পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : ইট-পাথরের ঢাকায় এ যেন এক টুকরো সবুজের পৃথিবী। কী নেই সেখানে? চারদিকে পরিপাটি নানা রকমের গাছ। প্রতিটি গাছেই যেন রয়েছে এক মায়ার ছোঁয়া। শিল্পিত হাতের পরশে প্রতিটি গাছকেই সৌন্দর্য যেন টানছে সকলকেই। বিভিন্ন রকমের বট, তেঁতুল, পাকুড়, ডুমুর, লিচুবট, কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, নিশিন্দা, লাইকর, ক্যাকটাসসহ আরও কত জানা অজানা গাছ ভেসে আসছে চোখের সামনে। এমন দৃশ্যেরই অভিজ্ঞতা হয়েছে রাজধানীতে আয়োজিত বনসাই প্রদর্শনীতে। যেখানে তরুণ-তরুণী থেকে নানা বয়সী প্রকৃতিপ্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
রাজধানীর ইটের স্থাপনার মধ্যে এক টুকরো সবুজের উপস্থিতি এবং স্বল্প পরিসরে সহজ যত্মআত্তিতে বনসাই সংগ্রহ করা যায় বলেই বৃক্ষপ্রিয় মানুষের কাছে বনসাইয়ের কদর একটু বেশিই। বনসাই-এর পারিভাষিক অর্থ জীবন্ত ভাস্কর্য। বনসাইয়ের প্রায় ২০০০ বছর পূর্বে চীনের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে জাপান, কোরিয়া ও ভিয়েতনামসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বনসাই শিল্পীদের সংখ্যা যেমন দিন দিন বাড়ছে, তেমনি বনসাইয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহও বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি।
ধানমন্ডিস্থ ২৭ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসায় ডবিøউ, ভি, এ অডিটোরিয়ামে চার দিন ব্যাপী ১৯তম বার্ষিক বনসাই প্রদর্শনী আয়োজন করেছে বনসাই সোসাইটি। ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রদর্শনীর উদ্ধোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নিজেরা করি এর সমন্বয়কারী বিশিষ্ট্য নারী নেত্রী খুশী কবির। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির এ উদ্যোগে ১৯ তম প্রদর্শনীতে প্রকৃতিপ্রেমীদের আনন্দঘন পরিবেশ আমাকে সত্যি মুগ্ধ করেছে। বনসাই একটি শিল্প। মানুষের বেঁেচ থাকার জন্য এই শিল্পের অবদান অনেক। গেস্ট অব অনার ছিলেন মাটির ও মানুষের এর উপস্থাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক। এতে বিশেষ ছিলেন আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত স্থপতি মেরিনা তাবাস্সুম। বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির সভাপতি নাজমা শফিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনিসুল হকসহ অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
১৯৯৯ সালে কয়েকজন শিল্পি গড়ে তোলেন বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি (বিবিএস)। প্রতি বছর আয়োজন করে আসছে বনসাই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং কর্মশালা। এবারের প্রদর্শনীর মূল্য লক্ষ বর্ষার সজীব-সতেজ-সবুজ বনসাই শহরের মানুষের কাছে তুলে ধরা।
এবারের প্রদর্শনীতে দেশী ও বিদেশী প্রায় ১০০ প্রজাতির ২ হাজারের মতো বনসাই স্থান পেয়েছে। তবে দেশীয় প্রজাতির গাছের সংখ্যাই অনেক বেশি ছিল। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বট, পাকুর, নিশিন্দা, সুন্দরী, কাঞ্চন, কতবেল, তেঁতুল, হিজল, অর্জুন, শেওড়া, কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, ডুমুর, নারিকেল, নাগলিঙ্গম, বাগানবিলাস, প্রেমনা, বকুল ইত্যাদি। আর বিদেশী প্রজাতির গাছের মধ্যে রয়েছে ফাইকাস, চীনাবট, পুকেন্টি, জুনিপার, ঝুমুর, সাফেলারা ইত্যাদি। বনসাই সোসাইটির ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের বিশেষ করে সিলেট, রাজশাহী চট্রগ্রামের প্রায় শতাধিক সদস্য তাদের তৈরী করা বনসাই নিয়ে এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। আকারভেদে ১ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বনসাইয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে ৪০ থেকে ৫০ বছরের পুরনো কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন বট ও ঘুর্ণি গাছের বনসাই ছিলো সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বিপুল সংখ্যক প্রকৃতিপ্রেমী এই বনসাই প্রদর্শনীতে ভিড় করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দিন বেশ কয়েকটি বনসাই বিক্রি হয়েছে। আগামী ১৩ আগস্ট পর্যন্ত নিজ নিজ পছন্দমত প্রকৃতিপ্রেমীরা বনসাই কিনবে। চার দিনে কয়েক লক্ষাধিক টাকার বনসাই বিক্রি হয় বলে বিক্রয় কর্মীরা জানালেন। তবে বেশি কিনতে চায় বট গাছের বনসাই। কারণ এটি সহজে নষ্ট তথা মরে না। তাই অনেকেই বট গাছের বনসাই কিনার জন্য খোঁজ খবর নেন।
বনসাই সোসাইটির একাধিক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন সিলেটের কুলাউড়া থেকে আগত বনসাই শিল্পী সেলিনা পারভীন লাভলী। ২০১৫ সালে তাঁর প্রদর্শিত বনসাই পেয়েছে প্রথম পুরস্কার। সেলিনা পারভিন তার প্রতিক্রিয়ার ইনকিলাবকে বলেন, প্রকৃতির সাথে একাত্মতা স্থাপনের প্রতীক বনসাই। বনসাই শিল্পিদের মতে, বনসাই চার্চ হল প্রকৃতির প্রতি মানব সন্তানের শ্রদ্ধা ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশের নির্দশন। তিনি আরো বলেন, আমরা বনসাই তৈরি করি নিজের মনকে প্রশান্তি দেয়ার লক্ষ্যে। প্রকৃতি যারা ভালবাসেন তারাই এসব নিয়ে নিয়ে কাজ করেন। যারা প্রকৃতি যারা ভালবাসেন তারা কিন্তু মানবিক হয়। বর্তমানে সমাজের যে অমানবিকতা তৈরি হয়েছে তা উদ্ধারে কাজ করছে বনসাই সোসাইটির সদস্য প্রকৃতিপ্রেমীরা। ব্যক্তি, সমাজে ও রাষ্ট্রে মানবিকতা জেগে উঠতে কাজ করছে তারা।
বনসাই শিল্পকে কিভাবে আরো বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির সভাপতি নাজমা শফিক ইনকিলাবকে বলেন, আমি দীর্ঘ নয় বছর যাবত এই শিল্পকে সবার মাছে ছড়িয়ে দিতে চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে তা হয়ে উঠছে না। বেশ কয়েকবার সরকারের কাছে আবেদন করি কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। তিনি বলেন, একবার সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি সাহেব আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর আর কোন সুখবর নেই। কি করব বলেন। একটি শিল্প কি কোন ব্যক্তির পক্ষে একা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া যাবে। ঢাকা শহর থেকে সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অনেক গাছ। কিন্তু বনসাই বাসাবাড়িতে সেই সবুজ ফিরিয়ে আনতে পারে। তিনি বলেন, এখন ঢাকা শহরে বনসাই অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু একে ছড়িয়ে দিতে হবে সারা দেশে। তিনি আরো বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও তাঁরা বার্ষিক প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপ ও প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বনসাই সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, প্রকৃতি এবং গাছকে ভালবেসে কিছু মানুষ অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। আশা করি ব্যস্ত নগর জীবনের ব্যস্ত মানুষের জন্য কিছুটা শান্তিও ও স্বস্তি বয়ে আনবে আমাদের এই শিল্প। আমরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি। এতে করে আমরা আরো বড় পরিসরে এই শিল্পের প্রদর্শনী করতে পারব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।