মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি খাতে মেলবন্ধনের লক্ষ্য নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) যাত্রা হয় ১৯৬৭ সালে। ৫০ বছর পার করা আসিয়ান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিতে বিস্তর পরিবর্তন ঘটিয়েছে। শুধু তাই নয়, আসিয়ান জোট এখন বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম বাজার ও তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমশক্তি। বিদ্যমান কিছু চ্যালেঞ্জ সত্তে¡ও ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের চতুর্থ-বৃহত্তম অর্থনৈতিক জোট হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সংস্থাটি। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডকে নিয়ে ১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট আসিয়ান প্রতিা করা হয়। পরবর্তী সময়ে এখানে ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম যোগ দিয়েছে। আসিয়ানের এই ১০ সদস্য দেশের অনেকেই এখন বিশ্বের দ্রæতবর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, যাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর। আসিয়ান দেশগুলোর সমন্বিত জনসংখ্যা ৬২ কোটির বেশি; অর্থনীতির আকার ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সাল নাগাদ এ অঞ্চলটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ২০১৫ সালে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া একক বাজার ও উত্পাদন কেন্দ্র গঠনের উদ্দেশ্যে প্রতিা করা হয়েছে আসিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া (আফটা)। এটি আসিয়ানের তিন মূলস্তম্ভের অন্যতম আসিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটির (এইসি) গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এইসির মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পণ্য, সেবা ও শ্রমশক্তির অবাধ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়েছে আসিয়ান। অর্ধশতকে আসিয়ান জোট অনেক এগিয়ে গেলেও লক্ষ্য পূরণে আরো অনেকখানি পথই বাকি রয়ে গেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক মতাদর্শজনিত চরম পার্থক্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আরো ঘনিতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে উঠেছে। এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা নিয়ে আসিয়ান সদস্যদের মধ্যে দ্ব›েদ্বর মতো কিছু কণ্টকিত ইস্যু তো রয়েছেই। সিঙ্গাপুরে সিআইএমবি প্রাইভেট ব্যাংকিংয়ের অর্থনীতিবিদ সং সেং উন বলেন, সবসময়ই দেশগুলো নিজেকে আগে প্রাধান্য দেবে; পরে আসিয়ানকে। অভ্যন্তরীণ কিছু প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও আন্তর্জাতিক পরিসরেও সংকটে রয়েছে আসিয়ান। স¤প্রতি বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিশ্বায়ন বিরুদ্ধ ও বাণিজ্যে রক্ষণশীলতা বাড়ছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে এই রক্ষণশীলতা প্রকট। তবে আশা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পরিসরে এই রক্ষণশীলতার উত্তাপ থেকে এইসির পাশাপাশি রিজিওনাল ক¤িপ্রহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপের (আরসিইপি) মতো উদ্যোগগুলোর কল্যাণে পার পেয়ে যেতে পারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এদিকে আরসিইপির সফল বাস্তবায়ন হলে আসিয়ানকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয় দেশের (চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড) সঙ্গে যুক্ত করবে। যার মধ্য দিয়ে ৩৫০ কোটি জনসংখ্যার এক সুবিশাল বাজার তৈরি হবে। সা¤প্রতিক বছরগুলোয় আসিয়ান দেশগুলো গড়ে প্রায় ৫ শতাংশ স¤প্রসারিত হয়েছে। সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে আসিয়ানের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ মধ্যবিত্তের কাতারে উন্নীত হবে। আর আসিয়ানের সদস্য দেশগুলো জোটের এজেন্ডা অনুযায়ী চলতে পারলে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার পাশাপাশি জনসংখ্যাগত দিক থেকেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আসিয়ান। এছাড়া আসিয়ান দেশগুলোর সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাচ্ছে। তরুণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ২০২৫ সালের মধ্যে শীর্ষ পাঁচ ডিজিটাল অর্থনীতির একটিতে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে আসিয়ান। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল এজেন্ডা দ্রæত বাস্তবায়নের কারণে আগামী ১০ বছরে আসিয়ান দেশগুলোর জিডিপিতে ১ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ হবে। জনসংখ্যাগত সুবিধার কারণে মোবাইল আর্থিক সেবা ও ই-কমার্স খাতেও এগিয়ে থাকবে আসিয়ান। গুগল ও তেমাসেকের সা¤প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিদিনই আসিয়ান অঞ্চলে ১ লাখ ২৪ হাজার নতুন ব্যবহারকারী যুক্ত হচ্ছে আগামী পাঁচ বছর এ অবস্থা চলবে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে প্রচুর সম্ভাবনাময় আসিয়ানের প্রতিবন্ধকতাও কম নয়। চরমপন্থী ও সন্ত্রাসবাদীদের মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে এ অঞ্চল। ফলে এ অঞ্চলের মধ্যে সীমান্ত সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি কার্যকর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আগামী ৫০ বছর নিজেদের সমৃদ্ধির স্বকীয়তা বজায় রাখতে হলে আসিয়ানকে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বøুমবার্গ, স্ট্রেইটস টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।