Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরামর্শ

আমন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন সাংবাদিকদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত
সংসদ নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরির পাশাপাশি জনগণের আস্থা অর্জন করতে নির্বাচন কমিশনকে তাগিদ দিয়েছেন টেলিভিশন ও রেডিওর সিনিয়র সাংবাদিকরা। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং সেনাবাহিনী মোতায়ন নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ২৬ জন প্রতিনিধি এই আলোচনায় অংশ নেন। এদিকে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিকরা। তারা বলেছেন, অনেক পত্রিকার সম্পাদককে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটি নিয়ে ইসি পক্ষপাতিত্ব করছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবের উপস্থিতিতে আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বও ছিল। সিনিয়র সাংবাদিকদের অধিকাংশই বলেছেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশনকেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। কে ভোটে অংশ নেবে বা না নেবে- তা দলগুলোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, তবে সম্ভব হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি একাধিকবার মত বিনিময় করতে পারে বলে মত দিয়েছে অনেক সাংবাদিকরা। আলোচনায় তারা বলেন, যেসব দল ভোটে থাকবে, তাদেরসহ সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে ইসিকে। পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে রাখতে হবে মাঠে। আবার আগাম সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে ‘বিতর্কে’ জড়ানো থেকেও ইসিকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে তারা। সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান এবং আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইনি প্রয়োগ ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখলে সবার প্রশংসা পাবে কমিশন। সেনাবাহিনীকে জাতীয় গৌরব হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ভোটের মাঠে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশন যদি প্রয়োজন মনে করে, তাহলে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন করতে পারে। তিনি বলেন, সেনা মোতায়েন নিয়ে আগাম বিতর্ক তৈরির পেছনে বিশেষ মহলের মতলব রয়েছে। সেনা মোতায়েন নিয়ে আগাম এত তর্ক কেন? ভোটের দিন কি কিছু হবে? তাদেরকে বিতর্কিত করার জন্যে কোনো মতলব রয়েছে কি না এটা একটি রাজনৈতিক মতলব, সুকৌশলে এসব করা হচ্ছে।
একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ভোটে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনীর ব্যবহার রাজনৈতিক কারণে হলে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিরপেক্ষভাবে আইন ও সংবিধানের ভেতরে থেকে কাজ করতে হবে কমিশনকে। সব দলকে নিয়ে আলোচনা, ঐক্যমত বা সংলাপের দরকার নেই। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে আপনাদের। কে এল, না এল- তা ইসির দেখার বিষয় নয়। ভোটের দিন ইসির নিজস্ব ওয়েবসাইটে দ্রæত ও সঠিক ফলাফল প্রচার এবং দেশের ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন ।
মাছরাঙ্গা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, ভোটে যারা আসবে, তাদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে টানাহেঁচড়া না করাই ভালো। সব দলের অংশগ্রহণের জন্য পরিবেশ তৈরি রাখতে হবে, তবে কে ভোটে এল- না এলো, তা রাজনৈতিক বিষয়। ডিবিসির সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, পর্যবেক্ষকদের মধ্যে রাজনীতি রয়েছে, এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পোলিং এজেন্ট যেন দলীয় না হয়- সে বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে দ্রæততম সময়ে কেন্দ্রভিত্তিক ফল কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনী ব্যয় বাস্তবসম্মত ও ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোট দেওয়ার বিধান চালুর পরামর্শ দেন। নিউজ টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হাসনাইন খুরশিদ বলেন, ইসির কাছে পর্যাপ্ত ক্ষমতা রয়েছে, তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দলগুলোর আস্থা চূড়ান্তভাবে অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে, তবে জনগণের আস্থা অর্জনে সব পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাভিশনের বার্তা প্রধান মোস্তফা ফিরোজ বলেন, প্রধান দুই দলের সঙ্গে সিরিজ সংলাপের আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, ভোটের মাঠে সেনাবাহিনী বা এলিট ফোর্স দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হলে বাহিনীরও দরকার পড়বে না। সিরিজ সংলাপ, ৩০০ আসনে একাধিক দিনে ভোট ও ধর্মীয় দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল করে গঠনতন্ত্র সংশোধন ও নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে।
গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের দ্বিতীয় দিনে অনলাইন, টেলিভিশন ও রেডিওর ৩৪ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। নির্বাচন কমিশনের সংলাপে আমন্ত্রণ পেলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যমের প্রধান সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা আলোচনায় আসেননি।
যারা উপস্থিত ছিলেন না, তারা হলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক আলমগীর হোসেন, এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ মুন্নী সাহা, গাজী টিভির হেড অব নিউজ মেজবাহ আহমেদ, চ্যানেল নাইনের হেড অব নিউজ আমিনুর রশীদ, বৈশাখী টিভির হেড অব নিউজ অশোক চৌধুরী, এবিসি রেডিওর বার্তা প্রধান সানাউল্লাহ আহমেদ এবং বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ।
সংলাপের শুরুতেই একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু নির্বাচন কমিশনের এই আমন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। গতকাল সম্পাদকদের সঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমাদের এখানে বাসসের প্রধান সম্পাদকসহ অনেকে সিনিয়র সাংবাদিক রয়েছেন। তাহলে তারা কি সিনিয়র সাংবাদিক না? এ সব বিষয়ে কমিশনের আরও মনোযাগী হওয়া প্রয়োজন ছিল।



 

Show all comments
  • ফোরকান ১৮ আগস্ট, ২০১৭, ৩:০৫ এএম says : 0
    আগামী নির্বাচনের জন্য সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা খুব জরুরী।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ