বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আবুল কাশেম চৌগাছা (যশোর) থেকে : যশোরের চৌগাছায় ৫০ শয্যা মডেল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চিকিৎসক সংকটে এখন নিজেই রোগী হয়ে পড়েছে, জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা জনবল কাঠামো অনুযায়ী এখানে ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎকসহ ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১১ জন। অ্যানেসথেসিয়া, গাইনি, কার্ডিও, শিশু, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন, মেডিসিন, সার্জারি, অর্থপেডিক্স ও বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তার এখানে নেই। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে কর্মরত চিকিৎসকরা বেশির ভাগই সরকারদলীয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রভাবশালী সক্রিয় নেতা ও সদস্য হওয়ায় তারা সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে কর্মস্থলে অবস্থান করেন না। তারা মূলত যশোরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে প্যাকটিস করেন। রোগীরা তাদেরকে খোজ করলে অফিস থেকে বলা হয় সিভিল সার্জন অফিসে কাজে আছেন। বর্তমান এই হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় মডেল কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নেই। নেই সেবার মান ধরে রাখার আন্তরিক চেষ্টা। জরুরী প্রসূতী সেবা (ই.ও.সি) কার্যক্রমের অবস্থা আরও নাজুক।
ইওসি বিভাগের ডা. সারমিন নাহার পলি, ডা. নার্গিছ আক্তার ও ডা. নুজহাত তাসনীম স্টেশনে থাকেন না। ফলে জরুরী প্রসূতী সেবা (ই.ও.সি) কার্যক্রম যেখানে ২৪ ঘন্টা চলার কথা, সেখানে চলে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। বেশির ভাগ সময় জরুরী প্রসূতী সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ঐ সময় জরুরী প্রসূতী সেবার জন্য কোন রোগী আসলে চিকিৎসক এবং নার্সগণ তাকে স্থানীয় ক্লিনিকে রেফার্ড করে থাকেন। রেফার্ডের সুবাদে চিকিৎসক ও নার্সরা রেফারাল ফি হিসাবে নগদ নারায়ন পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে এই হাসপাতালে পূর্বের মত গুণগত ও মানসম্পন্ন সেবার অভাবে দিন দিন রোগী ভর্তির হার কমে আসছে। সাথে সাথে দরিদ্র রোগীদের এখানে সঠিক চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার কারনে এবং চিকিৎসকগন দ্বায়িত্ব এড়ানোর জন্য অহেতুক অপ্রয়োজনীয় কারনে দরিদ্র রোগীকে যশোরে রেফার্ড করে থাকেন। ফলে দরিদ্র মানুষ আর্থিক অনাটনের জন্য চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। সরকার চিকিৎসা সেবা জনগনের দোর গোড়ায় পৌঁছিয়ে দিতে উন্নত মানের একটি আল্ট্রাসোনো গ্রাফিমেশিন মডেল হাসপাতালে প্রদান করলেও সোনলোজিস্ট না থাকায় নষ্ট হতে বসেছে ৭/৮ লাখ টাকা মূল্যের এ মেশিনটি।
একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স গাড়ী সেটিও তেলের ভর্তুকির টাকা বকেয়া থাকায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। অপরদিকে ১১ জন গুরুত্ব পূর্ণ ডাক্তারের পদ খালি রয়েছে দীর্ঘ দিন। ফলে উপজেলার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলি চিকিৎসকের অভাবে অবহেলিত। মাসের পর মাস এ ভাবে চিকিৎসক খালি থাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। তাই যশোর জেলায় চৌগাছা উপজেলার মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রমের ফলাফল সবচেয়ে খারাপ। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সুপারভিশন না করেই টি.এ. বিল নিয়মিত উত্তোলন করার অভিযোগ ও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সূত্রে প্রকাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৮ সালের ২০ জুন ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমান চিকিৎসক ও জনবল সংকট এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে পূর্ণাঙ্গভাবে ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। কয়েকজন চিকিৎসক দিয়ে জোড়াতালীর মাধ্যমে চালানো হচ্ছে ৫০ শয্যা মডেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সেবা কার্যক্রম।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে ৪ মাসের শিশু নাইমের মা পলি বেগম, ২ মাসের শিশু নুসরাতজাহানের মা রজিনা বেগম, অত্যান্ত অসুস্থ রাশিদা ও ৬৫ বছরের বৃদ্ধা সুকজান বেগম অভিযোগ করে বলেন টিকিট কেটে দাড়িয়ে আছি প্রায় ২ ঘন্টা ডাক্তারের দেখা মেলিনি এখন পর্যন্ত। চৌগাছা বাজারের বিশিষ্ট একজন ব্যাবসায়ী জানান আমার মেয়েকে জরুরী প্রসূতী বিভাগে ভর্তি করেছি দু’দিন কোন ডাক্তারের দেখা মেলেনী। ডাক্তার আসবে কিনা জানতে চাইলে কর্তব্য রত সেবিকা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকে। বাধ্য হয়ে রোগীকে হাসপাতাল থেকে অন্যত্রে নিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে ২১ জন সাধারণ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৭ জন। ফলে মডেলের সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এছাড়া যে সমস্ত চিকিৎসক এখানে আছেন তারাও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া ৯ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ১ জন হিসাব রক্ষক ও ১ জন ষ্টোর কিপারসহ ৩৬ টি পদে কোন লোক নেই। এ ছাড়া ৪র্থ শ্রেণীর ৭টি পদ দীর্ঘ দিন শুন্য পড়ে আছে। ফলে অল্প জনশক্তি নিয়ে চলছে বৃহত্তর এ উপজেলার চিকিৎসা কার্যক্রম। জনসংখ্যার তুলনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জনবল কাঠামো অত্যন্ত নগন্য। তাই সেবার মান ধরে রাখতে নিজউদ্যোগে স্থানীয় পৌর মেয়র, ইউনিয়য়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গরা কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ দিয়েছেন। চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বাস্থ্য সেবার একটি মডেল। এই মডেলকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহা-পরিচালক ড.মার্গারেট চ্যান ২০১০ সালের ৮ মার্চ এই হাসপাতাল পরিদর্শন কালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আজ সেই মডেলের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনাসহ সেবার মান ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা দরুণ ভাবে বাঁধা গ্রহস্থ হচ্ছে। আমরা জনবল চেয়ে বারবার আবেদন করেছি। আপনি এসে নিজে কানে শুনলেন আমি মোবাইল ফোনে কর্তৃপক্ষের নিকট ডাক্তার ও জনবল নিয়ে আলাপ করলাম। সংশ্লিষ্ট কর্র্র্তৃপক্ষের নিকট এলাকাবাসীর দাবী দীর্ঘ দিনের মডেল কার্যক্রম ধরে রাখতে ও দরীদ্র জনগোষ্টীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে দক্ষ জনবল পদায়ন করা হোক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।