নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইমরান মাহমুদ : টেস্ট ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি স্যার ভিভ রিচার্ডস, স্যার ডন ব্র্যাডম্যান।
নামগুলো যত বড়, কীর্তি ঠিক ততটাই মহান। সাদা পোষাকে ক্রিকেট অভিষেকের পর প্রতিটি ব্যাটসম্যানেরই স্বপ্ন লালিত হয় এই দুই গ্রেটের গৌরবময় কীর্তি ছোঁবার। তাদের মত কিংবদন্তি না হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটের একনজ তাদের কাতারেই সামিল- মুমিনুল হক।
টেস্টে টানা ১১ ম্যাচে ফিফটিতে স্যার রিচার্ডসের পাশে মুমিনুলের নাম। আর ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কা সফরের পর টেস্টে কমপক্ষে ৭০০ রান করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে স্যার ডনের পরই ব্যাটিং গড় ছিল তাঁর (৭ টেস্টে ৭৫.৫০)!
তিন বছরে অনেক চড়াই উৎরাই দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব, দেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটও। তবে একটি যায়গায় গিয়ে যেন আটকে গেছে মুমিনুলের ভাগ্যের চাকা। এক সময় যাকে ছাড়া ভাবা যেত না বাংলাদেশের টেস্ট দল, সেই মুমিনুলই ছিলেন না বাংরাদেশের শততম টেস্টে! বাংলাদেশ সেই ম্যাচ জিতেও নিল! ফেরার পথ কঠিন। আবার জায়গা পাকা করা আরও কঠিন। মুমিনুলের কাছে সেটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কণ্ঠে প্রত্যয়, জিতবেনই।
২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক মুমিনুলের। সেই টেস্টে একমাত্র ইনিংসে করেছিলেন ৫৫। পরের ছয় টেস্টে করেন তিনটি সেঞ্চুরি। পরের ১২ টেস্টে সেঞ্চুরি ছিল চারটি। কিন্তু পরের ১০ টেস্টে নেই সেঞ্চুরি। এই সময়ে ১৭ টেস্টে পঞ্চাশও ছাড়াতে পেরেছেন কেবল চারবার। ব্যাটিং গড়েও সেটির প্রভাব। ৫ টেস্ট শেষে গড় ছিল ৮৩.৪২, ১০ টেস্ট শেষে ৫৮.১২। ২০ টেস্ট শেষে সেটি হয়ে যায় ৫১.১৫। পরে সেটি নেমে আসে পঞ্চাশের নিচে। গত শ্রীলঙ্কা সফরে গল টেস্টের পর যখন জয়গা হারালেন একাদশে, গড় তখন নেমে হয়েছে ৪৬.৮৮।
তার পরও তাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল বিতর্কিত। অতীত রেকর্ড, তার সামর্থ্য এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেই দেয়। তবে ফর্মে যে ভাটার টান, সেটি অনুভব করেছেন মুমিনুলও। সেই অনুভব থেকেই তার উপলব্ধি, জায়গা আবার জয় করেই নিতে হবে। চ্যালেঞ্জটা তিনি নিচ্ছেন, জয়ের আশাতেও কমতি নেই, ‘খেলতে থাকলে একটি গ্রাফ নিয়মিত ধরে রাখা সম্ভব নয়। বিশ্বের সবার হয়। আমি না শুধু, সব বড় বড় ব্যাটসম্যানের নয়। একটা সময় গ্রাফ নিচে নামবেই। সেই সময়টা কাটিয়ে উঠতে হয়। যদি কাটিয়ে উঠে আবার ভালো খেলতে পারেন, সেটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইনশাআল্লাহ আমি কাটিয়ে উঠতে পারব।’
গলে যে টেস্টের পারফরম্যান্সে বাদ পড়লেন, সেই টেস্টে দুই ইনিংসেই দিলরুয়ান পেরেরার অফ স্পিনে এলবিডবিøউ হয়েছিলেন মুমিনুল। শোনা যায়, তার অফ স্পিন খেলার ধরনে গলদ দেখেছিলেন কোচ। এই কদিনে সেই গলদে কতটা শোধরালেন? প্রশ্ন শুনে মুমিনুল হাসলেন। এটিকে যে তিনি সমস্যাই মনে করেন না, ‘আমার কাছে মনে হয় না অফ স্পিনে সমস্যা আছে। ব্যাটসম্যান যেহেতু, অফ স্পিন, বাঁহাতি স্পিন, ডানহাতি স্পিন, সবকিছুতে আউট হতে পারেন। তার মানে এই নয় যে খুব দুর্বল। আলাদা করে কিছু করি নাই। যদি আপনি সেভাবে চিন্তা করেন, তাহলে পুরো বøাইন্ড হয়ে যাবেন ওই জায়গাটায়। আপনি যদি মনে করেন আপনি ভালো, সেভাবেই কাজ করতে হবে। নিজের কাছে বিশ্বাস, নিজের চিন্তাটাই সবচেয়ে বড়। আমি আলাদা ভাবে কাজ করিনি। হয়ত কিছু কিছু সময় যেগুলো হয়েছে, কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।’
চেষ্টাটা দেখা গেছে চট্টগ্রামের তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচেও। স্পিন যথারীতি ভালোই খেলেছেন। একাদশে জায়গাটা ফিরে পাওয়ার পথে বড় একটি পদক্ষেপও হতে পারত ওই ম্যাচ। মুমিনুল সামনে এগোলেন বটে, তবে তা যথেষ্ট হলো কিনা, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ৭৩ রানের ইনিংসটি দারুণ ছিল, কিন্তু সেঞ্চুরিতে দাবিটা হতে পারত আরও জোরালো! আক্ষেপটা শোনা গেল মুমিনুলের কণ্ঠেও, ‘আক্ষেপ তো সবসময় থাকে। একশ করে আউট হয়ে গেলে দুইশর আক্ষেপ থাকে। দুইশ করে আউট হলে হয়ত তিনশর আক্ষেপ থাকবে। একশ করতে পারিনি, অবশ্যই আক্ষেপ আছে। এসব জায়গায় আউট না হওয়া ভালো, বড় ইনিংস খেলতে পারলে নিজের জন্য ভালো, দলের জন্য ভালো। একটু আক্ষেপ আছে। পরবর্তীতে সুযোগ পেলে ব্যাপারটি কাটিয়ে ওঠা উচিত।’
৭৩ রানের ইনিংসটি একাদশে জায়গা ফিরে পাওয়ার পথে যথেষ্ট কিনা, নিশ্চিত নন মুমিনুল নিজেও। সেটি নিয়ে ভাবতেও চান না। আপাতত কাজে লাগাতে চান পরের সুযোগ, ‘ওভাবে চিন্তা করি নাই। অনুশীলন করছি। কাজ যেসব করা দরকার করছি। খেলব কি খেলব না, সেটা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। আমার হাতে নেই। আমার হাতে যা আছে, চেষ্টা করছি। আরও একটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। যেন আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, সেই চেষ্টা করছি।’
মুমিনুল অবশ্য প্রায়ই বলেন, পরিসংখ্যান-রেকর্ড নিয়ে তিনি ভাবেন না। বরং গ্রাফের ওঠা-নামাটা তিনি স্বাভাবিকভাবেই দেখেন, ‘যখন খেলবেন, একটা গ্রাফ ধরে রাখা কঠিন। বিশ্বের সব ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে এমনটা হয়, সে যত বড় ব্যাটসম্যান হোক। একটা সময় গ্রাফটা একটু নিচে নামে। এটা আপনাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। আমি মনে করি, কাটিয়ে উঠতে পারব। সেটা নিয়ে কাজও করছি। টিম ম্যানেজমেন্ট, পরিবার, কাছের মানুষ- সবাই অনুপ্রাণিত করছে।’
মুমিনুলের বড় অনুপ্রেরণা তো হতে পারেন তিনি নিজেই। চূড়ার দিকে কীভাবে এগোতে হয়, সেটি তো চূড়াচ্যুত মানুষেরই ভালো জানার কথা! চেষ্টায় সফল হবে মুমিনুল, এটি শুধু তার নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও প্রার্থনা!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।