Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীর পানিবদ্ধতার দায় নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি

| প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বৃষ্টি হলেই ঢাকায় পানিবদ্ধতার ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি ঢাকার রাস্তায় পানি জমে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় নৌকা চলার ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, কারওয়ান বাজার, মিরপুর, কালশী, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নতুন বাজার ও খিলক্ষেত এলাকা অন্যতম। কিন্তু এমন পানিবদ্ধতার দায় এককভাবে নিতে আগ্রহী নয় কোন সংস্থাই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব জুরাইন থেকে ডিএনডি বাঁধ পর্যন্ত এলাকায় বছর জুড়েই পানি জমে থাকে। এই এলাকাটি অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক নিচু হওয়ায় আশপাশের বাসা বাড়ির স্যুয়ারেজের পানি জমে পানিবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এছাড়া বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হলে মতিঝিল, শান্তিনগর, পুরান ঢাকা ও নাজিম উদ্দিন রোডে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এদিকে, রাজধানীর প্রায় ৪৩% বর্জ্য সংগৃহীত হয় না। যার উল্লেখযোগ্য অংশ জলাভূমি, খাল ও নদীতে জমা হয়। ড্রেনগুলো ময়লা দিয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশিত হতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে নালার মুখই আবর্জনায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমাদের দুই নগরপিতা বর্জ্য নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন, যা পক্ষান্তরে পানিবদ্ধতা নিরসনে সহায়তা করবে এবং সার্বিকভাবে নগরীর পরিবেশ উন্নত করবে। বিশেষত ঢাকায় উদ্যান বা খোলা জায়গা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। যা পানিবদ্ধতা তৈরির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, পানি নিষ্কাশনের দুটি পথ রয়েছে। প্রথমত ভূ-গর্ভে পানি শোষণ করে নেওয়া এবং অন্যটি খাল বিল ও ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে যাওয়া। রাজধানী ঢাকায় এই দুটি পথের একটিও কার্যকর নেই। যে কারণে পানিবদ্ধতা বাড়ছে। এই দুই ধরনের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কার এটা পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন। সিটি কর্পোরেশন বলছে পানিবদ্ধতা দূর করার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। ঢাকা ওয়াসা বলছে উল্টো।
স¤প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে রাজধানীর পানিবদ্ধতার জন্য ঢাকা ওয়াসাই দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসা হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। অথচ তারা লাখ টাকার নর্দমা মেরামত করার ক্ষেত্রেও অর্থ সঙ্কটের অজুহাত তুলে দায়িত্ব এড়িয়ে যায়।
এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ ঢাকার পানিবদ্ধতা নিয়ে বলেন, আমাদের ড্রেনেজ ফ্যাসিলিটিজটা আগেই ব্লক করে ফেলেছি। পানি প্রবাহে কোন ট্যানেল নেই। প্রতিটি রাস্তায় ক্রিকেট মাঠের মতো হালকা ¯েøাথ থাকার কথা থাকলেও মেইনটেইনেন্সের অভাবে এমন ¯েøাথ নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্যে বৃষ্টির পানি ড্রেন পর্যন্ত যেতেই পারে না। অপরদিকে পানি ড্রেনে ঢোকার পথগুলো পলিথিন ও বর্জ্য দিয়ে বন্ধ থাকে। এই কারণেও পানিবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় পানিবদ্ধতার জন্য বর্জ্য এককভাবে দায়ী নয়। এখানে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। এককভাবে আমাদের দায়ী করলেও হবে না। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। আসলে শহর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সবগুলো উইং এর মধ্যে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ঢাকার সবগুলো নদী ও ট্যানেলগুলো স্থির হয়ে গেছে, ফ্লো নেই। ঢাকার চারিদিকে ট্যানেল ও নদীগুলো গতিশীল করতে না পারলে পানিবদ্ধতা সমস্যার কোন সমাধান নেই। তবে ওয়াসাকে আরো বেশি কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। এই বিষয়ে কতৃপক্ষ সক্রিয় হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বুয়েটের শিক্ষক ও নগর গবেষক ড. দেলোওয়ার হোসাইন বলেন, রাজধানীর ধোলাইখাল থেকে শুরু করে পরিবাগের খালসহ অনেক খালই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বৃষ্টির পানি যাওয়ার পথ তো নেই। ফকিরাপুলে একটি কালভার্ড ড্রেন করা হয়েছিলো, পরবর্তীতে তা ভর্তি করে ফেলা হয়।
তিনি বলেন, আগে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলো ওয়াসা ও পাবলিক হেল্থ।এখন ৩৫ শতাংশের মতো সিটি কর্পোরেশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশনের আরো বেশি কাজ করা উচিত ছিলো। তারা যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আগামী দুই এক বছরের মধ্যে শেষ করতে পারলে ঢাকায় পানিবদ্ধতা খানিকটা দূর হবে।
পানিবদ্ধতা নিরসনে মাস্টার প্লান করে সিটি কর্পোরেশনকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে এই নগর গবেষক বলেন, ঢাকা শহরের চারদিকে নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে অন্যদিকে ড্রেন বা ট্যানেলগুলো পুনরুদ্ধার করতে না পারলে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সহজেই বোঝা যায়, এতো বৃষ্টির পানি যাবে কোথায়। ঢাকা শহরের উপরিভাগে ক্লে-লেয়ার থাকায় এই পানি নিচের দিকে যেতে পারে না। ফলে বেশির ভাগ পানি ওভারফ্লো হচ্ছে।
ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন স¤প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, পানিবদ্ধতা নিরসনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১০ কিলোমিটার নর্দমা পরিষ্কার এবং ২৩৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৪০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ জন্য ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক জেট অ্যান্ড সাকার মেশিনও কেনা হয়েছে।
নগর গবেষক ও ভুক্তভোগী জনসাধারণের প্রশ্ন, এমন পানিবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনে কতদিনে গ্রহণ করা হবে মাস্টার প্লান? আদৌও দায়িত্ব নেবে ঢাকা ওয়াসা নাকি দুই নগর পিতা? অনেকে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা শহরকে বসবাস উপযোগী করে গড়তে প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টা ও দিক নির্দেশনা। নইলে এমন কাঁদা ছোড়াছুড়ির অবসান হবে না কখনো, হবে না রাজধানী শহর ঢাকার পানিদ্ধতা নিরসনও। ###



 

Show all comments
  • মনির ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১:০৭ পিএম says : 0
    কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • ওবায়েদ ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১:০৮ পিএম says : 0
    আরেক জনকে দোষ দেয়ার আগে দেখুন নিজের কাজগুলো ঠিকমত করেছেন কিনা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানিবদ্ধতা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ