Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বঙ্গোপসাগরে পানিসীমায় বিশাল ইলিশ ভান্ডারে বিদেশি বর্গী হানা

দাম এখনও আকাশছোঁয়া

| প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : ইলিশ মৌসুমে এখন সর্বত্র ইলিশ। তবুও দাম চড়া। যা গত বছরের তুলনায় কেজিতে ১-৩ শ’ টাকা অতিরিক্ত। কিন্তু ইলিশের ভান্ডারে হানা দিচ্ছে বিদেশি বর্গীরা। বাংলাদেশের পানিসীমার গভীর বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় জেলেদের অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটছে। এ দেশের পানিসীমায় তাদের অবাধ অনুপ্রবেশের কারণে বাংলাদেশী জেলেরা তাদের চাহিদামতো পর্যাপ্ত শিকার করতে পারছে না। ভিনদেশী জেলেরা অত্যাধুনিক জাল ও ট্রলার নিয়ে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে এ দেশের পানিসীমার ইলিশ মাছ। এদিকে আসন্ন ভরা কটালে আরো বেশি ইলিশ আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলেরা এখন আর কেউ বাড়িতে নেই। সবাই নদীতে জাল পেতে ইলিশের অপেক্ষায়। বাজারেও মৌ মৌ ইলিশের গন্ধ। তবে ভরা ইলিশ মৌসুমে বিদেশী চোরা জেলেদের কারণে আমাদের দেশে ইলিশের দাম এখনও আকাশছোঁয়া। ভারতীয় জেলেদের শত শত ফিশিং বহর এখন বাংলাদেশ নৌ সীমানায়। বর্গীদের মতো বঙ্গোপসাগরের বিশাল মৎস্য ভান্ডারে হানা দিচ্ছে দিন-রাত। ফলে দেশীয় নিরীহ জেলেরা পর্যাপ্ত মাছ শিকার করতে পারছে না। এদিকে সুন্দরবন দুবলা ফিশারম্যান সমিতির চেয়ারম্যান ও জেলেদের রক্ষার কিংবদন্তি মেজর (অব:) জিয়া উদ্দিন স¤প্রতি মারা যাওয়ায় এ অঞ্চলের জেলেদের সাহস দুমড়েমুচড়ে গেছে। এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভিনদেশী চোরা জেলে ও তাদের এজেন্টরা। সাগরের সুন্দরবন এলাকায় মাছ শিকাররত জেলে ও তাদের মহাজনদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সুন্দরবন উপক‚লীয় কয়েকটি জেলে পল্লী সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত প্রতি ইংরেজি বছরের জুন-জুলাই মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশী জেলেরা বঙ্গোপসাগরে গভীরে ফেয়ারওয়ে বয়া, ট্রলার ও নৌকায় করে বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ ধরে থাকে। এ সময় সাগরের পানি শান্ত থাকায় এটা জেলেদের কাছে মাছ ধরার উপযুক্ত মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত। তবে ইলিশ মৌসুম থাকায় জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে জেলেরা ঝুঁকি নিয়েও মাছ ধরে থাকে। এই মাছ ধরার মৌসুমে বিদেশী বিভিন্ন ট্রলার বিশেষ করে ভারতীয় ট্রলার বাংলাদেশের পানিসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করতে আসে। ভারতীয় ছাড়াও পার্শ্ববর্তী থাইল্যান্ড, মিয়ানমারের জেলেরা অবৈধভাবে বঙ্গোপসাগরে অনুপ্রবেশ করছে, এ দেশের পানিসীমায় সাগরে রক্ষিত বিশাল মৎস্য সম্পদের লোভে। মাছ ধরার আধুনিক সরাঞ্জাম ও বিশাল ট্রলারে করে বিদেশী জেলেরা মাছ ধরার কারণে এদেশীয় জেলেরা তাদের তুলনায় মাছ পাচ্ছে অনেক কম। অধিকাংশ সময় এসব বিদেশী বিশেষ করে ভারতীয় জেলেরা প্রকাশ্যে সাগর এলাকায় অনুপ্রবেশ করে এ দেশের মাছ ও মাছ ধরার সরঞ্জাম লুটপাট করছে। বাংলাদেশী জেলেরা বিদেশী জেলেদের মাছ শিকারের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতীয় জেলেরা এদেশের জেলেদের মাছ ধরার ট্রলার ও চাল-ডাল লুটপাট করতে দ্বিধাবোধ করে না। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে মাঝে মধ্যে কিছু বিদেশী ট্রলার ধরা পড়লেও তার সংখ্যা কম। বিদেশী জেলেরা তাদের ট্রলারে বসে অত্যাধুনিক দুরবীনের মাধ্যমে দূর থেকে বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে আসতে দেখলেই দ্রæত ইঞ্জিন চালিয়ে পালিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, ভারতীয় জেলেদের এদেশের পানিসীমায় অনুপ্রবেশ করতে সেদেশের নৌবাহিনী সহযোগিতা করে থাকে। অনেক সময় ভারতীয় নৌবাহিনী বাংলাদেশের পানিসীমায় প্রবেশ করে এদেশের জেলেদের ধরে নিয়ে যায় বলেও জেলেরা অভিযোগ করেছেন। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এলাকায় মৎস্য সম্পদের রয়েছে বিশাল ভান্ডার। বিদেশী বিশেষ করে ভারতীয় জেলেরা এ মৎস্য ভান্ডারের লোভে এলাকায় অনুপ্রবেশ করে সহজেই বিপুল পরিমাণ মাছ শিকার করতে পারে। আর এ কারণে শীত মৌসুমেও ভারতীয় জেলেরা অবাধে সাগরের এদেশের পানিসীমায় অনুপ্রবেশ করে শিকারের নামে মাছ লুটপাট করে নিয়ে যায়। বিদেশে মাছ লুটপাটের কারণে বাংলাদেশের মৎস্য ভান্ডারে ঘাটতি দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দুবলারচর সংলগ্ন আলোর কোল মাঝেরকিল­া দুবলা, মানিকখালী, মেহের আলী চরসহ কয়েকটি জেলে পল্লীর জেলেরা জানান, এবার মৌসুমের শুরুতেই সাগরে গত বছরের মতো ইলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অবস্থা খারাপও নয়। কিন্তু ভারতীয় জেলেদের অপতৎপরতার কারণে মাছ শিকার ব্যাহত হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিদেশী জেলেরা ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের অভিযোগে ১৯৮৩ সালের সামুদ্রিক ও মৎস্য অধ্যাদেশের ২২ ধারায় থানায় মামলা রুজু করে কারাগারে পাঠানো হয়। বিচারের সময় বিদেশী জেলেরা সাধারণত বলে থাকে, দিক ভুল করে এদেশে চলে আশায় ক্ষমাপ্রার্থী। ধরা পড়ার পর সাজার মেয়াদ কম হওয়ার কারণে অনেক বিদেশী এদেশে মাছ শিকারে উৎসাহিত হয় বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।
এছাড়া গত কয়েক বছর জাটকা নিধনে কড়াকড়ি থাকায় এ অঞ্চলে বড় ইলিশের যথেষ্ট দেখা মেলে। তাছাড়া গত বছর ইলিশের দামও ছিল নাগালের মধ্যে। সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ইলিশের স্বাদ নিতে পেরেছিল। কিন্তু এবার উপক‚লীয় জেলে পল্ল­ী দুবলারচরে মেহের আলীর টেকের জেলেদের মহাজন মো: জাকির হোসেন ও বাচ্চু আলী বেগসহ কয়েকজন ট্রলার মালিকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ডাকাতের উৎপাত কম। তবে কয়েকটি দস্যু বাহিনী এখনও সুন্দরবন ও সাগরে রয়েছে। এছাড়া বিদেশী জেলেরা অবস্থা বুঝে কখনও কখনও ডাকাতির রূপ ধারণ করে। তারা নিরীহ বাংলাদেশী জেলেদের মারধর করে, ঘাট বেদখল করে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

 



 

Show all comments
  • বিপ্লব ২ আগস্ট, ২০১৭, ১:২৮ এএম says : 0
    আমাদের জলসীমায় আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • S. Anwar ২ আগস্ট, ২০১৭, ৮:৩৯ এএম says : 0
    ভারতীয় বর্গীরা আমাদের জলসীমায় এসে আমাদের ইলিশ সাবার করছে। আর আমাদের নৌ-বাহিনী ও কোস্ট গার্ডরা স্থলসীমায় বসে বসে সরকারী খাবার সাবার করছে। তাইনা.???
    Total Reply(0) Reply
  • Reza Rahman ২ আগস্ট, ২০১৭, ১০:৫৫ এএম says : 1
    Jodi onara modi'r desher lok hoye thake tahole onaderke bideshi borgi bola thik hobe na.
    Total Reply(0) Reply
  • Sohel Rana ২ আগস্ট, ২০১৭, ১০:৫৬ এএম says : 2
    এ আর নতুন কি?
    Total Reply(0) Reply
  • সাঈম ৫ আগস্ট, ২০১৭, ৭:৩৩ এএম says : 0
    বাংলাদেশি জেলেরা সাগরে না গেলেই হয়। আমাদের অনুন্নত সরঞ্জাম, দূর্বল নৌ বাহীনির কারনে বিদেশী জেলেদের কিছু করা সম্ভব না। তাই ওরা মাছ নিয়ে যাক। আমরা পরে ওদের থেকে আমদানি করব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইলিশ

৫ মার্চ, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ