Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গড়ে উঠছে পূর্বাচল নতুন শহর

| প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নতুন এ শহরে থাকছে সবুজ ছায়া ঘেরা পরিবেশবান্ধব নগর জীবনের সকল সুযোগ-সুবিধা পুরোদমে চলছে ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন : ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই শহর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করতে পারবে : রাজধানীর পাশেই এ নতুন শহরটি হওয়াতে কমবে ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যার চাপ


উমর ফারুক আলহাদী : পূর্বাচল নতুন শহরে বসবাস শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে আবাসিক এলাকায় বেশ কিছ ভবন নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবারহের ব্যবস্থা চালু না থাকায় লোকজনের বসবাসের কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। রাজউক জানিয়েছে, এখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। গ্যাসের সংযোগও চালু করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি রাজউকের নিজস্ব উদ্যোগে পানি সরবরাহের জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া গত ডিসেম্বর মাস থেকে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন সেক্টরে ভবন স্থাপনের জন্য নকশার অনুমোদ। নতুন এ শহরে থাকছে সবুজ ছায়া ঘেরা পরিবেশবান্ধব নগর জীবনের সকল সুযোগ-সুবিধা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই শহর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর পাশেই এ নতুন শহরটি হওয়াতে কমবে ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যার চাপ। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করতে পারবে ওউ শহরে।
পূর্বাচল নতুন শহর। রাজধানী ঢাকার পাশে সবুজ ছায়া ঘেরা যেন আরেকটি ঢাকা। এ শহরে বসবাসের জন্য আগামী ৬ মাস পর থেকেই বাড়ি ঘর তৈরী করা সম্ভব হবে। ওই প্রকল্পে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ৬ মাস পর আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য রাজউক নকশা অনুমোদনের কার্যক্রম শুরু করছে। কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে ৩০০ ফিট সড়ক পেরিয়ে বালু নদীর ব্রিজের পর থেকে শুরু হয়েছে এই নতুন শহর। রাজউক নির্মাণাধীন ছয় হাজার একরের এই ছোট্ট শহরকে ৩০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। ওই নতুন শহরের বসবাস শুরু হলে কমে যাবে রাজধানীর জনসংখ্যার চাপ।
আধুনিক এই শহরে আছে তিন, পাঁচ, সাড়ে সাত ও ১০ কাঠার ২৫ হাজার ১৬টি প্লট। এরই মধ্যে মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে ২০ হাজার প্লটের। নতুন শহরের পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে পরিবেশবান্ধব নগর জীবনের সকল সুযোগ-সুবিধা। পূর্বাচল নতুন শহরে ১৫ লাখ মানুষের বসবাস করতে পারবেন। রাজউক জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই শহর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক আবদুল আউয়াল গতকাল ইনকিলাবকে বলেছেন, পূর্বাচলে ২৫ হাজার ১১৫টি আবাসিক এবং সাড়ে ৩ হাজার বাণিজ্যিক ও অন্যান্য প্লট রয়েছে। এসব প্লটে ভবন নির্মাণের জন্য গত ডিসেম্বর থেকে নকশা অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজউক নিজ উদ্যোহে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করছে। প্রথমে ওয়াসা পানি সরবারহের কথা থাকলেও অতিরিক্ত ব্যয় হবে বিধায় এখন ওয়াসা বাদ দিয়ে প্রাথমিকভাবে রাজউক ডিপ-টিউবয়েল স্থাপন এবং পানি সরবরাহের প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া সনাতন পদ্ধতিতেই গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ লাইনও সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে লোকজন আবাসিক এলাকায় বসবাস করতে পারবেন। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা রাজউক দ্রæতগতিতে করে যাচ্ছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা দায়ের করায় তাদের ছাড়পত্র পেতে বিলম্ব হয়েছে। এখন আদালত ছাড়পত্র প্রদানের নির্দেশও দিয়ে দিয়েছে। তারপরেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেতে বিলম্ব হচ্ছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, পূর্বাচল নতুন শহরে ২০১৮ সালের মধ্যে বসবাস করা সম্ভব হবে। পূর্বাচলকে একটি আদর্শ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রিন স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এটি সরকারের একটি বড় সাফল্যের মাইলফলক। পূর্বাচল নতুন শহরে বসবাসকারীদের সেবামূলক সকল সুযোগ-সুবিধা এখানে নিশ্চিত করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, পূর্বাচলের বিদ্যুৎ লাইন হচ্ছে মাটির নিচ দিয়ে। এখানকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সবই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হচ্ছে। আবাসিক জ্বালানির জন্য এলপি গ্যাসের ব্যবস্থা করা হবে।
রাজউকের প্রকল্প শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। এখন শুধু সেবাসংযোগ চালু করার কাজ বাকী আছে। গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ করার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছয় হাজার ২২৭ দশমিক ৩৬ একর জমির ওপর গড়ে তোলা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পটি ১৯৯৬ সালে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয় ২০০৪ সালে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার ৭৮২ দশমিক ১৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের বিভিন্ন ধরনের কাজের মধ্যে জরিপ, পরিকল্পনা, জমি অধিগ্রহণের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ভূমি উন্নয়নের কাজ ৯৫ ভাগ, পূর্বাচল সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ ৯৮ ভাগ, ৩২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণের কাজ ৭৫ ভাগ, কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ প্রায় ১০০ ভাগ, সার্ফেস ড্রেন ও ক্রস ড্রেনের কাজ ৮০ ভাগ, সেন্ট্রাল আইল্যান্ড নির্মাণের কাজ ৬৫ ভাগ, সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ ৮০ ভাগ, ভেতরের রাস্তায় ৬১টি ব্রিজ নির্মাণের কাজ ৭০ ভাগ, নদীর তীর রক্ষার কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। ৪৭৭ দশমিক ২০ একর জমি নিয়ে ৪৩ কিলোমিটার লেক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) আব্দুর রহমান বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী বছর সকল কাজ শেষ হবে। অর্থাৎ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ লাইনের কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে লোকজন বসবাস করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত ২৬ বছর আগে ২০০২ সালে এ প্রকল্পের কাজ করে রাজউক। এর মধ্যে ১৬ বছর গেছে জমি অধিগ্রহণে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ