশন) নামের একটি বাণিজ্যিক প্লটের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল রাজউক। তবে তখন প্লটগুলো কাউকে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি নানা কারণে। ফাঁকা থাকায় বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীরা এগুলো দখল করে নিয়েছেন।এরই মধ্যে কয়েকজন কিছু প্লটের মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। এসব প্লটের আয়তন সর্বনিম্ন তিন কাঠা থেকে শুরু করে ৭৭ কাঠা পর্যন্ত। সব মিলিয়ে ৩৯টি প্লটে জমির পরিমাণ সাড়ে চারশ› কাঠারও বেশি। স্বর্ণতুল্য এসব প্লট দীর্ঘদিন ধরে বেহাত। এগুলোতে রাজউকের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, স্বণের চেয়েও বেশি দামের ওই বিপুল টাকার জমি উদ্ধার করা খুব একটা সহজ নয়। কারণ দখলদারেরা নানা অজুহাতে আদালতে মামলা করে দখেলে রাখছে। এব্যপারে সরকারের শীর্ষমহল থেকে কঠোর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। কারণ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ওই সাড়ে চার শতাধিক কাঠা জমি বেদখল হয়ে আছে দীর্ঘ দিন ধরে। রাজউকের হিসাব অনুযায়ী, বেদখল হওয়া জমির দাম ৬ হাজার কোটি টাকার ওপর। জমি উদ্ধারে ব্যর্থ রাজউক বেশ বিপাকেই পড়েছে। নিলামের মাধ্যমে প্লট বিক্রির উদ্যোগ নিলেও ক্রেতা পাওয়া যায়নি। বরং এই জমিতে ক্ষমতার দাপটে যে যেভাবে পারছে দোকানপাট তুলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এক সময় মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার পূর্বদিকে (ওয়াপদা ভবন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে) ডোবা-নালা ও সেগুনবাগিচা খাল ছিল। নব্বই দশকে খালের ওপর বক্স কালভার্ট তৈরি করে ঢাকা ওয়াসা। এই বক্স কালভার্টের দু’পাশের জমি নিজেদের দাবি করে ‘মতিঝিল স¤প্রসারিত বাণিজ্যিক এলাকা’ প্রকল্প হাতে নেয় রাজউক। সে অনুযায়ী প্রায় অর্ধশত বাণিজ্যিক প্লটের লে-আউট প্ল্যানও তৈরি করা হয়। কিন্তু মূল্যবান এই জমি বেদখল হয়ে যাওয়ায় রাজউকের প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।