পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কতিপয় সদস্যের কারণে গোটা বাহিনীকে দায়ী করা যায় না -আদালত
নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন, সাবেক তিন ব্যাব কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ১১ জনের নিন্ম আদালতে দেয়া মৃত্যুদন্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, অন্যথায় আরও দুই বছরের সাজা ভোগ করতে হবে। এছাড়াও নয়জনকে দেয়া বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ডের রায়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি হাইকোর্টে।
গতকাল মঙ্গলবার আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামিরা যে ধরনের অপরাধ করেছে, যদি তারা ছাড়া পেয়ে যায়, তাহলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণ আস্থাহীনতায় ভুগবে। দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এ বাহিনীর প্রতি মানুষের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। কতিপয় সদস্যের কারণে সামগ্রিকভাবে গোটা বাহিনীকে দায়ী করা যায় না।
এদিকে রায়কে দৃষ্টান্ত মূলক উল্লেখ করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, রায়ে আমি স্বস্তি অনুভব করছি। সাজা দ্রæত কার্যকর চান নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী। অপরদিকে মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের আইনজীবী বলেছেন,এই রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমরা আপিল বিভাগে আপিল করব।
তিন বছর আগে নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ডুবিয়ে দেওয়ার ওই ঘটনা ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। ওই হত্যাকান্ডে এলিট বাহিনী র্যাবের কয়েকজনের জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে এলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও শিরোনাম হয়েছিল।
আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ২৬ জুলাই রায়ের জন্য ১৩ আগস্ট তারিখ রেখেছিলেন। এদিন রায়ের তারিখ পিছিয়ে ২২ আগস্ট নতুন তারিখ দেন আদালত।
গতকাল পূর্ব নিধারিত দিনে আগে থেকে সংবাদ সংগ্রহে আদালত প্রাঙ্গণে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ কর্মীরা হাজির হন। এছাড়াও বিচারপ্রার্থীরা ও আসামী পক্ষের ব্যক্তিবর্গরা আদালতে আসেন। এসময় আদালতের রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মাহবুবে আলম, আর আসামিপক্ষে আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও আইনজীবী এস এম শাহজাহান প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিপুল সংখ্যাক সাধারণ আইনজীবী। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি। প্রথমে সাংবাদিকদের এজলাস কক্ষে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও পরে দশজন সাংবাদিককে ঢোকার সুযোগ দেয়া হয়। দুপুরে ঘণ্টাখানেক বিরতি দিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় রায় পড়া শেষ করে আদালত। রায়ে ১৫ আসামির মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল থাকে।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন:
নূর হোসেন, তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, এ বি মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব আলী, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, তিন জন সৈনিক হলেন, আবদুল আলিম, মহিউদ্দিন মুনশি, আল আমিন, তাজুল ইসলাম।
যাবজ্জীবন পাওয়া আসামিরা হলেন
সৈনিক আসাদুজ্জামান নুর, সার্জেন্ট এনামুল কবির, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান, রহম আলী, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান, সেলিম, সানাউল্লাহ, শাহজাহান ও জামালউদ্দিন।
১০ বছর সশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন: ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই কামাল হোসেন ও করপোরাল মোখলেছুর রহমান।
৭ বছর সশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন: কনস্টেবল হাবিবুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিনকে সাত বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। এছাড়া ১০ বছর কারাদন্ড প্রাপ্ত মোখলেছুরকে আলামত অপসারণে যুক্ত থাকার দায়ে আরও ৭ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়।
দন্ডিত আসামিদের মধ্যে নূর হোসেন ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। আর চাকরি হারানো সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদ হলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা। এ মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৫ জনই ছিলেন সশস্ত্র ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার আপিলের রায়কে দৃষ্টান্ত মূলক’ বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, এই হত্যাকান্ডে হাইকোর্ট বিভাগ ১৫ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছে। এটাকে একটা দৃষ্টান্তমূলক রায়ই বলব আমি। আমরা স্বস্তি অনুভব করছি।
আসামী পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য: সাত খুনের আপিলের রায়েও মতৃ্যুদন্ডে দন্ডিত সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর পহাসেন ন্যায়বিচার পাননি বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবী। রায়ের পর আইনজীবী এস আর এম লুৎফর রহমান বলেছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তিনি বলেন, আমরা আপিল বিভাগে আপিল করব।
নিহতে একজনের স্ত্রী ও নূর হোসেনের ভাইয়ের বক্তব্য: হাইকোর্টের রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী বিউটি বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। আমরা চাই সুপ্রিম কোর্টও এ রায় বহাল রাখুক, দ্রæত এ রায় কার্যকর করা হোক। আসামিরা যে ধরনের অপকর্ম করেছে তার উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নূর হোসেনের ভাই নূর উদ্দিন বলেছেন, তাঁর ভাইয়ের বর্তমান পরিণতির জন্য মিডিয়া দায়ী। তিনি বলেন, আসলে মিডিয়ার কারণেই এমন হলো। আপনি আবার মাইন্ড কইরেন না।
মামলা ও বিচার:
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি মরদেহ। পরদিন মেলে আরেক জনের মরদেহ। নিহত অন্যরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে ও সারা দেশে বিষয়টি হয়ে ওঠে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুু। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটির বাদী নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এবং অপরটির বাদী আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। হাইকোর্টের নির্দেশে র্যাবের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল র্যাবের ২৫ জন কর্মকর্তা, সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। শুরু হয় বিচারকাজ। এরপর গত বছরের ৩০ নভেম্বর জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন জানুয়ারি সাত খুন মামলার রায় দেন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্তকৃত তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদন্ড দেন আদালত। এ মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। গ্রেফতারকৃত ২৩ জনের মধ্যে ১৮ জনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ও পাঁচজনকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা ২০ জন নিয়মিত জেল আপিল করেন। চলতি বছর ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুন মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনসহ আসামিদের নিয়মিত ও জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। গত ২২ মে সাত খুন মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শুরু হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েক দিন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। গত ১৩ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আনা যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।