Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হজ ফ্লাইট সঙ্কটের সমাধান হয়নি

প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৮ এএম, ৩ আগস্ট, ২০১৭

দু’এক দিনে নিরসন না হলে জটিলতা আরো বাড়বে : মেনন
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহনের সঙ্কট এখনো কাটেনি। ফলে একদিকে যেমন এখনো বাংলাদেশে অবস্থানরত হজযাত্রীরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়, তেমনি বাতিল হওয়া ফ্লাইটের হজযাত্রীরা হজ ক্যাম্প, বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও রাজধানীতে আত্মীয় স্বজনের কাছে কষ্ট ও বিড়ম্বনায় সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে অতিরিক্ত মোয়াল্লেম ফি, ভিসা প্রিন্টে জটিলতাসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান দু’একদিনের মধ্যে না হলে হজ ফ্লাইটে জটিলতা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। গতকাল সচিবালয়ে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে মন্ত্রী এ কথা জানান।
যাত্রী সঙ্কটে এ পর্যন্ত বিমানের ১২টি ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ৩টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এতে বিমানের ক্যাপাসিটি লস হয়েছে ৫ হাজার ৩৮০ জন, সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের লস হয়েছে এক হাজার ২০০ জন।’
তিনি বলেন, ‘বিমান পরিকল্পনার সময় এই লস হতে পারে ধারণা করে অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে রেখেছে। কিন্তু আজ কালের মধ্যে যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তখন এটা একটা সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে।’ প্রেস ব্রিফিংয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম ফারুক, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-সচিব মো: হাফিজ উদ্দিন, হাবের মহাসচিব মো: শাহাদাত হোসাইন তসলিম, পরিচালক হজ সাইফুল ইসলাম, বিমানের এমডি ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদ, আটাবের মহাসচিব ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (হজ) শরাফত জামান উপস্থিত ছিলেন।
বিমান মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রশংসা অর্জন করেছে। আমরা চাই না কোনো ধরনের সমস্যা-সঙ্কট সৃষ্টি হোক। কিন্তু এ বছর দুর্ভাগ্যজনকভাবে কতগুলো ঘটনা ঘটে গেছে। যেগুলো আমাদের হিসেবের মধ্যে ছিল না। যেখানে আমরা প্রতি বছর দেখি প্রথম ১০ দিনে বড় সংখ্যক হজযাত্রী চলে যান। এবার তা সম্ভব হয়নি।’
বিমানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে ভিসা হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৯২ জন, সেখানে হাজী গেছেন ২৯ হাজার ৮৩৯ জন। ১৭ হাজার হাজী যাদের যাওয়ার কথা ছিল তারা যেতে পারেননি। এখন জেদ্দায় আমাদের অবশিষ্ট যে হাজী পরিবহন করতে হবে তার সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার ৭৬১ জন। বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্স মিলে এই পরিবহন করতে হয়। আমার চাই নির্বিঘেœ এ পরিবহন সম্পন্ন হোক।’ প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ই-ভিসা প্রিন্টের ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কোন গ্রæপে ১০০ জন থাকলে সেখানে ১৬ জনের ভিসা না হলে পুরো গ্রæপ ক্যান্সেল (ফ্লাইট) হয়ে যায়। এই সমস্যা দাঁড়িয়ে গেছে।’ ২৬ আগস্ট বিমান ও ২৮ আগস্ট সাউদিয়া এয়ালাইন্স সউদী আরব যাওয়ার শেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে বলেও জানান তিনি। বিমান মন্ত্রী বলেন, এবার সউদী সরকার মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধি করেছে। এতে ৯১টি এজেন্সি নিয়ে সমস্যা হয়। ১৮ হাজার হজযাত্রীর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। যদিও সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আজকের তথ্য হচ্ছে বারকোড তারা পাচ্ছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘হজ প্যাকেজ ঘোষণার বহু পরে সউদী কর্তৃপক্ষ যারা ২০১৫ ও ২০১৬ সালে হজ করেছে তাদের কাছ থেকে ২ হাজার রিয়েল (৪৪ হাজার টাকার কিছু বেশি) বেশি দাবি করেছে। এ ধরনের হজযাত্রীর সংখ্যা ৬ থেকে ৭ হাজারে দাঁড়াবে। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের জন্য তারা এ ব্যবস্থা করেছে।’
‘এ ব্যাপারে আমাদের হজ কাউন্সিলর ও দূতাবাসের পক্ষ থেকে সউদী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা গতকাল বুধবার সব দেশগুলোর সঙ্গে ২ হাজার রিয়েলের বিষয়ে আলোচনায় বসার কথা। এ অর্থ যদি দিতেই হয় তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি তারা যেন এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেয়।’ হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, সউদী আরবে মুয়াল্লেম সংকট নিরসন হয়ে গেছে। জনপ্রতি ১৫ শ’ রিয়ালের মধ্যে ১ হাজার রিয়াল জমা দিয়ে বাকি ৫শ’ রিয়াল হজের আগে পরিশোধ করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে মুয়াল্øেম ঠিক করা হয়েছে। হাব মহাসচিব বলেন, ২০১৫-২০১৬ সালের হজযাত্রীদের এবার জনপ্রতি ২হাজার রিয়াল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যা’কারোই জানা ছিল না। এক প্রশ্নের জবাবে হাব মহাসচিব তসলিম বলেন, সবাই মিলে সমন্বিতভাবে প্রচেষ্টা চালালে হজ ফ্লাইট নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসন করা সম্ভব।

হজযাত্রী প্রতিস্থাপন না দেয়ায় হজ ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে
বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও হাব এর ইসির অন্যতম সদস্য আলহাজ্জ এডভোকেট ড. আব্দুল্লাহ আল-নাসের যাত্রী সঙ্কটের দরুণ হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে হজযাত্রী প্রতিস্থাপন (রিপ্লেসমেন্ট)-এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ধর্মমন্ত্রী ও সচিবের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন,  হজের শেষ পর্যায়ে প্রায় প্রতিটি হজ এজেন্সীর ১০ থেকে ১২ জন হজযাত্রী অসুস্থতা,  টাকা জোগাড় করতে না পারার কারণে হজে যেতে পারছেন না। চলতি বছর ৬শ’ ৩৫টি হজ এজেন্সি’র গড়ে ১২ জন করে হজযাত্রী নানা কারণে হজে যেতে না পারলে তাদের স্থলে প্রাক-নিবন্ধিত প্রকৃত হজযাত্রীদের প্রতিস্থাপন (রিপ্লেসমেন্ট) জরুরী হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ৭ সহস্রাধিক হজযাত্রীর হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব অসমর্থ হজযাত্রীদের প্রতিস্থাপন না দেয়ায় হজ ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। হজ এজেন্সিগুলো এসব হজযাত্রীদের প্রতিস্থাপন করতে না পেরে তাদের হজযাত্রীদের ভিসা লজমেন্ট করছেন না। ফলে হজ ফ্লাইট খালি যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় ৭ সহস্রাধিক হজযাত্রীকে হজে যাওয়ার সুযোগ দেয়া না হলে হজ ব্যবস্থাপনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। এতে এজেন্সিগুলো আর্থিকভাবে কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হবে। তিনি অবিলম্বে হজযাত্রী প্রতিস্থাপন অনুমোদন চালু করার জোর দাবি জানান। অন্যথায় হজ ফ্লাইট বাতিলের কারণে শেষের দিকে হজযাত্রায় আরো বিপর্যয় দেখা দিবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ