Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বগুড়ায় তরুনী ধর্ষণ মামলায় তুফানকে শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার

| প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আরো গ্রেফতার ৩ জন
মহসিন রাজু , বগুড়া থেকে : বগুড়ায় সদ্য এসএসসি পাশ তরুনী সোনালী আকতার (১৭) ধর্ষণও তার মা’ মুন্নি বেগমকে শারীরিক নির্যাতনের পর চুল কেটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঘটনায় অভিযুক্ত শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকারকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
পুলিশ তুফান ও তার অপর দুই সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ বগুড়া সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। উদিচীসহ অন্য দুটি সংগঠন দোষীদের শাস্তির দাবীতে পালন করেছে মানববন্ধন।
এদিকে তরুণী সোনালী আকতার ও তার মা মুন্নি বেগমের উপর বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনায় বগুড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে বগুড়া এডিএম আব্দুস সামাদকে। কমিটির অন্য দু’জন সদস্য হলেন বগুড়ার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম এবং বগুড়া জেলা সমাজ সেবা অফিসার শহিদুল ইসলাম।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম¥দ নুরে আলম সিদ্দিকী গতকাল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোনালী আকতার ও তার মা মুন্নি বেগমের সাথে কথা বলে তাদেরকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তিনি জানান সরকারি ভাবে সোনালী আকতারের লেখাপড়ার খরচ বহন করবে ।
এদিকে সোনালী আকতার ধর্ষণ ও নির্যাতন মামলার অপর ৬ আসামী তুফান সরকারের স্ত্রী আশা আকতার, আশা আকতারের বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি ও তুফানের শ্বাশুড়ী রুমি খাতুনসহ অপর তিন জন এজাহার নামীয় আসামী এখনও অধরা রয়েছেন। তাদের ধরার জন্য পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার ওসি এমদাদ হোসেন।
কে এই তুফান সরকার ?
সোনালী আকতার ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারকৃত বগুড়া শহর শ্রমিকলীগের আহবায়ক তুফান সরকার বগুড়া শহরে গত কিছুদিন ধরে বহুল আলোচিত হঠাৎ কোটিপতি বনে যাওয়া এক অবাধ্য উচ্ছৃঙ্খল দুঃশ্চরিত্র তরুনের নাম। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, জমি দখল, বিচার সালিশে পক্ষপাতিত্ব এবং সব সমস্যার সমাধান করে দেবার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করাই তার দিন রাতের নেশা।
এই মুহূর্তে তুফান সরকার কি পরিমান টাকার মালিক তা বোধ হয় তুফান সরকারের ব্যকিÍগত ম্যানেজার এবং সে নিজেও জানে না। বগুড়া শহরে কোথাও দোকান পাট, ব্যবসা বাণিজ্য বা জমি জিরাতে বিরোধ হলেই সে খবর সোর্স মারফত পৌঁছে যায় তুফান সরকারের দরবারে। খবর অনুযায়ী তুফান সরকার বিবাদমান দুই পক্ষকে ডেকে নিয়ে দু’জনকে অল্প কিছু টাকা দিয়ে সন্তুষ্ট করে নিজেই সেগুলো দখল করে নেয়। এই ধরনের ঘটনা বগুড়া শহরে অনেক। কিন্তু প্রশাসন ও পুলিশের সাথে তার আর্থিক লেনদেনের কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে থানা পুলিশ বা কোর্টে যায়না। ফলে মাত্র ২৮ বছর বয়সী তুফান সরকার বেপরোয়া উচ্ছৃঙ্খল ও দুর্বিনীত হয়ে উঠেছে। এখন সে তার বড় ভাই বগুড়া জেলা পরিবহন জগতের গডফাদার যুবলীগ নেতা মতিন সরকারকেও মানে না বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছে।
তুফানের আয়ের প্রধান খাত
মাদক ব্যবসায় পৃষ্টপোষকতা, অর্থ বিনিয়োগ, জায়গা-জমি জবর দখল, তদবির, ইত্যাদির মাধ্যমে তুফানের লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন হলেও দৃশ্যত তার প্রধান আয়ের খাত হলো বগুড়া পৌর এলাকায় পরিচালিত আনুমানিক ১৫-২০ হাজার ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা। এছাড়া প্রতিদিন প্রতিটি রিক্সা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চালাতে ৩০ টাকা করে জমা দিয়ে শহরের মোড়ে মোড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তুফান সরকারের ক্যাডারদের কাছ থেকে স্লিপ নিতে হয়। কোন রিক্সাওয়ালা তুফান সরকারের স্লিপ ছাড়া শহরে রিক্সা চালালে রিক্সা চালককে আটক করে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা জরিমানা আদায় সেই সাথে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। মুলত অটোরিক্সা খাত থেকেই প্রতিদিন তুফান সরকারের আয় আসে সাড়ে চার লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা।
বিয়েতেই কি সমাধান ?
গত শুক্রবার সোনালী আকতার ও তার মায়ের উপর বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনাটি বগুড়া পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানের কাছে পৌঁছালে তিনি গুরুত্বের সাথে ঘটনাটি দেখার জন্য বগুড়া সদরের সার্কেল এএসপি এবং বগুড়া সদর থানার ওসিকে বলেন। এসপির নির্দেশে শুক্রবার রাতেই বিপুল সংখ্যক পুলিশের একটি দল তুফান সরকারের বাড়ি ঘেরাও করলে স্থানীয় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। একটি সুত্র জানায়, পুলিশ যাতে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে বরং নির্যাতিতা সোনালী আকতারের সাথে বিয়ে দিয়ে ঘটনাটি নিষ্পত্তি করা হয়। এই জন্য রাতেই বিভিন্ন মহলের মুখ বন্ধ করার জন্য বিতরণ করা হয় নগদ ২০ লাখ টাকা। একই সুত্রে পরের দিন শনিবার এবং গতকাল রবিবার তুফান সরকারের পরিবারের সদস্যরা সোনালী আকতারের সাথে তুফান সরকারের বিয়ে দিয়ে ঘটনাটি নিষ্পত্তির জন্য তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তবে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ নুরে আলম সিদ্দিকী এবং পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানের কঠোর ও পেশাদারী মনোভাবের কাছে এই প্রস্তাবকারীদের সকল প্রয়াস ভন্ডুল হয়ে গেছে বলে জানা যায়।
তুফানকে বহিস্কার ও মানববন্ধন
শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকার ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতারের পরে আওয়ামীলীগ হাই কমান্ডের নির্দেশে শ্রমিক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনাটি সত্য বলে স্বীকার করেছেন শ্রমিকলীগ বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সামসউদ্দিন শেখ হেলাল। এদিকে তুফান ও তার সহযোগিদের দৃষ্ঠান্ত মুলক শাস্তির দাবীতে বগুড়ায় উদীচী, সনাক ও সুপ্র নামের তিন সংগঠন সহ প্রথমআলো বন্ধু সভার উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেছে।
পাবনা থেকে রুমকি ও রুমি গ্রেফতার
গতকাল রোববার রাত সোয়া ৮টায় বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রুমকি ও তুফানের শাশুড়ী রুমি খাতুনকে পাবনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তুফানের স্ত্রী আশাকে গ্রেফতারে কয়েকটি টিম মাঠে নেমেছে। আশা করছি দ্রুতই সেও গ্রেফতার হবে।



 

Show all comments
  • S. Anwar ১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৪৮ পিএম says : 0
    শুধু কি বহিষ্কারেই শেষ? জ্যান্ত পুঁতে ফেলুন না কেন এসমস্ত কুত্তা স্বভাবের কুলঙ্গার গুলোকে? এরা নাকি আবার দলীয় নেতাও.!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ