পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সীমিত এলাকায় স্বল্পতম সময়েই অতিবৃষ্টি : ঢাকায় বাড়ছে বর্ষণ প্রবণতা : অতি আর্দ্রতায় অসহনীয় ভ্যাপসা গরমের মাত্রা বৃদ্ধি
শফিউল আলম : সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক অসঙ্গতি। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি ও নিয়মিত পূর্বাভাসের সাথেও বৃষ্টিপাতের প্রকৃত হার, পরিমাণ ও মাত্রা কখনও কখনও মিলছে না। খুব সীমিত এলাকায় স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই হঠাৎ করে অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় মাত্র তিন ঘণ্টায় ১২৩ মিলিমিটার যে বৃষ্টিপাত হয় তা ছিল চলতি বর্ষা মৌসুমে এ যাবত সারাদেশে স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই সর্বোচ্চ পরিমাণে ও হারে বর্ষণের রেকর্ড। রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগে বর্ষণের প্রবণতা ক্রমাগত বৃদ্ধির দিকেই রয়েছে। অন্যদিকে বায়ুমÐলে অতিমাত্রায় আর্দ্রতা হচ্ছে সঞ্চিত ও পুঞ্জীভূত। এ কারণে অসহনীয় ভ্যাপসা গরমের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলের আবহাওয়া-জলবায়ু হয়ে উঠছে ক্রমাগত চরম ভাবাপন্ন, অস্থির, বিপরীতমুখী বৈরী এবং অনেক সময়ই তা অসহনীয়। এমনকি ঘোর শ্রাবণের মধ্যেই গতকালও (শুক্রবার) দেশের অনেক জায়গায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয়। যা এ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়েও বেশি। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রে এই অভিমত পাওয়া যায়।
গত জুলাই মাসে অর্থাৎ ঘোর বর্ষার আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আবহাওয়া বিভাগের তথ্য-উপাত্ত অনুসারে স্বাভাবিক হার ও পরিমাণের তুলনায় সার্বিকভাবে সারাদেশে ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি হারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যদিও গত মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে মর্মে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দেয়া হয়। জুলাই মাসে ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ধরা হয় ৩৬১ মিলিমিটার। অথচ বৃষ্টিপাত হয় ৫৪১ মিমি, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৯ দশমিক ৭ মিলিমিটার বেশি। একইভাবে শুধু সিলেট আর ময়মনসিংহ ছাড়া দেশের ৬টি বিভাগেই গত এক মাসের পরিসংখ্যানে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে ব্যাপক অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়।
গত এক মাসের বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যানে খুলনা বিভাগে স্বাভাবিক হার বা পরিমাণের (৩৩৯ মিমি) বিপরীতে সর্বোচ্চ (৫৪১ মিমি) ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৬.৩ শতাংশ বেশি, বরিশালে ৪০.২ শতাংশ বেশি, রাজশাহীতে ২০.২ শতাংশ বেশি বর্ষণ হয়। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী অনাবৃষ্টি, খরা কবলিত রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়েও ১৩ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কৃষককুল পড়েছে বিপাকে। গত মাসে ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ কম এবং সিলেটে ৬.৩ ভাগ কম বৃষ্টিপাত হয়।
শুধুই গত এক মাসেই নয়; সাম্প্রতিককালে দেশে ধারাবাহিকভাবে বৃষ্টিপাতে অস্বাভাবিক তারতম্য ও অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। গত জুনে দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়। মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ ভাগ কম বৃষ্টি হয়। অথচ এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের বিপরীতে ১০৬ শতাংশ এবং মার্চে ১৫১ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়। যা ওই সময়ের (মার্চ-এপ্রিল) বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে ৩০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম হয়েছে। বৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে গেলেও অঞ্চল বা এলাকাওয়ারি বৃষ্টিপাতের চিত্র ভিন্ন ভিন্ন। যা দেশে বৃষ্টিপাতে অসঙ্গতির সূচক বহন করছে।
হঠাৎ সীমিত স্থানেই অতিবৃষ্টি
গত ৩ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় দুপুরবেলায় মাত্র ৩ ঘণ্টায় ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। যা গত দুই দিনের মধ্যে সারাদেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। শুধুই তাই নয়, চলতি বর্ষা মৌসুমে সমগ্র দেশে খুব কম সময়ের মধ্যেই এটি সর্বোচ্চ বর্ষণের রেকর্ড। এর আগে নিকটতম সময়ে গত ২৪ জুলাই চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ মিমি, ২১ জুলাই সীতাকুÐে ২৪ ঘণ্টায় ২৭৪ মিমি এবং ১২ জুন রাঙ্গামাটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৪ মিমি বর্ষণ জানমালের বিপর্যয় ডেকে আনে। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমে এ যাবত ২৪ ঘণ্টায় উপরোক্ত পরিমাণ বর্ষণের চেয়েও দেশের কোথাও কোথাও আরও অধিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় দিকটি হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে অল্প সময়ের মধ্যে এবং সীমিত স্থানে ও পরিসরে অতি বর্ষণের প্রবণতা। যেমন- সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যেই যেখানে ১২৩ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল, ঠিক ওই সময় চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক এলাকায় ছিঁটেফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। এ সময় কোথাও হয়েছে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের।
প্রসঙ্গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৪ থেকে ১০ মিমি পর্যন্ত হালকা বৃষ্টি, ১১ থেতে ২২ মিমি পর্যন্ত মাঝারি পরিমাণের বৃষ্টি, ২৩ থেকে ৪৪ মিমি পর্যন্ত মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ, ৪৪ থেকে ৮৮ মিমি পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত এবং ৮৯ মিমি কিংবা এরও ঊর্ধ্বে বৃষ্টিপাত হলে তা ‘অতি ভারী’ বর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ৩ আগস্টের ঢাকার বর্ষণ ছিল অস্বাভাবিকতম অতি ভারী বর্ষণের রেকর্ড।
এদিকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রিয়াজ আখতার মল্লিক গবেষণা করে দেখিয়েছেন- প্রতি বছর বছর বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের হার বা পারিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ বার্ষিক গড়ে ৪ থেকে ৬ মিলিমিটার। আর বিগত ৫০ বছরে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গেছে ২শ’ থেকে ২৫০ মিমি পর্যন্ত। তিনি ইনকিলাবকে জানান, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ধারায় ও এর সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন কারণে দেশে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় দিকটি হচ্ছে খুব কম সময়ের মধ্যে, সীমিত এলাকা বা পরিসরে বেশিমাত্রায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা। এতে করে বিশেষত আরবান জীবনযাত্রায় সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে। কেননা নগরাঞ্চলে পানিবদ্ধতার মতো সমস্যা তৈরি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি মাত্রায়।
তাপদাহে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া
ক্রমাগত তাপদাহ, বাতাসে অতিআর্দ্রতা-জনিত ভ্যাপসা গরম এবং হঠাৎ হঠাৎ অতিবর্ষণের প্রবণতায় বাংলাদেশ এবং আশপাশ অঞ্চলজুড়ে চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে আবহাওয়া। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় তাপদাহের মূল কারণ অর্থাৎ কার্বন নিঃসরণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় তাপপ্রবাহের কারণে মৃত্যুহার মহামারীর মতোই দুর্যোগ বয়ে আনতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। খরতপ্ত আবহাওয়া একই সাথে অতিমাত্রায় আর্দ্রতা বৃদ্ধির মাত্রা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে অনেক বেশিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউ অব টেকনোলজির সাবেক গবেষক ও হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সেস এন্ড টেকনোলজির প্রফেসর ইউন সুন ইমের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। গত ২ আগস্ট গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এতে জানানো হয়েছে, বায়ুমÐলে মাত্রাতিরিক্ত হারে আর্দ্রতা সঞ্চিত ও ঘনীভূত হচ্ছে। এতে করে অসহ্য ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ এবং আশপাশ অঞ্চলের আবহাওয়া-জলবায়ু ক্রমাগত চরম ভাবাপন্ন, অস্থির, বিপরীতমুখী হয়ে উঠেছে। যা এভাবে চলতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ বাংলাদেশও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে। তাপদাহ ঘনীভূত হচ্ছে গঙ্গা-পদ্মা ও সিন্ধু নদ-নদী অববাহিকায় অবস্থিত ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে। এ অবস্থায় এসব অঞ্চলের ১৫০ কোটি মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। কেননা কার্বন নির্গমন-ক্ষতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে তার মাত্রা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
উপরোক্ত গবেষণায় বাতাসের আর্দ্রতা, মানুষের শরীর শীতল হওয়ার সক্ষমতা এবং তাপের মাত্রা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই তিনটি ফ্যাক্টর বা নিয়ামক মিলে ‘ওয়েট-বালব তাপমাত্রা’ হিসেবে পরিচিত। এর মূল কথাটা হলো, মানুষ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওয়েট-বালব তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে। তাপমাত্রা এর বেশি হলে ঘর্মাক্ত অবস্থা থেকে দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসা কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হিট স্ট্রোক এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।