পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের নির্বাচনী বক্তৃতায় একটি আধুনিক স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন। সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২৮ অক্টোবর পাকিস্তান টেলিভিশন সার্ভিস ও রেডিও পাকিস্তান আয়োজিত ‘রাজনৈতিক স¤প্রচার’ শীর্ষক বক্তৃতার প্রথম বক্তা ছিলেন পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত বক্তৃতা ও বিবৃতির সংকলন ‘বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ’ বইয়ের সম্পাদক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার এই বক্তৃতা সম্পর্কে বলেন, পাকিস্তানের ইতিহাসে এটাই প্রথম ক্ষমতাসীনদের বাইরের রাজনীতিবিদরা রেডিও-টিভির মতো গণমাধ্যমে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের সুযোগ পান।
বইটিতে ১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত বক্তৃতা ও বিবৃতিগুলো পটভূমিসহ বাংলা এবং ইংরেজিতে সংকলন ও সম্পাদনা করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে প্রথম কলকাতার ওরিয়েন্ট লংম্যান প্রকাশনা থেকে ‘বাংলাদেশ মাই বাংলাদেশ’ নামে বইটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৮৯ সালে ঢাকার কথন প্রকাশনী এর বাংলা সংকলন ‘বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ’ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে মুক্তধারা ১৯৭২ সালের জুলাই এবং ২০১০ সালে এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে।
বঙ্গবন্ধুর এই নির্বাচনী বক্তৃতাটি পূর্ব পাকিস্তানের শ্রোতাদের জন্য বাংলায় এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শ্রোতাদের জন্যে ইংরেজিতে রেকর্ডিং করা হয়। পরের দিন বঙ্গবন্ধুর এই বক্তৃতা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করে।
এই বক্তৃতার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের গণমাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে ‘বাংলা’ নামে অভিহিত করেন। যা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত অনেক শব্দের মতই পাকিস্তান রেডিও-টিভিতে নিষিদ্ধ ছিল।
ঐতিহাসিক এই বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের রূপরেখা তুলে ধরেন। এতে তিনি পূর্ববাংলার স্বায়ত্বশাসনের পাশাপাশি এদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির পথও নির্দেশ করেন। তিনি কৃষি, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো সম্পর্কেও তার পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটানোর জন্যে দ্রæত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে অর্থনৈতিক মৌলিক ভিত্তির প্রথম তিনটি স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই প্রথম কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় উল্লেখ করেন। সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্রাকৃতির শিল্প গড়ে তুলতে হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে তিনি উত্তরবঙ্গের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য যমুনা সেতু নির্মাণের আশা প্রকাশ করেন।
বঙ্গবন্ধু এই বক্তৃতায় কেন্দ্রƒীভূত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্রে মাত্র ১৫ শতাংশ বাঙালী প্রতিনিধিত্বের কঠোর সমালোচনা করে এর পুনর্বিন্যাসের দাবি জানান। তিনি কৃষির আধুনিকায়নে কৃষকদের হাতে প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি, সার, ও বীজ সরবরাহ এবং কৃষি ঋণ দেয়ার সুপারিশ করেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির খাজনা বিলোপ এবং বকেয়া খাজনা মওকুফ করার প্রস্তাব করেন।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষাখাতে বিনিয়োগকে ‘উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ’ আখ্যা দেন। জাতীয় উৎপাদনের শতকরা ৪ ভাগ সম্পদ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি স্কুল, কলেজ এবং বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেন। দেশে মেডিকেল ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয়সহ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওপরও জোর দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।