Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শ্রীলঙ্কা-চীন চুক্তিতে উদ্বিগ্ন ভারত

| প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : হামবানতোতা চুক্তির শর্ত সংশোধন করে গত ২৯ জুলাই শ্রীলংকা সরকার ও হংকং-ভিত্তিক চায়না মার্চেন্ট পোর্ট হোল্ডিংস লি: (সিএমপি) নতুন চুক্তি সই করেছে। এই চুক্তি নিয়ে ভারতের ইতোমধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই উদ্বেগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এসব প্রতিবেদনের আলোকে ভারতীয় ম্যাগাজিন ‘দি ওয়্যার’ নয়াদিল্লির উদ্বেগের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। খবরে বলা হয়, শর্ত সংশোধন করে চুক্তি স্বাক্ষর করা হলেও তা ভারতের জন্য কোনো সুখকর খবর নয়। তাছাড়া ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে কলম্বোর সামনে এছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিলো না। ফলে চীনের কোম্পানি দিয়ে হামবানতোতার পরিচালনা ভারতও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। চুক্তি নিয়ে শ্রীলংকা সরকার পার্লামেন্টে কোনো বিতর্কে যায়নি। চুক্তিতে নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট যে সুনির্দিষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয় সে বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র অন্ধকারে ছিলো। ২৫ জুলাই শ্রীলংকা মন্ত্রিসভার নোট থেকে দেখা যায়, সংশোধিত চুক্তিতে যে কোনো ধরনের সামরিক তৎপরতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয় যে, এ ধরনের তৎপরতা এবং হামবানতোতা বন্দরের জাতীয় নিরাপত্তা বিধানের একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব শ্রীলংকা সরকারের। এছাড়া বন্দরের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভাল করার জন্য শ্রীলংকা বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌ বাহিনী, পুলিশ বিভাগ ও প্রতিরক্ষা মহন্ত্রালয়ের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি করবে বলেও জানানো হয়। মন্ত্রিসভার নোটে আরো বলা হয় যে, চুক্তিবদ্ধ দুটি কোম্পানি [শ্রীলংকার ও চীনা] নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যেসব জনবল নিয়োগ করবে তাদের সবাইকে শ্রীলংকার নাগরিক হতে হবে। শ্রীলংকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার অশোক কান্ত বলেন, ওবিওআর প্রকল্পে যোগ দিতে ইচ্ছুক সকল উন্নয়নশীল দেশের জন্যই শ্রীলংকায় চীনা তহবিলের প্রকল্পগুলো একটি করে সতর্ক বার্তা। শ্রীলংকায় চীনা তহবিলের প্রকল্পগুলোর একটিরও পরিপূর্ণ অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে চীনা তহবিলের প্রকল্পগুলো নিখাঁদ কৌশলগত কারণে নেয়া হচ্ছে। কোনো বন্দরে যদি বছরে ১৪টি জাহাজ ভিড়ে তা কোনোভাবেই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক নয়। তাই বাণিজ্যিক বিবেচনার বাইরে চীনা বিনিয়োগের অন্য কারণ রয়েছে। গত বছর চীনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের পর অবসরগ্রহণকারী এই কূটনীতিক বলেন, ভারত মহাসাগরে ভারত ও শ্রীলংকার নিরাপত্তা আন্তঃসম্পর্কিত। বর্তমান চুক্তিতে নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া হলেও ভবিষ্যতে তা বদলে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, একসময় পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দর সিঙ্গাপুর পিএসএ’কে দেয়া হয়েছিলো। পরে পিএসএ চীনাদের ডেকে আনে। এখন সেখানে চীনের নৌ স্থাপনা তৈরি করা হবে কিনা সেই আলোচনা শুরু হয়েছে। জওয়াহেরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক পি সহদেবানের মতে, চুক্তিতে নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট ধারা থাকা বা না থাকা উদ্বেগের মূল কারণ নয়। বড় আকারের চীনা ঋণের প্রকল্পগুলো ছোট দেশগুলোকে যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল করে তুলছে সেটাই উদ্বেগের। সহদেবান বলেন, চীনারা সামরিক কূটনীতির পথে যাবে না। তারা কোনো পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠিয়ে প্রভাব জাহির করবে না।অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের এন সত্যমূর্তি মনে করেন যে চলতি বছরের গোড়ার দিকে শ্রীলংকার মন্ত্রিসভায় রদবদলের সময় বন্দর মন্ত্রী অর্জুনা রানাতুঙ্গার বাদ পড়া থেকে বুঝা গিয়েছিলো নিরাপত্তা নিয়ে তার মধ্যে উদ্বেগ ছিলো। শ্রীলংকা বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বন্দর পরিচালনা ও চীনের অংশ ৮০%-এর নীচে নামিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি সোচ্চার ছিলেন। চীনের কাছে অর্থনীতির বাইরেও শ্রীলংকার মূল্য আছে। সর্তমূর্তি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা শক্তিগুলো শ্রীলংকার যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সুস্পষ্ট অবস্থান যতদিন না নেবে ততদিন কলম্বো বেইজিংকে বিক্ষুব্ধ করার ঝুঁকি নেবে না। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণেই ২০১২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আনা প্রস্তাবের পক্ষে ভারত ভোট দিয়েছিলো। আর সেটা ছিলো আন্তর্জাতিক কোনো ফোরামে একটি দেশের বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবে ভারতের প্রথম সমর্থন। সেই প্রস্তাবের পর থেকে শ্রীলংকা চীনকে হারানোর ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। চীনের প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে চললেও উত্তরাঞ্চলের ত্রিনকোমালি বন্দরের দায়িত্ব নেয়ার জন্য বিক্রমসিঙ্ঘে ভারতকে প্ররোচিত করে যাচ্ছেন। গত এপ্রিলে তার নয়াদিল্লি সফরের সময় ১০টি প্রকল্পের ব্যাপারে আমব্রেলা চুক্তিও সই হয়। সহদেবান বলেন, বিক্রমসিঙ্ঘে দেখাতে চাচ্ছেন যে তিনি সবার সঙ্গে সমান সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলো যখন ভারতের প্রভাব বলয়ে থাকবে বলে ধরে নেয়া হয় তখন শ্রীলংকার অর্থনীতির মূল কেন্দ্রে চীনের উপস্থিতি উদ্বেগ সৃষ্টি করতে বাধ্য। ভারত এখনো শ্রীলংকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। ২০১৬ সালে দু’দেশের মধ্যে ৪.৩৮ বিলিয়ন ডলারের বাণ্যিজ্য হয়েছে। উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে ভারত ২.৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ও মঞ্জুরি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ত্রিনকোমালি বন্দরের প্রস্তাব বাস্তবে রূপ নেবে বলে সহদেবান মনে করেন না। কারণ, শ্রীলংকার জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার বিরুদ্ধে ক্রমেই জনক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। ভারতকে ত্রিনকোমালি বন্দর দেয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে যৌথ বিরোধী দল। তারা হামবানতোতা সংলগ্ন বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের বিরুদ্ধেও রাস্তায় নেমেছে। তবে শ্রীলংকায় যাই হোক না কেন আগামী দিনগুলোতে চীন দেশটির প্রধান উন্নয়ন সহায়তা অংশীদার এবং ঋণদাতা হয়ে থাকবে। দি ওয়্যার, ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ