Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দুদকের সশস্ত্র আর্মড ইউনিট

প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও তদন্তে গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে

| প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অপরাধীকে জিজ্ঞাসাবাদে নিজেস্ব হাজতখানা
মালেক মল্লিক : প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তদন্ত কাজকে গতিশীল করতে সশস্ত্র আর্মড ইউনিট ও নিজেস্ব হাজতখানা চালু করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সশস্ত্র আর্মড ইউনিটে ২০ জন সদস্যের থাকবে। বিষটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কমিশনকে আধুনিক সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতেই আগামী মাসের শুরুতে এ সশস্ত্র ইউনিট চালু হতে পারে। এছাড়াও নিজেস্ব হাজতখানাও দ্রত সময়ের মধ্যে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই নয়া সেবা দুটি চালু হলে সন্দেহভাজন অপরাধীকে যথোপযুক্ত জিজ্ঞাসাবাদ ও সঠিক আলামত সংগ্রহ করা যাবে। ইতেমধ্যে কমিশনের এসব গঠনের নীতিমালার কাজ শেষ দিকে। এনিয়ে একাধিকার সভা করেছে কমিশন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আসামি ধরতে কমিশনের কর্মকর্তারা সব সময় পুলিশের সাহায্য নিয়ে থাকেন। অনেক সময় সমন্বয়হীনতার অভাবে অভিযান ব্যর্থ হয়। এটা চালু হলে গ্রেফতার সফল হবে। হাজতখানা না থাকায় আসামিদের কর্মকর্তাদের কক্ষে বসেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়। যা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি। এসব বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, দুদকের আসামি ধরতে দিনে কিংবা রাতে সব সময়েই অভিযান চালাতে হয়। এজন্য কমিশনের কর্মকর্তারা সব সময় পুলিশের সাহায্য নিয়ে থাকেন। অনেক সময় এ কাজে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে নানা জটিলতার কারণে গ্রেফতার অভিযান ব্যর্থ হয়।
অন্যদিকে গ্রেফতার করা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুদকে আনা হয়। কিন্তু দুদকের নিজস্ব হাজতখানা না থাকায় ওই আসামিদের কর্মকর্তাদের কক্ষে বসেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়। যা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি। এসব বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশেষ করে দুদক কর্মীদের কোন সশন্ত্র বাহেনী নেই। শক্তিশালী অস্ত্র সহায়তার অভাবে দদুক এর কর্মীগণ যথাযথভাবে আলামত সংগ্রগ ও অভিযুক্ত অপরাধীকে গ্রেফতারের ব্যর্থ হন। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আসামী বন্ধী রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগে নেই। নিজেস্ব হাজত চালু হলে এই সমস্যার সমাধান হবে একই সঙ্গে আরো কার্যকর হবে দুদক। আর দূনীতি বিচারাধীন মামলাগুলো পরিচালনা করা দুদকের মূল কাজ। কিন্তু অপর্যাপ্ত লজিস্টিকস এর কারণে বিচার ব্যবস্থাকে সহযোগিতা করতে পারছে না। বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের দায়িত্ব নেয়ার পর দুর্নীতি মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণ চিহ্নিত করা হয়। বিচারাধীন মামলার কারণ বিশ্লেষণ করে, দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি ও কার্যকর অনুসন্ধান ও তদন্ত বিচার ব্যবস্থার কথা আসে। এসব সমস্যার সমাধানে পর ৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়। সেখানে তৃতীয় ও চর্তুথ অধ্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি ও কার্যকর অনুসন্ধান ও তদন্ত বিচার ব্যবস্থা শিরোনামে একটি সশন্ত্র ইউনিট ও হাজত খানা গঠনের উদ্যোগ নেয় দুদক। এছাড়াও দুদককে আরও কার্যকর, গতিশীল, স্বাধীন এবং পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাও চিহ্নিত করা হয়।
এর আগে ২০১২ সালে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দুদকের গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বাজেটসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও পরবর্তীতে বদিউজ্জামান কমিশন ওই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সশস্ত্র আর্মড ইউনিট ও হাজতখানা : গ্রেফতার অভিযান জোরদার ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আসামি রাখতে হাজতখানা এবং সশস্ত্র আর্মড ইউনিট চালু করছে। গত ১৬ আগস্ট দুদকের এক বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি মূল্যায়ন সভায়ও বিষয়টি আলোচনা হয় বলে। এতে কমিশনের নিজস্ব হাজতখানা পরিচালনা এবং আর্মড ইউনিট গঠনের নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজের শতকরা ৯০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, যদিও জরুরি প্রয়োজন মিটাতে কমিশনে ২০ সদস্যের পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট আনার প্রক্রিয়া রয়েছে। এর পাশাপাশি আধুনিক সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে শক্তিশালী সশস্ত্র ইউনিট যুক্ত করার কাজ এগিয়ে চলছে। এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দুদকে স্থায়ীভাবে সশস্ত্র ইউনিট যোগ করতে এরই মধ্যে প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সশস্ত্র ইউনিট গঠন ও নিজস্ব হাজতখানা তৈরির অনুমোদন পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অপরাধীর অবস্থান শনাক্তকরণে মোবাইল ট্র্যাকিং মেশিন সংগ্রহে দুদক চেয়ারম্যান গত বছরের শেষের দিকে চিঠি দেন। স্বাধীন কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজকে অধিক গতিশীল এবং পুলিশের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভশীলনতা হ্রাস করতেই দুদক থেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়।
সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি এক সভায় কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি মূল্যায়ন সভায় কমিশনের ৬টি অনুবিভাগের মহাপরিচালকগণ বিগত ছয় মাসে তাদের বাস্তবায়িত কার্যক্রম মনিটরিং টিমের সভাপতিকে অবহিত করেন। সভায় দুদক মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ ভূইয়া মনিটরিং কমিটিকে জানান, বিগত ছয় মাসে এই অনুবিভাগ ৬০৩টি অভিযোগের অনুসন্ধান এবং ৪৭৪টি মামলার তদন্ত সম্পন্ন করেছে। বিগত ছয় মাসে এই অনুবিভাগ ১৬৬টি অভিযোগের অনুসন্ধান এবং ৫৩টি মামলার তদন্ত সম্পন্ন করেছে। এতে কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, কমিশন অনুমোদিত এক বছর মেয়াদি কর্মকৌশল বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।
এ বিষযে জানতে চাইলে দুদক উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য ইনকিলাবকে বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সশস্ত্র আর্মড ইউনিটে ২০ জন সদস্যের থাকবে। বিষটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী মাসের শুরুতে চালু হতে পারে। আর হাজতখানাও দ্রত সময়ের মধ্যে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এই দুটি সেবা চালু হলে দুদক আরো কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এছাড়াও দুদক প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। গ্রেফতার অভিযান এবং জিজ্ঞানাবাদ করতে সহায়ক হবে। তিনি আরো বলেন, গত বৃহস্পতিবার এসব কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি মূল্যায়ন সভায়ও এ বিষয়টি আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।



 

Show all comments
  • শহীদুল ইসলাম ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ৭:৫৬ পিএম says : 0
    ভাল সিন্দ্বান্ত তবে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে । সরকারি দল কিংবা মন্ত্রী,সাংসদের কোন তদবীর সুপারিস আমলে নেওয়া যাবেনা। অপরাধি যত বড় মাপের হোক না কেন বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ফি-আমানিল্লাহ ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ