Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনা পণ্য আমদানিতে কর বাড়ালো ভারত

| প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : চীনা দ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে এবার বাড়তি কর (অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি) ধার্য করল ভারত। প্রায় ৯৩টি দ্রব্যের ক্ষেত্রে এই কর ধার্যের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর তাতেই চটে লাল লালফৌজের দেশ।
দোকলাম বিবাদে ‘হিন্দি-চীনী ভাই ভাই’ সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। ফিরে এসেছে ৬২’র স্মৃতি। এবারও তলে তলে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে দুই দেশ। কূটনৈতিক স্তরে হমকি-হুঙ্কার দেওয়া তো নৈমিত্তিক ঘটনা। বিবাদ মেটানোর চেষ্টা যে হয়নি তা নয়। ভারতের নিরাপত্ত উপদেষ্টা অজিত ডোভাল নিজে সুরাহা খুঁজতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরেছেন একরকম খালি হাতেই। দিনে দিনে এ উত্তেজনা বেড়েছে বই কমেনি। এই পরিস্থিতিতেই দেশের খোলা বাজারে চীনা ব্যবসায় রাশ টানতে উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। এর আগে একটি বড় ব্যসায়িক চুক্তি বাতিল করেছে মোদি সরকার। এবার ৯৩টি চীনা দ্রব্যের উপর কর বা অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি ধার্য করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। যার জেরে চটে লাল চীন।
দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশ ভালই ছিল এতদিন। কিন্তু কার্যত দেখা গিয়েছে চীনা প্রতাপে ক্ষতিই স্বীকার করতে হয়েছে ভারতকে। অর্থাৎ দুই দেশে মোট যে অঙ্কের বাণিজ্য হয়েছে, তার মধ্যে বেশি লভ্যাংশ পেয়েছে চীনই। সস্তায় কিস্তিমাত হয়েছে। কিন্তু এই ক্ষতি আর স্বীকার করতে নারাজ ভারত। বিশেষত যখন সীমান্তে যুদ্ধের আঁচ। ভারতের এই সিদ্ধান্তে পালটা হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীনও। গেøাবাল টাইমস-এ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, চীন এর কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। জানিয়েছে, ভারত যদি ব্যবসায়িক যুদ্ধে নামতে চায়, তবে যেন ভবিষ্যৎ পরিণতির কথাও মাথায় রাখে। যদিও সে চোখরাঙানিতে ভারত ভয় পাচ্ছে না নয়াদিল্লি। ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেই চীনকে সবক শেখানোর পথে হাঁটছে মোদি সরকার।
চীনের হাতিয়ার ‘থ্রি ওয়ারফেয়ার স্ট্র্যাটেজি’
রণক্ষেত্রে মুখোমুখি যুদ্ধ করে নয়াদিল্লির কাছ থেকে ডোকলাম ছিনিয়ে নিতে ‘থ্রি ওয়ারফেয়ার স্ট্র্যাটেজি’কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করল লালফৌজ। একাধিক ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কিন্তু একথাই বলছেন।
কিন্তু কী এই কৌশল?
ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কৌশলের ছক তৈরি হয় ২০০৩-এ। যদিও প্রকাশ্যে সে কথা বেজিং কখনই স্বীকার করে না। লালফৌজের নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী চিনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন এই স্ট্র্যাটেজিকে ছাড়পত্র দেয়। দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্যের লক্ষ্যেই জন্ম ‘থ্রি ওয়ারফেয়ার স্ট্র্যাটেজি’র বা তিন রণকৌশল নীতির। এর মধ্যে প্রথমটি হল ‘মিডিয়া যুদ্ধ’। প্রতিপক্ষকে নিশানা করে চীনা সংবাদমাধ্যমে একের পর এক প্ররোচনামূলক খবর প্রকাশ করে বিপক্ষকে চাপে রাখার ছক করা হয়েছে। ভারত যেটা বিলক্ষণ টের পাচ্ছে। চীনা সংবাদমাধ্যমগুলি প্রায়ই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুঙ্কার ছাড়ছে। চীনা সংবাদমাধ্যম দেশের শাসক কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণাধীন। দলীয় মুখপত্র হিসাবে কাজ করে গেøাবাল টাইমস, সিনহুয়া নিউজ।
দ্বিতীয় কৌশলটি হল ‘মানসিক যুদ্ধ’। এই কৌশলের জন্য নিয়োগ করা হয় চীনা বিদেশমন্ত্রক, সেনাকর্তাদের। তাঁরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মৌখিক তোপ দেগে আস্ফালন দেখান। বারবার দেশের সামরিক শক্তির বড়াই করেন। সেনাবহরের খতিয়ান দেন। লালফৌজের ‘থ্রি ওয়ারফেয়ার স্ট্র্যাটেজি’র তৃতীয় কৌশলটি হল আইনি লড়াই। ২০১৬-য় এই ছকেই আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষিণ চীন সাগরের দখল পেতে চেয়েছিল বেজিং। কিন্তু তা মুথ থুবড়ে পড়ে। বরং ফিলিপিন্সের মতো দেশ কৌশলগত জয় ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এবার ভুটানকে ব্যবহার করে ওই একই পন্থা ভারতের বিরুদ্ধে গ্রহণ করতে চাই চীন। সীমান্তে সংঘাতের পরিস্থিতি প্রশমনে শুক্রবার সিকিমের নাথু লা-তে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বসেছিলেন দু’দেশের শীর্ষ সামরিক কর্তারা।
দোকলামে আরো সেনা পাঠাল ভারত
ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে যুদ্ধের মেঘ। এবার ডোকলামে চরম সতর্কতা জারি করল ভারত। পাঠানো হয়েছে আরও সেনা। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই ও রয়টার্স। অরুণাচল ও সিকিমে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিমি দীর্ঘ চীন সীমান্ত জুড়ে ভারতীয় সেনাকে যেকোনও মুহূর্তে যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। পিটিআই সূত্রে খবর, লালফৌজের যুদ্ধের হুঙ্কার ও আগ্রাসনকে নজরে রেখেই তৈরি থাকছে ভারত।
বিতর্কিত ডোকলাম এলাকায় হাতে গোনা ৫৩ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান মোতায়েন রয়েছেন। তাঁদের পিছনে মানবশৃঙ্খল গড়ে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আরও শ’চারেক জওয়ান। এঁদের মাত্র কয়েক কিলোমিটার পিছনে রয়েছেন অন্তত ২৫ থেকে ৩০ হাজার সেনা। হঠাৎ যুদ্ধ লাগলে এই সেনারা সবাই ডোকলামে এসে ‘ব্যাক আপ ফোর্স’ হিসাবে মুখোমুখি গুলিযুদ্ধে অংশ নেবেন বা পালটা হামলা চালাবÐেেন চীনা ভূখন্ডে। ঠিক একইভাবে চীনা সেনারাও তাদের মানবশৃঙ্খল ও চক্রব্যূহ তৈরি করেছে। মোতায়েন করেছে বিপুল সংখ্যক সেনা। দুই তরফেই মোতায়েন করা হয়েছে ভারী ট্যাঙ্ক, মেশিনগান ট্রেঞ্চ এবং মিসাইল লঞ্চার ট্রাক।
এখন ‘নো ওয়ার নো পিস’ পজিশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই দেশের সেনারা। সামরিক পরিভাষায় ‘নো ওয়ার নো পিস’ মানে ‘যুদ্ধের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুত’ দুই পক্ষই। যাকে বলা হয় মিলিটারি ফেস অফ। এক্ষেত্রে কাঁধে ঝোলানো বন্দুকের নল থাকে নিচের দিকে (গান ডাউন অবস্থায়)। এই সময় মানব-প্রাচীর গড়ে শত্রুর আগ্রাসন রুখে দেওয়া হয়। এখন ডোকলামে এই পজিশনেই আছেন ভারত ও চিনের সেনারা। কিন্তু কোনও পক্ষ যদি গুলি চালাতে বন্দুক হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন অন্য পক্ষও পালটা জবাব দেয়। সামরিক পরিভাষায় একে বলা হয় চার্জ। তবে চার্জে যাওয়ার আগে দু’পক্ষই একে অপরের ট্রুপস মুভমন্ট ফলো করে। ট্রুপস মুভমেন্ট মানে সেনা সমাবেশ, সেনা চলাচল, ট্যাঙ্ক, মিসাইল লঞ্চার ট্রাক, গাড়ির জমায়েত ইত্যাদি। এখন সিকিম সেক্টরে, ডোকলামের কাছে দু’পক্ষেরই ট্রুপস মুভমেন্ট চলছে।
উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই সংসদে চীনকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি। আগ্রাসনের কড়া জবাব দেওয়া হবে। যেকোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি ভারতীয় সেনা। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে এমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি। যুদ্ধ চালানোর জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে গোলবারুদ কম আছে বলে যে খবর রটেছে তা ঠিক নয়। যথেষ্ট পরিমাণে গোলাবারুদ সেনার অস্ত্রাগারে আছে। আমেরিকা জানিয়েছে, গত ৫০ দিন ধরে ডোকলামে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারতীয় সেনা। এই অচলাবস্থা কাটাতে কোনও পূর্ব শর্ত ছাড়াই বেজিং ও নয়াদিল্লিকে আলোচনায় বসার ডাক দিয়েছেন মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র হিদার নর্তে। সূত্র : ওয়েবসাইট।



 

Show all comments
  • মিরাজ ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ১:৫৯ এএম says : 0
    যতই যা করুক না কেন এবার মনে হয় চীন কোন ছাড় দেবে না।
    Total Reply(1) Reply
    • masud ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ২:৪৪ এএম says : 4
      CHINA WILL GET A GOOD LESSON NOW FROM INDIA. THEY GOT FAVORED NATION FACILITY. NOW NO MORE THAT
  • MASUD ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ২:৫২ এএম says : 1
    NO MORE LOW QUALITY CHEAP CHINESE PRODUCTS. SIMPLY COPYING FROM OTHERS WITHOUT UNDERSTANDING ANYTHING
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ