Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যান্ত্রিক অক্ষমতা : বন্দরে জাহাজ জট বাড়ছেই

| প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম


চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার জট এবং বহির্নোঙরে জাহাজ জটের বিড়ম্বনা বেড়েই চলেছে। গত তিনমাস ধরে বন্দরে জাহাজ জট তীব্র আকার ধারণ করলেও পরিস্থিতি আরো অনেক আগে থেকেই জটিল আকার ধারণ করতে শুরু করেছিল। বন্দরের জাহাজ নিয়ে গত বছরও অনেক লেখালেখি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যান্ত্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে প্রয়োজনীয় ভারী ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহের জরুরী উদ্যোগ গ্রহনের কথা বললেও আদতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সম্প্রতি আরো দু’টি ক্রেন অচল হয়ে পড়ায় বন্দরে পণ্য লোড আনলোড করার সক্ষমতা আরো কমে গেছে। এহেন বাস্তবতায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দর দিনরাত ২৪ ঘন্টা সচল রাখার তাগিদ দিয়েছেন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বন্দরকে আরো সচল ও সক্ষম করে তোলার কথা বলা হলেও বন্দরের জন্য প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সময়ক্ষেপণের কারণেই দেশের বৃহত্তম ও প্রধান সমুদ্র বন্দরটি নানামুখী সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের আমদানী-রফতানী, বৈদেশিক বিনিয়োগসহ ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রধান গেইটওয়ে। এই বন্দরের যান্ত্রিক স্বল্পতা, প্রযুক্তিগত অক্ষমতা ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা জিইয়ে রেখে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। দেশে বন্যা পরিস্থিতিতে জরুরী ভিত্তিতে বিদেশ থেকে চাল আমদানী করা হচ্ছে। এ সময় বর্হিনোঙর থেকে একেকটি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে ১০-১২দিন পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। বর্হিনোঙ্গরে বড়সড় জাহাজ জট লেগেই আছে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৭টি জাহাজকে ভেড়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে হচ্ছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানী-রফতানী ও জাহাজ গমনাগমনের হার অনুসারে যে প্রযুক্তিগত ও যান্ত্রিক সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন বর্তমান তার ঘাটতি প্রায় ৭০ ভাগ। একদিনে বা দু’এক মাসেই এ অবস্থা তৈরী হয়নি। বন্দরের উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দীর্ঘসুত্রিতার ফলেই আজকের অবস্থা তৈরী হয়েছে। জানা যায়, বন্দরে পণ্য খালাসে অস্বাভাবিক বিলম্বের কারণে আমদানীকারকদের প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ৮০ কোটি টাক। বিশেষত: নিত্যপণ্য আমদানীর উপর অহেতুক বাড়তি খরচের বোঝা প্রকারান্তরে সাধারণ ভোক্তাদেরই বহন করতে হয়। অন্যদিকে তৈরী পোশাক রফতানীকারকরা চট্টগ্রাম বন্দরের চলমান অবস্থাকে ‘মহাবিপর্যয়কর’ বলেঅভিহিত করেছেন। খাদ্যপন্য, বিভিন্ন শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানী-রফতানীর অন্যতম খাতই হচ্ছে তৈরী পোশাক খাত। একদিকে এই সেক্টরের জন্য আমদানীকৃত যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল খালাসে বিলম্বের কারনে শিল্পমালিকদের বাড়তি খরচের বোঝা বহন করতে হচ্ছে অন্যদিকে জাহাজ জটে শিপমেন্ট জটিলতার কারণেও রফতানীকারকদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের তৈরী পোশাক রফতানী খাতের বিনিয়োগ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ ও শিল্পায়ণের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি ক্রমশ বৈদেশিক বাণিজ্য নির্ভর হচ্ছে। এমনকি বৈদেশিক রফতানী বাণিজ্যের ডাইভার্সিফিকেশন বা বহুমুখীকরণের প্রস্তাবনাও ক্রমে বাস্তবতা লাভ করছে। যেখানে বন্দরের সক্ষমতার অভাবে আমাদের আমদানী-রফতানী বাণিজ্য বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, সেখানে ভারতের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর উন্মুক্ত করে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। একটি গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলার প্রস্তাব দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হলেও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে তা আলোর মুখ দেখছেনা। এহেন বাস্তবতায় দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরটির সক্ষমতা বাড়িয়ে যুগোপযোগি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত করার কোন বিকল্প নেই। ভূরাজনৈতিক অবস্থানগত কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও অনেক। বন্দরের উন্নয়নে গৃহিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ত্বরিৎ উদ্যোগ গ্রহন জরুরী হলেও বছরের পর বছর ধরে তাৎ ঝুলে থাকার বাস্তবতা বিষ্ময়কর। গত এক দশকে বন্দরে পন্য উঠানামার হার দ্বিগুন হলেও এ সময়ে বন্দরের জন্য নতুন কোন জেটি নির্মান করা হয়নি। বন্দরে জাহাজ জট প্রকট আকার ধারণের প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি জরুরী বৈঠকে মিলিত হয়ে বন্দরের উন্নয়নে জরুরী পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা যায়। এ লক্ষ্যে আগামী ৩১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষও ইতিমধ্যে বন্দরের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করেছেন একাধিক ক্রেন সংগ্রহের জরুরী পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে। যান্ত্রিক স্বল্পতা দূর করা ছাড়াও বন্দর পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং বিভিন্ন সংস্থার কাজে সমন্বয়হীনতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যান্ত্রিক অক্ষমতা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ