Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কদর থেকেও অর্থসঙ্কটে ভুগছে বাঁশ-বেত শিল্প

শিল্পের প্রসার বাড়তে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নুরুল আবছার চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে : রাঙ্গুনিয়ায় প্রায় দেড় হাজার কারিগর বাঁশ শিল্প পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। বাঁশ-বেত দিয়ে নানা ধরনের পণ্য তৈরি ও বিক্রি করে শত শত পরিবারের জীবন-জীবিকা চলছে। নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে এ কাজে যোগ দেওয়ায় প্রতিটি পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। বাঁশ-বেতের সঙ্গে তাঁদের নিবিড় সম্পর্ক। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই শুরু হয় বাঁশ কাটা, বেত তৈরি ও নানা রকম পণ্য তৈরির কাজ। বাঁশ-বেতের তীক্ষè ফলায় কখনো কখনো ক্ষত হয় হাতের তালু। সেই ক্ষত একসময় শুকিয়ে যায়, আবার হয়। এই চক্রের মাঝে পড়ে আছেন দুই হাজার নারী-পুরুষ। স্বল্প পুঁজি নিয়ে এসব শিল্পে কাজ করে ঘরে বসে টাকা আয়ের পথ পেয়েছে তারা। বাঁশের তৈরী সরঞ্জাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে শ্রমিকরা। সপ্তাহের হাটের দিন এসব পণ্য বাজারে বিক্রি করা হয়। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ৩০০-৪০০ টাকা মজুরী পান। রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট বাজার কলোনী এলাকায় বাঁশ শিল্প কারিগর মো. নুরুন নবী জানায়, বাঁশ শিল্প বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয়। বাঁশ ও বেতের তৈরী জিনিসপত্র ঘরের মধ্যে সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দেয়। রানীরহাট ইছামতি ব্রিজের নিচে কাজের শ্রমিক মো. শাহাদাৎ জানান, বাঁশের চাহিদা থাকলেও রাঙ্গুনিয়ায় তেমন চাষ হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পরিবহন করে কাজ করছি। স্থানীয় ভাবে বাঁশের তেমন উৎপাদন নেই। তাই বাইরে থেকে বাঁশ কিনলে দাম বেশী পড়ে। একটি বাঁশের দাম ৫০-১০০ টাকা ক্রয় করতে হয়। এ বাঁশ দিয়ে নানা আইটেম তৈরী করা হয়।
উপজেলার পৌরসভা, রাজানগর, ইসলামপুর, পদুয়া, চন্দ্রঘোনা, হোছনাবাদ, পারুয়া ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন এলাকায় ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ বংশ পরম্পরায় বাঁশ ও বেতের চাটাই, টুকরি, ডালা, কুলা, ঝাকা, ডরি, পারন, টাইল, উকা, খালুই ইত্যাদি তৈরি করে আসছেন। সংসারের গতি সচল রাখতে অনেক স্থানে নারীরাই এই কাজের ভার কাঁধে নিয়েছেন। উপজেলায় বাঁশ-বেত শিল্পীরা সম্ভাবনাময় এ পেশায় কাজ করলেও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আর প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পেলে এ শিল্পের প্রসার বাড়বে। পৌরসভার নোয়াগাঁও গ্রামের বয়োবৃদ্ধরা ঘরে ও আঙিনায় বসে ডরি-পারন, ধুছইন, টুকরি ইত্যাদি তৈরি করে। বাড়ির ছোটরাও পড়ালেখার ফাঁকে এ কাজে সহায়তা করে। শ্রমিকরা জানান, আগের মত এখন বাঁশ পাওয়া যায় না। সরকারি সাহায্য পেলে এ শিল্পকে আরও বড় আকারে করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে অনেকের কর্ম সংস্থান হবে। বাঁশ বেতের তৈরী সামগ্রী বাজারে প্রচুর চাহিদা আছে। সরকার এগিয়ে আসলে এ শিল্পকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের শক্তিদাতা হিসাবে দাড় করানো সম্ভব। বাঁশ-বেত দিয়ে সামগ্রী তৈরী করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৭/৮ হাজার টাকা উপার্জন করে। তারা এ শিল্পকে বড় আকারে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে কোন রকমে চলছে তাদের ব্যবসা। সরকারি সাহায্য পেলে এখানে অনেক কর্ম সংস্থান হবে, ঘুচবে বেকার সমস্যা, ফিরে আসবে গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাঁশ-বেত শিল্প
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ