স্টাফ রিপোর্টার : বিগত আট বছরের আন্দোলনের ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিএনপি থেকে দলটির সব নেতার পদত্যাগ করা উচিৎ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, গত আট বছরে আট মাসের জন্যও তারা রাস্তা গরম করতে পারেননি। উত্তাপ সঞ্চার করতে পারেননি। বিএনপি বারবার আন্দোলনের ডাক দেয় কিন্তু মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। এই মরা গাঙ্গে জোয়ার কবে আসবে কেউ জানেও না। এই ব্যর্থতার জন্য আপনাদের টপ টু বটম সবার পদত্যগ করা উচিৎ। কাদের বলেন, এদের (বিএনপি) শক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান দেশের বাইরে। ভাইস চেয়ারম্যান বিদেশে; কবে আসবে কেউ জানে না। টেমস নদীর পারে বসে বসে চোরাগলি খুঁজছেন কোন গলি দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যায়।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ছাত্রলীগের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য পুত্র শেখ কামালের ৬৮ তম জন্ম বার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ষোড়শ সংশোধনী আদালতে বাতিলের ঘটনায় সরকারকে ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগ করার পরামর্শ দেয়ার পরদিন এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বিএনপির নেতাদেরই পদত্যাগ দাবি করলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব সরকারকে পদত্যাগ করতে বলেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় সরকার হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। শেখ হাসিনা সরকারের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্নিত হয়ে, বিএনপি এখন পদত্যাগের প্রলাপ বকতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আলমগীর সাহেব বাংলাদেশ পাকিস্তান কোন দিকে ইঙ্গিত করেছেন আমরা জানি। বাংলাদেশ পাকিস্তান নয়। পাকিস্তানকে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ। কোন দিকে ইশারা ইঙ্গিত করে পদত্যাগ করতে বলেছেন, আমরা বুঝি । আপনাকে বলি, আবারও বলি বাংলাদেশে একটা-দুইটা আঘাতে স্তিমিত হওয়ার দল আওয়ামী লীগ না।
কোন আঘাত আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারবে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ভিত, শেখ হাসিনার গণভিত এবং আওয়ামী লীগের ভিত অনেক বেশি শক্তিশালী। আঘাত করে আমাদের পরাজিত করা যাবে না। আমরা সেই শক্তি যারা অতলের কিনারা থেকে, সময়ের প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে যাই সামনের দিকে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতিজ্ঞা এখনো দূর্বল হয়নি। প্রতিজ্ঞা নিয়ে বারে বারে আমরা অন্ধকারকে অতিক্রম করতে জানি। আমাদের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই। আমাদের গণভিত, আমাদের ভিত অনেক বেশি শক্তিশালী।
আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব, আপনার মনের জালা আমরা বুঝি, কষ্টটাও বুঝি। বারে বারে আন্দোলনের ডাক দিয়ে মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। কবে আসবে তাও জানি না। ঈদের পর ঈদ যায়, মাসের পর মাস যায়; অথচ মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। কেবলই ডাক আসে, সব ডাকই আষাঢের তর্জন-গর্জন।
তিনি বলেন, রমজানের সময় আন্দোলনের ডাক দিয়ে তারা বলেছিল ঈদের পরে দূর্বার আন্দোলন। একথা বলে দু’মাসের জন্য আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে টেমস নদীর পাড়ে। এ বছর না ঐ বছর আন্দোলন হবে কোন বছর? এই ঈদের না ঐ ঈদের পর; আন্দোলন হবে কোন ঈদের পর।
কাদের বলেন, বিএনপি পদত্যাগ আমাদের করতে বলে। যারা আট বছরে আট মিনিটের জন্যও রাস্তা গরম করতে পারেনি। উত্তাল সঞ্চার করতে পারেননি। এই ব্যর্থতার জন্য আপনাদের টপ টু বটম সবার পদত্যগ করা উচিৎ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর দলের অনেকেই চেহারা পাল্টিয়েছিলেন। তখন অনেককে বাড়িতে গিয়ে দরজা নক করেও পেতাম না। বাড়িতে থেকেও বলতেন নেই। অনেক কথা। আমরা কিন্তু পালাইনি। রাজনীতিতে জীবিতদের সম্পর্কে মন্তব্য করা কঠিন। জীবিতদের নিয়ে সত্য কথা বলা যায় না।
তরুণ সমাজকে শেখ কামালের আদর্শ অনুসরণ করার আহŸান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বাঙালি তরুণদের জন্য শেখ কামাল রোল মডেল। ৪২ বছর পরেও শেখ কামালকে কেউ কলঙ্কিত করতে পারেনি। তাই তরুণদের উচিৎ শেখ কামালের আদর্শ অনুসরণ করা। তিনি বলেন, আজকে দেশে প্রমাণিত বঙ্গবন্ধু পরিবারই সৎ রাজনীতির প্রতীক। বঙ্গবন্ধু পরিবারই সৎ ও সাহসী রাজনীতির প্রতীক। চরিত্র হননের ছোরা দিয়ে এই পরিবারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন র আ ম রবিউল মোক্তাদির চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স।