Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ আন্দোলন ব্যর্থ কলকাতায়

| প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, কন্যা ও পুত্র-শিশুদের সংখ্যার অনুপাত বা যে ‘সেক্স রেশিও’ দিয়ে একটা এলাকায় মেয়ে সন্তানের মর্যাদার ধারণা পাওয়া যায় - সেই সূচকে সারা দেশের মধ্যে কলকাতার পারফরম্যান্স সবচেয়ে খারাপ।
কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু-কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী ভারতের পার্লামেন্টে এই তথ্য দিয়ে দাবি করেছেন - পশ্চিমবঙ্গ সরকার দিল্লির ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্বীকার করেছে বলেই আজ কলকাতার এই হাল। রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ, কলকাতায় নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি এনজিও কিন্তু বলছে, এই পরিসংখ্যানে তারা আদৌ বিস্মিত নন।
কলকাতাকে অনেকেই মনে করেন ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী - সেখানে নারীর সম্মান নিয়েও শহরের অনেক গর্ব। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার পার্লামেন্টে যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে কন্যা-ভ্রূণ হত্যার জন্য হরিয়ানা বা রাজস্থানের যে জেলাগুলোর নাম নিয়মিত খবরে আসত, কলকাতায় সেক্স রেশিও-র হাল আসলে তার চেয়েও খারাপ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধী জানান, ‘কলকাতায় যেখানে প্রতি হাজার ছেলে সন্তান-পিছু মেয়েদের সংখ্যা ছিল ১০২২ - এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটাই কমে হয়েছে ৮৯৮। দেখা যাচ্ছে, দেশের যে ১৬১টা জেলায় সরকার এই কর্মসূচি নিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এই কলকাতাতেই’।
পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সরকার যে কেন্দ্রের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ রূপায়নে রাজি হচ্ছে না - সেটাকেই এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন মানেকা গান্ধী। তিনি পরিষ্কার বলছেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অনীহাই কলকাতায় বিপজ্জনকভাবে কন্যাসন্তানের হার কমিয়ে আনছে। মেয়েদের অবস্থার উন্নয়নে রাজ্য সরকারের নিজস্ব যে কন্যাশ্রী প্রকল্প আছে, সেটা কার্যকরী হলেও মনে রাখতে হবে অনুরূপ প্রকল্প মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের অনেক রাজ্যেই আছে’।
পার্লামেন্টেই মন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন পুরুলিয়া থেকে নির্বাচিত তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি মৃগাঙ্ক মাহাতো।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন, মমতা ব্যানার্জির অনুসৃত কন্যাশ্রী প্রকল্প আসলে রাজ্যের মেয়েদের জন্য অনেক সদর্থক ভূমিকা রাখতে পারছে, আর সে কারণেই তা স¤প্রতি দ্য হেগে জাতিসংঘের স্বীকৃতিও পেয়েছে। তার কথায়, ‘জাতিসংঘের যারা অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছেন তারা তো আর বোকাসোকা লোক নন, ৬২টা দেশের ৮২০টা প্রকল্প থেকে বাছাই করে তারা এমনি এমনিই কন্যাশ্রীকে পুরস্কার দিলেন? আসলে হিন্দিতে যেটা বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, বাংলাতে সেটাই কিন্তু কন্যাশ্রী - দুটো প্রকল্পের ভাবনাটা একই’।
‘আমাদের পুরুলিয়া জেলারই একটা বøকে কন্যাশ্রী অনুসরণ করে মেয়েদের সাক্ষরতার হার আট শতাংশ থেকে বেড়ে ষাট-সত্তর শতাংশে পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রীও সেটাই চান, মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়িয়ে তাদের অল্প বয়সে বিয়েটা আটকানো। কিন্তু কেন্দ্র আসলে চায় না এই কন্যাশ্রী-তে ফোকাস হোক’, বলছিলেন মি মাহাতো।
কিন্তু কলকাতার সেক্স রেশিও নিয়ে পার্লামেন্টে কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য সঠিক কি না, সে ব্যাপারে মি মাহাতো কিছু বলতে পারেননি। যদিও স্বাধীনা নামে শহরের একটি প্রথম সারির এনজিওর কোঅর্ডিনেটর শ্রীচন্দ্রা ভেঙ্কটরামনের মতে এটা সঠিক হলেও তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তিনি বলছেন, ‘কলকাতায় আসলে নানা ধরনের লোকের যাতায়াত - একটা মাইগ্রেশন চলতেই থাকে। ফলে এই যে পরিসংখ্যানটা আমরা দেখছি এটাকে পুরোপুরি বাঙালিসর্বস্ব বলা যাবে না, এটা একটা মিশ্র সংস্কৃতির হিসেব’।
‘তবে এটাও ঠিক, কলকাতা শহরে নারী ও পুরুষকে মোটামুটি এক দৃষ্টিতে দেখার যে একটা সাংস্কৃতিক আবরণ ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আবরণ কিন্তু ক্রমশ খসে পড়ছে’।
নারী নির্যাতন ও কন্যা সন্তানকে অনাদরের ঘটনা যে কলকাতাতেও মোটেই বিরল নয় - মিস ভেঙ্কটরামনের প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতাও কিন্তু সে কথাই বলে।
‘আমরা রোজ বিপদে পড়া মেয়েদের কাছ থেকে যেসব ফোন পাই, তার বেশির ভাগই কিন্তু শহরের। আর তাদের যে ধরনের পারিবারিক হিংসার সম্মুখীন হতে হয় - তার সঙ্গে এই জেন্ডার রেশিওরও বোধহয় একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।
‘কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এই মেয়েরা এসে আমাদের বলে তাদের একটি কন্যাসন্তান আছে - আর সেই মেয়েটির জন্মকে কেন্দ্র করে পরিবারে অশান্তি লেগেই আছে’, বলছিলেন মিস ভেঙ্কটরামন। কোন সরকারের প্রকল্প মেয়েদের জন্য বেশি ভাল - তাই নিয়ে কেন্দ্র আর রাজ্য যখন লড়ছে, তারই মধ্যে কিন্তু কলকাতা শহরে হু হু করে কমছে কন্যাশিশুর সংখ্যা।
হরিয়ানার কার্নাল বা উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদেও যখন মেয়েদের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী, তখন কলকাতাতেই অকালে ঝরে পড়ছে কন্যা-শিশুরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ