Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারীরা

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


ইনকিলাব ডেস্ক : বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ২১০০ সাল নাগদ দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস অসহনীয় হয়ে উঠবে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বায়ুমÐলে উষ্ণতা ও আর্র্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মানুষ অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। যদি কার্বন নিঃসরণ কমানো না যায়, তবে ২১০০ সাল নাগাদ মানুষের বেঁচে থাকার শেষসীমায় পৌঁছাবে তাপমাত্রা। সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, এই অঞ্চলের বড় অংশের মানুষ ভয়ংকর পরিস্থতির মুখে পড়বে। যদি কার্বন নিঃসরণ কমানো না যায়, তবে আর্র্দ্রতাপ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে; যা মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। নাতিশীতোষ্ণ দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষ বসবাস করে। ব্যাপক প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের এই বিশাল জনপদ জনশূন্য হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে, যদি কিনা, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। বিশ্বের অধিকাংশ সরকারি আবহাওয়া স্টেশন দুই ধরনের থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা নির্ণয় করে থাকে। এক. উষ্ণতা নির্ণায়ক থার্মোমিটার বা ড্রাই বাল্ব থার্মোমিটার এবং দুই. আর্দ্রতা নির্ণায়ক থার্মোমিটার বা ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটার। ড্রাই বাল্ব থার্মোমিটার দিয়ে বাতাসের তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। আর ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটার দিয়ে বাতাসের তুলনামূলক আর্দ্রতা নির্ণয় করা হয়। ওয়েট বাল্বে নির্ণিত তাপমাত্রা বাতাসের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে কম হলেও তা মানুষের জন্য সর্বোচ্চ সহনশীলতার মাত্রা বলে দেয়। যে কারণে ওয়েট বাল্বে তাপমাত্রার পরিমাপ মানুষের অস্তিত্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক থার্মোমিটারে মানব শরীরের ভেতরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এই অবস্থায় আমাদের শরীরের বাইরে অর্থাৎ ত্বকে সাধারণত ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। ভেতরে ও বাইরে তাপমাত্রার এই পার্থক্যের কারণে শরীরের ভেতরের পরিপাকীয় তাপ ঘামের মাধ্যমে বাষ্প হয়ে বের হয়ে যায়। এখন যদি ওয়েট বাল্বে আমাদের পরিবেশের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়ে যায়, তাহলে শরীর থেকে তাপ বেরিয়ে যাওয়ার হার দ্রæত কমে যায় এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী ছয় ঘণ্টায় একজন সুস্থসবল মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ওয়েট বাল্বে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মানে মানুষের বসবাসের জন্য তাপমাত্রার সর্বোচ্চ সীমা, যেখানে আর্দ্র তাপমাত্রায় ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস মানে অধিকাংশ মানুষের টিকে থাকার জন্য চরম ভয়ংকর পর্যায়ের মাত্রা। পৃথিবীতে রেকর্ডকৃত তাপমাত্রার ইতিহাসে ওয়েট বাল্বে তাপমাত্রার সীমা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে দেখা গেছে খুবই অল্প কয়েকবার। ২০১৫ সালে ইরানে ওয়েট বাল্বে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি রেকর্ড করা হয়। একইবছর ভারত ও পাকিস্তানে তীব্র দাবদাহে ৩ হাজার ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়। নতুন এই সমীক্ষায় দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটারে তাপমাত্রার পরিমাপ বেশি হলে তাতে মানবজীবনে কতটা ভয়ংকর প্রভাব ফেলে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাবে মানুষের জন্য কী ধরনের অশনিসংকেত দেয়। পরিবেশের উচ্চপর্যায়ের ক্লাইমেট মডেল ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণগুলো পরীক্ষা করে দেখার পর এই সমীক্ষার গবেষকরা সম্মিলিতভাবে তাদের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের দুটি দৃশ্যপট বিশ্লেষণ করে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটারে তাপমাত্রার সর্বোচ্চ মাত্রা কেমন হতে পারে, তার পূর্বাভাস দিয়েছেন তারা। উচ্চহারে কার্বন নিঃসরণের ভবিষ্যৎ নিয়ে মডেলের পরীক্ষায় গবেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলে ওয়েট বাল্ব তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। গঙ্গা অববাহিকা, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ, চীনের পূর্ব উপকূল, শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চল এবং পাকিস্তানের সিন্ধু উপত্যকায় এই চরম তাপমাত্রা দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এই অঞ্চলে ভবিষ্যতে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটারে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু কম-বেশি তাপমাত্রার মধ্যে বসবাস করবে। তবে বর্তমানে এ ধরনের তেমন হুমকি নেই। এই সমীক্ষার সদস্য ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক এলফাতি এলতাহির বলেছেন, গঙ্গা ও সিন্ধু উপত্যকায় পানি আছে, কৃষিকাজ হচ্ছে এবং যে কারণে সেখানে মানুষের বিস্ফোরণ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, চরম তাপমাত্রাসংক্রান্ত আমাদের মানচিত্রগুলো সেসব স্থানকেই নির্দেশ করছে, যেখানে কৃষিকাজ করা দরির্দ্র মানুষের বসবাস অপেক্ষাকৃত বেশি। তারা সংখ্যায় এত বেশি হয়ে যাচ্ছে যে, এতে করে অনেক সমস্যা তাদের ঘাড়ে চেপে বসছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা যায়, তাহলে ওয়েট বাল্ব তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠার আশঙ্কা ২ শতাংশ কম হবে। সত্যি বলতে, শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, পৃথিবীটাই জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে রয়েছে। শিল্প বিকাশের হাত ধরে ভয়াবহভাবে যে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তা রোধ করতে না পারলে হয়তো পৃথিবীটা একসময়ে বাসযোগ্য থাকবে না। মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন এখন সময়ে দাবি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ