ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো. ওসমান গনি : সৃজনশীল পদ্ধতি শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করার জন্য এবং মুখস্ত বিদ্যা থেকে বের করে আনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এ শিক্ষাপদ্ধতি আমাদের দেশে কতটুকু কার্যকর হচ্ছে এবং এ পদ্ধতি চালু করার ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কী ধরনের পরিবর্তন আসছে তাও দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সমস্ত শিক্ষক পাঠদান করান তারা এ বিষয়টি সমন্ধে কতটুকু অবগত সেটাও আমাদের পর্যবেক্ষণ করা উচিত। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কয়েক বছর আগে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু হয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষার্থীদের গতানুগতিক মুখস্ত করার চিন্তা-চেতনা থেকে বের করে এনে সৃজনশীল করে গড়ে তোলা। নিঃসন্দেহে সেদিক থেকে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু ভাবনার বিষয় হলো, শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার পরিবেশ অনুযায়ী এ পদ্ধতি কতটা কার্যকর? একটি সৃজনশীল প্রশ্নের অংশ মূলত চারটি: জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক, প্রয়োগমূলক এবং উচ্চতর দক্ষতামূলক। দুঃখের বিষয়, এখনো সিংহভাগ শিক্ষক বলতে পারেন না সৃজনশীল পদ্ধতি কী এবং মূল চারটি অংশের পৃথক পৃথক ব্যাখ্যাই বা কী। সরকার প্রতিনিয়ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে শিক্ষকদের এ বিষয়ে দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ট্রেনিং পরবর্তী সময়ে শিক্ষকরা ক্লাসে বিষয়গুলো প্রয়োগ করছেন কিনা, এ বিষয়ে কি কোনো তদারকির ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে?
শিক্ষকদের সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি সংক্রান্ত বিষয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যয় করছে। তারপরও শিক্ষকরা এ পদ্ধতি সঠিকভাবে উপলব্ধি বা প্রয়োগ করতে পারছেন না। যদি ট্রেনিং থেকে শেখা বিষয়গুলো শিক্ষকরা যথাযথভাবে প্রয়োগই করতেন তাহলে বাজারে নোট-গাইডের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেত, শিক্ষার্থীরা মুখস্ত বিদ্যাকে ‘না’ বলত। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যাবে, সৃজনশীল পদ্ধতির বদৌলতে পুঁজিপতিদের সয়লাব হয়েছে, তারা আগের তুলনায় আরো বেশি নোট গাইড বিক্রি করছেন। এ কারণে শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষক কেউ-ই বুঝতে পারছে না যে সৃজনশীল পদ্ধতি মূলত কী। ফলে শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করার স্বার্থে আর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাস করার জন্য কিংবা ভালো নম্বর পাওয়ার স্বার্থে নোট-গাইডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা সারা বছর নোট-গাইড থেকে প্রশ্ন কমন পেয়ে ভালো নম্বর তুললেও বোর্ড পরীক্ষাগুলোতে অনেক বাজে ফলাফল করছে, যেহেতু বোর্ড পরীক্ষাগুলোতে সঠিক সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞমহলের মতে, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করে গড়ে তোলার জন্য শুধু বোর্ড পরীক্ষা নয়, প্রতিটি পরীক্ষায় বোর্ড কর্তৃক সঠিক মানের সৃজনশীল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করতে হবে।
সারা বছর শিক্ষার্থীদের জন্য নমুনা সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে মডেল টেস্ট পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জন করবে, এর সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠবে। ফলে সৃজনশীল সম্পর্কে তাদের বিদ্যমান ভীতিও ধীরে ধীরে দূরীভূত হবে। পাশাপাশি বাজার থেকে নোটবুক নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ বাজারের কোনো নোটবুকেই সঠিক সৃজনশীল পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রশ্ন তৈরি করা হয় না। কাজেই এসব নোটবুক শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক বইয়ের ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ। বরং তা শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল ধারণার সৃষ্টি করবে এবং তারা মুখস্ত করার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করে গড়ে তুলতে হলে তাদের কেবল বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাদের মাঝে বাইরের জগৎ সম্বন্ধে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। তারা যেন নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠ করতে পারে তার জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পরিমাণে সংবাদপত্র সরবরাহ করতে হবে এবং পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সমসাময়িক নানা ইস্যুতে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। সেখানে যেন ক্রমান্বয়ে সবাই অংশগ্রহণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। এতে তাদের মাঝে সৃজনশীলতার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি বিষয় শিক্ষার্থীদের বোধগম্য করে তোলার জন্য শিক্ষকদের অনন্য ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য শিক্ষক নিয়োগে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক যাচাইয়ের মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করা হলে শিক্ষার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া দক্ষ শিক্ষক বা প্রশিক্ষকদের মূল্যবান কথা ও পরামর্শগুলো প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পুরো বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারবে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বই পড়া কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলতে পারলে এ বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সুতরাং সৃজনশীল পদ্ধতি উদ্ভাবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করছি। সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আর অধিকতর মনোনিবেশ করতে হবে। যখন একজন শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে অধিক জ্ঞানার্জন করতে পারবেন তখন তিনি অতি সহজভাবে ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়টি সম্পর্কে বুঝাতে সক্ষম হবেন। ছাত্রছাত্রীরাও অতি সহজে এ সম্পর্কে জানতে পারবে। যদি শিক্ষকই সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে পুরোপুরি বুঝতে না পারেন তাহলে ছাত্রছাত্রীদের বোঝাবেন কীভাবে? এমন শিক্ষক থেকে ছাত্রছাত্রীরা ভালো কিছু শেখার আশা করতে পারে না। তখন ছাত্রছাত্রীরা বাধ্য হয়ে বাজার থেকে নোট ও গাইড বই কিনে মুখস্ত বিদ্যার পথে চলে যায়। তাই আমাদের দেশের শিক্ষকদের বারবার সৃজনশীল পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আর তা সম্ভব হলেই সরকারের সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি সামনের দিকে পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হবে। দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে নিজেরা বাজার থেকে নোট ও গাইড বই কিনে রাত্রি জেগে লেখাপড়া শিখে সকালে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাশ করান। আবার অনেক শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের নোট ও গাইড বই কিনতে বাধ্য করে। অনেক বই কোম্পানির সাথে তাদের চুক্তি থাকে। যার কারণে তারা নোট ও গাইড বইয়ের নাম লিখে দেন ছাত্রছাত্রীদের। এখানে শিক্ষকরা কোম্পানি থেকে কিছু একটা সুবিধা পেয়ে থাকেন। যদি সৃজনশীল পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেয়া হতো তাহলে নোট ও গাইড বইয়ের দ্বারস্থ হওয়া লাগত না ।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।