Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নারীবান্ধব নয় স্বাস্থ্যসেবা

নেই পৃথক টয়লেট, নারী সেবাপ্রদানকারী এবং মাতৃদুগ্ধপানের স্থান

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : দেশের স্বাস্থ্য সেবা নারী বান্ধব নয়। স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে পদে পদে বিপাকে নারীরা। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যখাতে বর্তমান সরকারের সাফল্যের অন্যতম নাম কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাপ্রদানকারীরা সঠিকভাবে রেফার্ড করতে পারে না। গ্রামীণ নারী স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম নাম এই ক্লিনিকের বেশিরভাগেরই নারীদের জন্য নেই পৃথক টয়লেট, নারী সেবা প্রদানকারী এবং মাতৃদুগ্ধপানের জন্য নেই আলাদা কোন স্থান। যদিও অধিকাংশ হাসপাতালেরই একই অবস্থা। একই সঙ্গে দেশের গণসেবাগুলো জেন্ডার সংবেদনশীল নয়। বেসরকারি একশনএইড ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের গবেষণায় এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
নগরায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশের গণসেবার মানও উন্নত এবং নারী বান্ধব হবে এটাই প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ যা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক সিনিয়র গবেষক প্রতিমা পাল মজুমদার বলেন, স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের অনেক আইন ও নীতি আছে। তবে তার বাস্তবায়ন হয় না বলেই নারী জনসেবার অবস্থা নাজুক। এছাড়া যারা সেবা দেন তারা আন্তরিক না। আবার যারা সেবা দেয়ার জন্য সরকারী প্রতিষ্ঠানে বসে আছেন তাদের জেন্ডার নিয়ে ধারণা কম। তাই নারীরা সমস্যায় বেশি পড়েন।
দেশের অধিকাংশ নারী সেবা নিতে গেলেও পদে পদে তাদেরকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। হাসপাতালে পরিচালিত ধারণাগত জরিপে দেখা গেছে- ৪০ দশমিক ২ ভাগ নারী সেবাগ্রহণকারীরা বলেন যে, তারা সেবাপ্রদানকারীদের থেকে দুঃব্যবহারের শিকার হন। একই সঙ্গে শতকরা ১৫ জন মনে করেন, কোননাকোনভাবে তারা শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। আর এসব কারনে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন দেশের প্রান্তিক মানুষগুলো।
সূত্র মতে, দেশের জাতীয় বাজেটে এখনও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেধে দেয়া মান থেকে এখনও আমাদের বরাদ্দ ৫শতাংশ কম। স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু বাৎসরিক গড় বরাদ্দ ২৭ ডলার যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় গড় মাথাপিছু বরাদ্দের থেকে যা ২৫শতাংশ কম। এটার সাথে যুক্ত হয়েছে দক্ষ পেশাজীবীর স্বল্পতা, চিকিৎসক-নার্সের নিম্ন অনুপাত এবং প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসকরে সংখ্যা। এছাড়া যুক্ত হয়েছে নাজুক শাসন ব্যবস্থা। এই সার্বিক দুরাবস্থার শিকার হচ্ছেন প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী।
সূত্র মতে, একশনএইড ও বিভিন্ন স্থানীয় উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক-এর সেবার মান উন্নয়ন ও জনগণের সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে, স্কোরকার্ডের মতো সহজ টুলগুলো ব্যবহার করে দেখা গেছে- এখনও কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা নারীবান্ধব না। রেফারেল সেবা নিয়ে নির্দিষ্ট এলাকার সেবাগ্রহণকারীরা সন্তুষ্ট নন। কারণ এখনও পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাপ্রদানকারীগণ সঠিকভাবে রেফার্ড করতে পারেন না। অথচ এই সেবা কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি বড় সেবা।
তাদের এই গবেষণা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত একশন রিসার্চধর্মী গবেষণা। গবেষণায় পর্যবেক্ষণকারী ক্লিনিকগুলোয় দেখা গেছে যে, এগুলোর বেশিরভাগেরই নারীদের জন্য আলাদা কোন টয়লেট নাই, নারীদের জন্য নারী সেবাপ্রদানকারী নাই। এমনকি মাতৃদুগ্ধপানের আলাদা কোন স্থান নাই। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে -এখন মাতৃদুগ্ধপ্রদানকারী মায়েদের অনেকেই ক্লিনিকে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাই দেশের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা লক্ষ্য ৩ ও ৫ অর্জনের বাস্তবতা অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ।
গবেষণায় উঠে এসেছে- নারীদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা না থাকাসহ বিবিণœ কারনে অনেক মা তার শিশুকে টিকাদানে নিয়ে যেতে শঙ্কায় থাকেন। একইভাবে কোন হাসপাতালে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে এসব সুরহার জন্যও নারীদের আলাদা কোন ব্যবস্থা নেই।
একশনএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নুজহাত জেবিন বলেন, চিকিৎসা, নিরাপত্তার বিষয়ে গণসেবা নিতে গিয়ে নানা ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে- নারীরা সমস্যায় বেশি পড়েন। মূলত: জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে বাজেট বরাদ্দের অভাব, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে এমন অবস্থা বলে উল্লেখ করেন তিনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, স্বাস্থ্য সেবায় বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। সবকিছু মন্ত্রণালয়ের হাতে বা কেন্দ্রের হাতে। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। উপজেলাগুলোকে যদি ওখানকার কাজের জন্য ক্ষমতা দেয়া হতো তাহলে এ ধরণের সমস্যা দেখা দিতো না বলে উল্লেখ করেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
নারীরা স্বাস্থ্যসেবায় পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল ইসলাম খান ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আছে, তাই নারী স্বাস্থ্যসেবায় আমরা এখনো অনেকটা পিছিয়ে। তবে বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে আস্তে আস্তে এ থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে। তিনি বলেন, গ্রামীণ কমিউিনটি ক্লিনিকগুলো পুরোপুরি হাসপাতাল নয়; তাই নারীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থাও নেই। ওখানে এলাকার লোকজন গিয়ে জরুরী সেবা গ্রহণ করে চলে আসে। তবে দিনে দিনে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন হচ্ছে। পাশাপাশি নারীবান্ধবও করার চেষ্টা চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্যসেবা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ