পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী : উত্তর জনপদের বৃহত্তর নৌ বন্দর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়িতে ট্যাংকলরী থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জ্বালানি তেল চুরি হচ্ছে। তেল চুরির ঘটনা এখন ওপেন সিক্রেট এসব জেনেও না জানার ভান করছেন স্থানীয় প্রশাসন। জবাব চাইতে গেলে একে অপরকে দুষছেন। কেউ নিজের ভুল স্বীকার করছেন না। দীর্ঘদিন থেকে উত্তরাঞ্চলের প্রধান নৌ বন্দর সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে (বিপিসির) এই অপরাধমূলক কর্মকান্ড চললেও তা বন্ধের কোন কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন না করায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে ডিপো এলাকায় গড়ে উঠেছে ২ শতাধিক চোরাই তেলের দোকান। এসব দোকান মালিকরা ট্যাংকলরীর ড্রাইভার ও হেলপারদের কাছ থেকে প্রতিদিন কম দামে লাখ লাখ টাকার চোরাই তেল কিনে বিক্রি করছে। অভিযোগে প্রকাশ, প্রায় ২৫ বছরে তারা এখন শুণ্য থেকে কোটিপতি হয়ে গেছে। এ ছাড়া এসব তেল দোকানিদের মধ্যে অনেকেই এক সময় গাড়ি পরিস্কার, হেলপারী, ঘাটের কুলি, বাদাম বিক্রেতা অথবা তেল টোকাই ছিলেন। এ চোরাই তেলের ব্যবসা করে তারা এখন নামিদামি গাড়ি ও বিলাস বহুল ও বহুতল অট্টালিকা, মার্কেট ও জমিজমার মালিক। বাঘাবাড়িতে নৌ বন্দর এলাকায় এদের রয়েছে তেল চুরির একটি বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাঘাবড়ি তেল ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও টু শব্দ করতে সাহস পায়না। এক পর্যায়ে তারা তাদের সাথে মিলতাল করে টু পাইস কামিয়ে তেল চুরির বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে চলেন। এই সিন্ডিকেটে প্রায় ৬ শতাধিক সদস্য রয়েছে এবং তারা সিরাজগঞ্জ ও পাবনার অধিবাসী। তবে বেশির ভাগ সদস্য সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার অধিবাসী। এদিকে বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে জ¦ালানী তেল নিয়ে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইলসহ উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় যাওয়ার সময় পথে ড্রাইভার হেলপাররা প্রতিদিন এই তেল বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রকাশে দিবালোকে শাহজাদপুর থেকে সিরাজগঞ্জ রোড হয়ে মহসড়কের রংপুর অবধি প্রায় স্থানে রাস্তার ধারে তেলের ড্রাম রেখে তেল চুরি করলেও তা দেখার যেন কেউ নেই। এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তেল ব্যবসায়ী বলেন, বাঘাবাড়ি তেল ডিপো থেকে প্রতিদিন সাড়ে ৬‘শ থেকে ৭‘শ ট্যাংকলরী জ¦ালানী তেল বহণ করে। এর মধ্যে শুধু ডিজেল তেল বহণ করে ৪‘শ থেকে সাড়ে ৪‘শ ট্যাংকলরী। বাকি গুলো পেট্রোল,অকটেন ও কেরোসিন তেল বহণ করে। এ সময় প্রতিটি ট্যাংকলরী থেকে ড্রাইভার হেলপাররা ১ থেকে ২ ড্রাম হিসাবে ২২০ লিটার থেকে ৪৪০ লিটার পর্যন্ত তেল চুরি করে পথে বিক্রি করে। ডিপো গেটের ভিতর থেকেও এরা ট্যাংকলরী থেকে হাফ ড্রাম থেকে ১ ড্রাম হিসাবে ১১০ থেকে ২২০ লিটার পর্যন্ত তেল চুরি করে বিক্রি করে। এর মূল্য প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকা। এ হিসাবে বছরে ৭‘শ থেকে সাড়ে ৭‘শ কোটি টাকার শুধু ডিজেল তেল চুরি হয়। এসব চোরাই তেলের সিংহভাগই কিনে থাকে বাঘাবাড়ির তেল ডিপোর এলাকায় গড়ে ওঠা চোরাই তেলের দোকান মালিকরা। এ চোরাই তেলের সিংহ ভাগই বিপিসির পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল কোম্পানির বলে তিনি জানান। বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে সিরাজগঞ্জ রোড পর্যন্ত ১৪টি তেল অল্টারের মিনি কারখানা থেকে ৫০০ থেকে ৭০০ লিটার পর্যন্ত তেল অল্টার করে ওই চোরাই তেল অল্টার কারখানার মালিকের কাছে। তেল অলাটারের এই মিনি কারখানা গুলোর সামনে টিনের বড় গেট থাকে। এই গেটের ভিতরে রড় টিনের ঘর রয়েছে। সেখানে তেল অল্টারের সরঞ্জাম রয়েছে। এসব বিষয় এখন তাদের কাছে ওপেন সিকরেট হয়ে গেছে। উৎকোচের বিনিময়ে প্রশাসন ম্যানেজ হওয়ায় এ চুরির পরিমান এমন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্যাংকলরী হেলপার বলেন, হাজিরা যা পাই তা দিয়ে চলে না তাই ওস্তাদের (ড্রাইভার) সাথে মিলে মিশে কিছু কামাই করি। এটা এমন কিছু দোষের নয়। বড় বড় তেল ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বেশি লাভের আশায় তেল অল্টার করে। ডিজেলের সাথে কেরসিন, অকটেনের সাথে পেট্রোল ও পেট্রেলের সাথে ডিজেল মিশিয়ে বেশি লাভ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঘাবাড়ি তেল ডিপোর একজন কর্মচারী বলেন, এ চোরাই কারবারের খবর পুলিশ, ডিপোর কর্মকর্তা থেকে পিয়ন পর্যন্ত সবাই জানেন। তারা প্রাণ ভয়ে কেউ এর প্রতিবাদ করে সাহস পায় না। এমনকি তাদের হাত থেকে এখন সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছেন না। গত ১৬ জুলাই রোববার শাহজাদপুরের সাংবাদিক মুমীদুজ্জামান জাহান পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এদের হামলার শিকার হন। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এব্যাপারে ২৪ জনকে আসামী করে তিনি শাহজাদপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। প্রায় ১০দিন যাবত এ মামলা করা হলেও এপর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার না করায় ক্ষোভে ফুসে উঠেছে সাংবাদিক মহল।
এ বিষয়ে বাঘাবাড়িনৌ বন্দর এলাকায় পদ্মা ওয়েল ডিপোর ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন ও মেঘনা ওয়েল ডিপোর ম্যানেজার জালাল উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, ট্যাংকলরী থেকে তেল চুরির বিষয়টি নতুন নয়। এ তেল চুরি সিন্ডিকেট প্রতিরোধ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিষয়। এক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু নেই। কারণ ডিপো থেকে তেল বুঝে নেয়ার পর ট্যাংকলরী থেকে এই তেল বিক্রি হয় বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর এলাকাসহ সড়ক পথের বিভিন্ন স্থানে। শাহজাদপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আলীমুন রাজীব বলেন, তেল চুরি বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।