Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আওয়ামী লীগ না চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়

সুজনের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনঘন সংলাপে বসতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। কারণ তারা মনে করে আওয়ামী লীগ চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আর দেশের সব রাজনৈতিক দল যদি বলে, তারা সুইজারল্যান্ডের মতো নির্বাচন চায়, কিন্তু আওয়ামী লীগ না চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে মনে করে সুজন।
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে ২০টি সুপারিশ তুলে ধরেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও প্রতিযোগিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সহজ হবে না। যদি ক্ষমতাসীন দল না চায়। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই পরবর্তী মেয়াদের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা বর্তমান সংসদ বহাল রেখেই। এই বিধান বহাল রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে লেভেল প্লেইং ফিল্ড বা সবার জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা দুরূহ হবে। আর সেক্ষেত্রে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে সুদূরপরাহত।নির্বাচন কমিশনের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ‘নির্বাচন’ মানেই চয়েস’ বা বিকল্পের মধ্য থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ। তাই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশনকে সকল প্রতিযোগীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শুধুমাত্র নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে সকলের জন্য সম-সুযোগ নিশ্চিত করলেই চলবে না, তফসিল ঘোষণার আগেও তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইনি কাঠমোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। না-ভোটে’র বিধানের পুনঃপ্রবর্তন, মনোনয়নপত্র অনলাইনে দাখিলের বিধান, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্রের সঙ্গে হলফনামা ও আয়কর বিবরণী দাখিলের বিধান, এবং রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক সদস্যদের নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও নিয়মিত আপডেট করার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি। তিনি বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কমিশনকে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট সকলের আস্থা অর্জন করতে হবে এবং নিরলসভাবে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে এই আস্থা টিকিয়ে রাখতে হবে। সরকারের করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সবচেয়ে নিরপেক্ষ, শক্তিশালী ও সাহসী নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়, যদি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকার নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ না করে। তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সরকারের সহায়তা ও সদাচারণ নিশ্চিত করতে হবে। এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, প্রয়োজন মনে করলে সঠিক নির্বাচনের স্বার্থে ইসি তার বাইরেও তা প্রয়োগ করতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, রাজনৈতিক দলের মধ্যস্থতা বা তফসিলের আগে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা ইসির দায়িত্ব নয়। এই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এক দল ভোট চাইছে। আরেক দল শৃঙ্খলিত হয়ে আছে। এখন থেকে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে এবং পরাজয় মেনে নেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাত্তি¡ক বা ক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশের কমিশনের চেয়ে শক্তিশালী ও বড়। কিন্তু সরকার শতভাগ সহায়তা করলেও কী ভালো নির্বাচন সম্ভব? দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু এর অন্তরায় হচ্ছে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, দলীয়করণ ও নিরাপত্তাহীনতা। রাজনৈতিক দলগুলোকে ঠিক করতে হবে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় কিনা। আবার ইসির ওপর সবার আস্থা না থাকলেও তাদের পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন । সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আদালতেরও ভূমিকা আছে। ভারতীয় নির্বাচন কমিশন হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ সেখানকার শক্তিশালী বিচার বিভাগ। তবে তিনি তার বক্তব্যে আদালতের ভূমিকা স্পষ্ট করেননি। বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশে অশান্তি দেখা দেয়। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ভোটার-প্রার্থীদের নিয়ে প্রজেকশান মিটিং হওয়া দরকার এবং নির্বাচনী আইন মানাটা দরকার। অংশীজনদের সঙ্গে ইসির সংলাপের বিষয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ইসি যদি শুধু আওয়ামী লীগকে ডেকে আলোচনা করত, তারা কী রকম নির্বাচন চায়, কী রকম সহায়তা করবে, সেটা জানত, তাহলে ভালো হতো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনঘন বসলে ভালো। কারণ, সব দল যদি বলে, তারা সুইজারল্যান্ডের মতো নির্বাচন চায়, কিন্তু আওয়ামী লীগ না চাইলে তা হবে না। তিনি মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তবে কমিশনকেই উদ্যোগী হতে হবে এবং তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে-তারা কতটা অসহায় বা শক্তিশালী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ইসির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাদের এমন কিছু বলা উচিত না, যাতে এই সন্দেহ আরও বাড়ে। ইসি রাজনৈতিক মধ্যস্থতা করবে না-সিইসির এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যেসব আইন আছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন ও আস্থা তৈরি করতে পারলে মধ্যস্থতার প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে কী অবস্থা হয়, তা গত চার বছরে দেখা গেছে। সরকার সব সময় নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে ভীতির মুখে থাকে। এ কারণে ইমরান এইচ সরকার বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করতে গেলে হামলার শিকার হন। বিএনপি সভা করতে গেলে বাধা আসে এবং প্রধান বিচারপতি কী বলেছেন, তা নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা যাই বলি, কমিশন তাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখেন। অথচ এসব পরামর্শ আমলে নিয়ে একটি সুন্দর ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব। দিনশেষে তার সুফল তারাই পাবেন।
সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান-এর সভাপতিত্বে ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আবুল হাসান চৌধুরী, হুমায়ূন কবীর হিরু, ড. শিবলী নোমান, সাইফুদ্দিন আহমেদ এবং ড. ইমতিয়াজ হোসেন প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ