Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চুরি হচ্ছে ইয়ার্ডের মালামাল নিরাপত্তাহীনতায় যাত্রীরা

দর্শনা রেলওয়ে স্টেশন ও রেল বন্দরের পাশে অবৈধ স্থাপনা

প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশন ও রেল বন্দরের আশপাশে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা। অব্যাহতভাবে চুরি হচ্ছে ইয়ার্ডে রাখা মালামাল। স্টেশন এলাকায় দিন রাত নানারকম মাদকদব্য বেচাকেনা ও সেবনসহ অবাধে সাধারণ মাুনষের চলাফেরার কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে রেলবন্দর। নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে রেল ইয়ার্ডে রাখা রেলের কোটি টাকার সম্পদসহ ঢাকা-কলকাতা চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের দেশি-বিদেশী যাত্রীরা। জানা গেছে, নানা অনিয়ম, অব্যস্থাপনা ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনৈতিক কর্মকা-ের ফাঁদে পড়ে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশনসহ রেল বন্দরের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ভেঙে পড়েছে। হারাতে বসেছে এর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। এছাড়াও নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে রেল বন্দর, রেল স্টেশন ও বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। বর্তমানে রেলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কমে গিয়ে রাজস্ব আয় পৌঁছেছে সর্বনি¤œ পর্যায়ে। রেল ইয়ার্ডে রাখা ওয়াগন ভেঙে আমদানিকৃত লাখ লাখ টাকার মালামাল লুটের কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসানগ্রস্ত হওয়ায় এ রুট দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে অনেকে। নিরাপত্তার অভাবে চুরি হচ্ছে রেল ইয়ার্ডে রাখা রেলের লোহা ও কাঠের স্লিপার। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ধরা পড়েছে। এসমস্ত চুরির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রেলের নিরাপত্তা বিভাগ ও রেলের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি রেল ইয়ার্ড থেকে রেলের কাঠের স্লিপার চুরি করে নিয়ে পাশের একটি স্ মিলে চেরাই করার সময় দর্শনা বিজিবি’র হাতে স্লিপারসহ রেলের নিরাপত্তাবাহিনীর দু’সদস্য ধরা পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছে, এভাবে ইতোমধ্যেই লাখ লাখ টাকার স্লিপার চুরি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার স্থানীয়সহ জাতীয় দৈনিকে খবর ছাপা হওয়ার পরও তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ফলে অব্যাহত রয়েছে চুরির ঘটনা। ইতিপূর্বে রেলের ইয়ার্ড থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওয়াগন ভেঙে ট্রাক ভিড়িয়ে মালামাল লুটের কথাও স্থানীয় অনেকেরই জানা। তাই চুরির কারণেই অনেকে এ বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। ইয়ার্ডে চুরি ঠেকাতে রেল বিভাগ ইয়ার্ডের উভয় দিকে নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এখন পর্যন্ত স্টেশনের উত্তর পাশে মাত্র একদিকে প্রাচীর নির্মিত হলেও অপর দিকে রয়েছে খোলা। এছাড়া উত্তর পাশের ইয়ার্ড রয়েছে সম্পূর্ণ খোলা ও অরক্ষিত। রেল ইয়ার্ডে ট্রাক-বাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পার্কিং করা ও বন্দর এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলের উপর কোন বিধিনিষেধ না থাকায় রাতদিন সাধারণ মানুষের অবাধ বিচরণই চুরির অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন অনেকে। স্টেশনের উত্তর পাশের খোলা দিকে রেল লাইনের ধার ঘেঁষে রয়েছে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা। আর এসব স্থাপনার আড়ালে থেকে সংঘবদ্ধ চোরেরা চালায় ওয়াগন ভেঙে লুটপাট। দক্ষিণ পাশেও রয়েছে চা-পান-বিড়ির দোকানসহ অনেক অবৈধ স্থাপনা। এছাড়া পুরাতনবাজার রেলগেটসহ বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত রেল লাইনের দু’ধারে লাইনের ধার ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে বসতবাড়ি। রাতদিন এসব স্থানে চলে মাদকের আবাধ বেচাকেনা ও সেবন। এখানে বসেই ইয়ার্ডের নিরাপত্তারক্ষী ও চোরের মধ্যে হয় চুক্তিসহ টাকা-পয়সার লেনদেন। আর সুযোগ বুঝে নিরাপত্তারক্ষী ও রেলের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় স্লিপারসহ লোপাট হয় লাখ লাখ টাকার মালামাল। এছাড়া আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে কাস্টমস্ ও ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে এ রুট দিয়েই চলাচল করে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রীএক্সপ্রেস। আর এ মৈত্রী এক্সপ্রেসে পর্যটন, ব্যাবসাসহ নানা কাজে বাংলাদেশ ভারত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা যাতায়াত করে থাকেন। মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হওয়ার সময় দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনের উন্নয়নের জন্য স্টেশনের আশপাশ থেকে দোকাপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নোটিশ দিয়ে অপসারণ করে রেল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে শুধুমাত্র স্টেশনের এক পাশের প্লাটফর্মে কিছু সংস্কারের কাজ করা হয়। আর আশপাশের অবস্থা আগের মতই রয়ে যায়। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় সেসব স্থানে আবারও অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। রেল লাইনের ধার ঘেঁষে দোকানপাট থাকায় এ সমস্ত দোকানপাট বা স্থাপনায় অবস্থান করেই দুর্বৃত্ত কর্তৃক এধরনের ঘটনার আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে অভিমত অনেকের। এ রুটে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হওয়ার সময় যেখানে ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে গেদে রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেল লাইনের উভয় পার্শ্বে মজবুত করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত করেছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অংশে রয়েছে পুরা ফাঁকা। তার উপর আবার রেল লাইনের ধারে দিন দিন অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা বাড়ছেই। ফলে বর্তমানে মৈত্রী এক্সপ্রেসের নিরাপত্তা রয়েছে হুমকির মুখে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্বৃত্তদের হাতে বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাই দেশের আর কোথাও যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়টিও মাথায় রেখে রেলের বিদেশী যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে এখনই সাবধান হওয়া দরকার। সেইসাথে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ রক্ষাসহ রেলবন্দর ও রেলস্টেশনের ঐতিহ্য ফেরাতে এবং বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন সচেতনমহল। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার মীর লিয়াকত আলি বলেন, আমি শুধু ট্রেন চলাচলের বিষয়টি দেখাশোনা করে থাকি। প্লাটফর্মের বাইরের বিষয়গুলো আমার এখতিয়ার বহির্ভূত। প্লাটফর্মের বাইরে আমার কোন কর্তৃত্ব নেই। রেলের জায়গায় অবৈধ স্থাপনার ব্যাপারে বলেন, আমি এসে পর্যন্তই এগুলো দেখছি। ইয়ার্ডে রাখা রেলের স্লিপার ও মালামাল চুরির বিষয়ে বলেন, এ বিষয়গুলো পি ডব্লিউ সাহেবের। ওনার স্টাফরাই এসমস্ত দেখাশোনা ও পাহারা দেয়ার কাজ করেন। এব্যাপারে জানতে স্টেশন মাস্টারের কাছে চুয়াডাঙ্গাস্থ এস এস এ ই (ওয়ে)’র ফোন নম্বর চাইলে তিনি বলেন, এ দায়িত্বে আগে যিনি ছিলেন তিনি আবসরে চলে গেছেন। তবে বর্তমানে যিনি দায়িত্বে আছেন তার ফোন নম্বর আমার জানা নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চুরি হচ্ছে ইয়ার্ডের মালামাল নিরাপত্তাহীনতায় যাত্রীরা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ