Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তীর্ণ না হয়েও পদোন্নতি

২৬৯ জন কর্মকর্তার আবেদনপত্রেই ভুল

| প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : প্রশাসনে সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষায় একাধিকবার পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে না পারা বিসিএস ক্যাডারভুক্ত অনেক কর্মকর্তাকে দলীয় বিশেষ বিবেচনায়ও পাশ করে দেয়া হয়েছে এ প্রশাসনে কর্মকর্তাদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৮৭৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে ২৬৯ জন কর্মকর্তার আবেদনপত্রেই ভুল থাকায় পরও বিশেষ বিবেচনায় পাস করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
প্রশাসনের সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষা বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের চাকরি জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এতে উত্তীর্ণ না হলে সরকারের উপসচিব হওয়া যায় না এবং বেতনভাতাও বৃদ্ধি হয় না। এরপরও অধিকাংশ কর্মকর্তা একবারে এ পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি। সর্বশেষ চলতি মাসে এ পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী ২ হাজার ৮৭৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে ২৬৯ জন কর্মকর্তার আবেদনপত্রেই ভুল। তবে দীর্ঘদিন এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারা অনেক কর্মকর্তাকে বিশেষ বিবেচনায়ও পাশ করে দেয়ারও নজির রয়েছে।
সিভিল সার্ভিস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে চলতি মাসে। এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য বিভিন্ন ক্যাডার থেকে ২ হাজার ৮৭৭ জন কর্মকর্তা আবেদন করেন। এরমধ্যে ২৬৯ জন কর্মকর্তার আবেদনেই বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। ফলে গত ৩১ জুলাই ২০১৭ সালের মধ্যে এসব ভুল সংশোধনের নির্দেশ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এরআগে ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করেন ২ হাজার ৯৯৬ জন কর্মকর্তা। এরমধ্যে যোগ্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯২২ জন। প্রথম পত্রে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৯৭ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৬৩২ জন। উত্তীর্ণ হয় ১৩৭০ জন। এতে অনুপস্থিতি ও অনুত্তীর্ণ কর্মকর্তার সংখ্যা ৪৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। ফলাফল বিশ্লেষন করে দেখা যায়, বিগত বছরে অনুষ্ঠিত অন্যান্য পত্রের পরীক্ষাতেও অনুপস্থিতি ও অনুত্তীর্ণ হার প্রায় একইরকম।
এবিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের পরিচালক (সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষা) সেলিমা বেগম ইনকিলাবকে বলেন, সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষা প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও আগষ্ট মাসে অনুষ্ঠিত হয়। বছরে অনুষ্ঠিত দুটি পরীক্ষাতেই একজন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করতে পারেন। তিনি বলেন, এ পরীক্ষায় অংশ নিতে ২৬৯ জন কর্মকর্তার আবেদনপত্রেই বিভিন্ন ধরণের ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। বিভিন্ন শর্তে এসব আবেদন সংশোধনের জন্য সময় দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভুল সংশোধন না করলে আবেদনপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। তিনি বলেন, দলীয় বা বিশেষ বিবেচনায় কাউকে পাস করা হয় না। প্রতিটি পরীক্ষাতেই কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ আবেদন করার পরও অংশ নেন না। অনেকে অনুত্তীর্ণ হন। অনেকে কয়েক বছর ধরে একটি করে বিষয় পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে এ পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী ১৬ কর্মকর্তার আবেদনপত্র সঙ্গে স্থায়ীকরণের আদেশ না থাকায় ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া আবেদনপত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ও সীল নেই ৪৩ জনের, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সীল আছে স্বাক্ষর নেই ২ জনের, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর আছে সীল নেই ২৮ জনের, প্রার্থী ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ও সীল নেই ২ জনের, প্রার্থী ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর আছে সীল নেই ৩ জনের, প্রার্থীর স্বাক্ষর আছে, সীল নেই ৩২ জনের, মূল আবেদপত্রের ফটোকপি নেই ১ জনের, স্থায়ী করণের আদেশ নিজের দ্বারা সত্যায়িত ১ জনের, বিলম্বে জমা দেয় ১৪১ জন। উল্লেখিত কারণে ২৬৯ কর্মকর্তার আবেদনপত্রই ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংশ্লিষ্টরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, এ পরীক্ষার জন্য ৩০০ নম্বরের ৩টি বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে প্রথম পত্র- বাংলাদেশ ও চলতি বিষয়াবলি, দ্বিতীয় পত্র- সকল সরকারি অফিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন, বিধি ও পদ্ধতী, তৃতীয় পত্র- সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কাজকর্ম সম্পর্কিত বিষয়াদি। একজন কর্মকর্তা এক সঙ্গে তিনটি অথবা কম সংখ্যক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য চাকরির বয়স কমপক্ষে চার বছর ও স্থায়ী হতে হবে। যদি কোনো কর্মকর্তা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারে তাহলে চাকরি বয়স ১৪ বছর বা নিজের বয়স ৫০ বছর হলে সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সুযোগ দেয় সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. সাহেদ আলী ইনকিলাবকে বলেন, সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষায় পাশ করার পর কোনো কর্মকর্তা তার সিনিয়র স্কেল পেয়ে থাকেন। এ পরীক্ষায় পাশ করতে না পারলে সিনিয়র স্কেল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা নবম গ্রেডে চাকরি যোগদান করেন। সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষায় পাশ করার পর ৬ষ্ঠ গ্রেডে বেতন পান। সাহেদ আলী বলেন, পদোন্নতির জন্য এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ খুবই জরুরি। কোন কর্মকর্তা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে সরকারের উপসচিব হতে পারবে না। তবে একজন ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তা এ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া খুবই দুঃখজন। আবেদনপত্রই ভুল করা খামখেয়ালিপনা ছাড়া কিছুই নয় বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন ২ হাজার ৯৯৬ জন। এরমধ্যে যোগ্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯২২ জন। প্রথম পত্রে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৯৭ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৬৩২ জন। উত্তীর্ণ হয় ১৩৭০ জন। এতে অনুপস্থিতি ও অনুত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা ৪৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। দ্বিতীয় পত্রে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭০৮ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৭৩৯ জন। উত্তীর্ণ হয় ১ হাজার ৩৬০ জন। তৃতীয় পত্রে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৯৫ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৫৫৭ জন। উত্তীর্ণ হয় ১ হাজার ২৯০ জন।
এরআগে ২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন ২ হাজার ৭০০ জন। এরমধ্যে যোগ্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৪৭ জন। প্রথম পত্রে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৯ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ৮৪৭ জন। উত্তীর্ণ হয় ৭২১ জন। দ্বিতীয় পত্রে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৪৫ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ২৬ জন। উত্তীর্ণ হয় ৮২৪ জন। তৃতীয় পত্রে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৩৩ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ৭৯৭ জন। উত্তীর্ণ হয় ৭০২ জন। ২০১৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে ৭৩ জন ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাকে সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষায় বিশেষ বিবেচনায় যোগ্য ঘোষণা করেন পিএসসি। এরআগেও একাধিকবার বিশেষ বিবেচনায় অনেক কর্মকর্তা উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। অনেক কর্মকর্তা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় চাকরি বয়স ১৪ বছর হওয়ার পর সরকার তাদের সেচ্ছায় উত্তীর্ণ ঘোষণা করেন।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, এখন নতুন চাকরিতে ঢুকেই একজন বিসিএস অফিসার সেই বেতন পাচ্ছেন। স্বচ্ছল জীবন-যাপন করতে পারছেন। কাজেই সাধারণ মানুষকে সঠিক সেবা দেয়ার স্বার্থে কর্মকর্তাদের আরো অনেক পড়াশুনা করা উচিত। দলীয় বিশেষ বিবেচনায় সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া খুবই দুঃখজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদোন্নতি

৪ জানুয়ারি, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ