পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে চায় সরকার!
স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ৯ দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সরকার। ঘোষিত রায়ে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে অবিহিত করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায়ে যে আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে, সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ আমরা নেব। তবে আদালতের রায়ের বক্তব্য কীভাবে সরকার বাদ দিতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি আইনমন্ত্রী। ওই রায়ে সংক্ষুব্ধ হলেও রিভিউ আবেদন করার বিষয়ে সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান তিনি। আইনমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা নিশ্চয়ই চিন্তা-ভাবনা করছি যে এই রায়ের রিভিউ করা হবে কি-না। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। কারণ রায়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এখানো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
আইন মন্ত্রণালয় সম্মেলন কক্ষে গতকাল এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় আইন সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, হাইকোর্ট গত বছর তা ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে। সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হলে আপিল বিভাগ গত ৩ জুলাই তা খারিজ করে দেয়। গত পহেলা আগস্ট প্রকাশিত ৭ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব, রাজনীতিতে আমিত্বের অহমিকা, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী বলেন, মামলার ‘ফ্যাক্ট অব ইস্যুর’ সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন ‘অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা’ প্রধান বিচারপতি তার রায়ে বলেছেন। রায় ঘোষণার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আদালত যতবার ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করবে, আমরা ততবার সংসদে বিল পাস করব। আমরা বিচারপতিদের চাকরি দেই; তারা সংসদের উপর পোদ্দারি করবে? সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক রায়ের পর্যবেক্ষণের কঠোর সমালোচনা করে রায়ে অযাচিতভাবে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়াদি আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। যদিও তিনি নিজেই মুন সিনেমা হলের মামলায় তত্ত্বাবায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকসহ অনেক পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিতর্কিত হয়েছিলেন। তার পর্যবেক্ষণ বাস্তবায়নের অজুহাতে জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। যার পরিণতিতে দেশে রাজনৈতিক সংঘাট-হানাহানি, রক্তপাত লেগেই আছে। প্রধান বিচারপতি পদ থেকে অবসর নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের অনুকম্পায় বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের মতো ছোট পদে চাকরি করছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তিনি (প্রধান বিচারপতি) জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায়ে উল্লেখিত কিছু বক্তব্য সমন্ধে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভরে কিছু বলতে চাই। তাঁর রায়ে অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা যেটা এই মামলার সাথে একদমই সম্পর্কিত না। তিনি জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। আমি মনে করি, ঐ সকল রাজনৈতিক প্রশ্ন আদালত কর্তৃক বিচার্য বিষয় হতে পারে না। আমরা তাঁর এই বক্তব্যে দুঃখিত। তিনি রায়ের আরেক জায়গায় উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোন একক ব্যক্তির কারণে হয় নাই। আমি তার এই বক্তব্যে মর্মাহত। আমরা স্মরণ করতে চাই যে ইতিহাস বলে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে আন্দোলনগুলো হয়েছে তারই ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বোভৌম বাংলাদেশ। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধু হয়তো পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন কিন্তু তারই নেতৃত্বে তারই আদর্শে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে। এটা ভুললে চলবে না যে, জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ছাড়া এ দেশের আর কেউ ১৩ বছরের অধিক কারাভোগ করেন নাই। তাই মাননীয় প্রধান বিচারপতি এই বক্তব্য আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। ইতিহাস এ কথাও বলে যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীকার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জনগণের দেয়া ক্ষমতায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। আজ স্বাধীনতা ৪৭ বছর পর এই বাস্তব সত্যকে পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে সেটাই আমার জন্য অনেক কষ্টের এবং লজ্জার। তাই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, আমাদের নিরীক্ষায় প্রধান বিচারপতির রায়ে যে সব আপত্তিকর এবং অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ আমরা নেব। আইনমন্ত্রী আরো বলেন, দেশকে বিচার হীনতার সংস্কৃতির, অপরাধীদের নৈরাজ্যে, অপসংস্কৃতি এবং গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করা প্রথা থেকে শেখ হাসিনার সরকারই মুক্ত করেছে। তাই রায়ে যখন উল্লেখ থাকে যে, আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করছি ষোড়শ সংশোধনী দ্বারা, তখন ব্যথিত হওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে সংবিধান পরিপন্থী বলে যে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে তাতে আমরা বিস্মিত হয়েছি। আমরা ধন্যবাদ জানাই সেই চারজন বিচারপতিকে যারা তার ঐ পর্যবেক্ষণের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। আর শুধু এটুকু বলতে চাই যে এই ১১৬ অনুচ্ছেদকে সংবিধান পরিপন্থী আখ্যায়িত করার আমার মনে হয় মাননীয় প্রধান বিচারপতির যে রায় তা যুক্তি তাড়িত নয় বরং আবেগ ও বিদ্বেষ তাড়িত। আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে প্রধান বিচারপতির আসন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং যে কোন ব্যক্তির সেই আসন অলংকৃত করলে তাকেও আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে এক করে ফেলি। তাই আমাদের সকলের দায়িত্ব এই প্রাতিষ্ঠানিক আসনটির মর্যাদা রক্ষা করা। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোন একক ব্যক্তির কারণে হয় নাই’ প্রধান বিচারপতির এমন পর্যবেক্ষণে আইনমন্ত্রী মর্মাহতের কথা জানালেও তিনি নিজেই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য শেষ করেন এই বলে যে ‘পরিশেষে আমি শুধু বলতে চাই ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান বড় এবং প্রতিষ্ঠানের চেয়ে দেশ বড়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।