পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : প্রযুক্তিনির্ভর, জটিল যুগেও মানুষ যে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার জন্য এখনো প্রকৃতির কাছেই বারবার ছুটে আসেন। অর্থ-বিত্ত, গাড়ি-বাড়িসহ বিলাসবহুল জীবনের চেয়েও মানুষের মনের প্রকৃত সুখ যে এখনো প্রকৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ, সেটারই এক বাস্তব প্রতিফলন দেখা গেল বনসাই প্রদর্শনীতে।
যেন প্রকৃতিপ্রেমীরা বনসাই সমাহারে মুগ্ধ। পৃথিবীকে প্রাকৃতিকভাবে বাসযোগ্য, সবুজ ও শীতল রাখতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখছে গাছ। গাছ হচ্ছে প্রকৃতির এক অন্যতম সেরা ও সুন্দর সৃষ্টি। কালের পরিক্রমায় এই গাছকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা কম হয়নি। এমনই একটি গবেষণার ফল হচ্ছে বনসাই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বনসাই শিল্পীদের সংখ্যা যেমন দিন দিন বাড়ছে তেমনি বনসাইয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহও বাড়ছে। আর এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি। গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিস্থ ২৭ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসায় মহিলা ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশনের অডিটোরিয়ামে চার দিনব্যাপী ১৮তম বার্ষিক বনসাই প্রদর্শনী আয়োজন করেছে বনসাই সোসাইটি। ২১ আগস্ট পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে। এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রদর্শনীর উদ্ধোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট প্রফেসর রোকেয়া সুলতানা। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থপতি ও শিল্পী মুস্তাফা খালিদ পলাশ ও গ্রীন ডেলটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী। বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির সভাপতি নাজমা শফিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনিসুল হকসহ অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রদর্শনীতে দেশী ও বিদেশী প্রায় ১০০ প্রজাতির ২ হাজারেরও বেশি বনসাই স্থান পেয়েছে। তবে দেশীয় প্রজাতির গাছের সংখ্যাই অনেক বেশি ছিল। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বট, পাকুর, নিশিন্দা, সুন্দরী, কাঞ্চন, কডবেল, তেঁতুল, হিজল, শেওড়া, কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, ডুমুর, নারিকেল, নাগলিঙ্গম, বাগানবিলাস, প্রেমনা, বকুল ইত্যাদি। আর বিদেশী প্রজাতির গাছের মধ্যে রয়েছে ফাইকাস, চীনাবট, পুকেন্টি, জুনিপার, ঝুমুর, সাফেলারা ইত্যাদি। বনসাই সোসাইটির ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের বিশেষ করে সিলেট, রাজশাহী ও চট্টগ্রামের প্রায় শতাধিক সদস্য তাদের তৈরি করা বনসাই নিয়ে এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। আকারভেদে ৫০০ থেকে শুরু করে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বনসাইয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে ৪০ থেকে ৫০ বছরের পুরনো কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন বট ও ঘূর্ণিগাছের বনসাই ছিল সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বিপুল সংখ্যক প্রকৃতিপ্রেমী এই বনসাই প্রদর্শনীতে ভিড় করেন।
প্রফেসর রোকেয়া সুলতানা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বনসাই এক ধরনের শিল্প। এই শিল্পটিকে তরুণ সমাজসহ সব পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সচেতন বাড়াতে বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করা যেতে পারে। ফলে বনসাই শিল্পের বিস্তৃতি ঘটবে। মুস্তাফা খালিদ পলাশ বলেন, বনসাই প্রথমে চীনে সৃষ্টি। ধীরে ধীরে আজ বাংলাদেশে এর চর্চা হচ্ছে। আজকের এ প্রদর্শনী ১৮তম। বনসাই মানুষের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, মননশীলতা ও সংবেদনশীলতা তৈরি করবে।
সিলেটের কুলাউড়া থেকে এই প্রদর্শনীতে দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিয়েছেন বনসাই শিল্পী সেলিনা পারভীন লাভলী। তিনি বিভিন্ন প্রজাতির কতগুলো বনসাই নিয়ে এই প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। তার সৃষ্ট মাল্টাগাছের বনসাই প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সেলিনা পারভীন লাভলী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা বনসাই তৈরি করি নিজের মনকে প্রশান্তি দেয়ার লক্ষ্যে। প্রকৃতি যারা ভালোবাসেন তারাই এসব নিয়ে কাজ করেন। যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন তারা কিন্তু মানবিক হয়। বর্তমানে সমাজের যে অমানবিকতা সৃষ্টি হয়েছে তা উদ্ধারে কাজ করছে বনসাই সোসাইটির সদস্য প্রকৃতিপ্রেমীরা। ব্যক্তি, সমাজে ও রাষ্ট্রে মানবিকতা জেগে উঠতে কাজ করছেন তারা। সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ সৈয়দা আমিনা হক মিনার তার প্রতিক্রয়ায় বলেন, গত ১৮ বছরের মধ্যে কয়েকবার আমরা সরকারের কাছ থেকে আর্থিকসহ অন্যান্য সহযোগিতা কামনা করে আসছি। কিন্তু সাড়া পাচ্ছি না। সাড়া পেলে আমরা প্রকৃতিপ্রেমী যারা তাদের আরো প্রশিক্ষণ দিয়ে আরো সুন্দরভাবে বড় পরিসরে এই প্রদর্শনী করতে পারতেন। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত অন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা জানালেন একই কথা। তারা বনসাই প্রদর্শনীতে এসে মুগ্ধ হয়েছেন। তাদের দাবি আগামীতে আরো বড় পরিসরে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হোক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।