Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দাম ভাল পেলে এবারও কৃষকের মুখে ফুটবে সুখের হাসি

দামুড়হুদায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার আবাদ

প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : চলতি রবি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ভুট্টা চাষে বিপ্লব ঘটেছে। এ বছর উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে দেশের ৬৪ জেলায় ভুট্টা আবাদের তালিকায় চুয়াডাঙ্গা জেলা শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে। সীমিত সময়, স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় চাষিরা ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভাল বাজারদর পেলে এবারও ভুট্টাচাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটবে এমনটাই অভিমত অভিজ্ঞ চাষিদের। জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার মোট কৃষি জমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৮শ’ হেক্টর। চলতি রবি মৌসুমে তার অর্ধেকেরও বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৪ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যা গতবারের আবাদের তুলনায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর বেশি। এবারও কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। ধান, পাট ও সবজির আবাদ করে উপর্যুপরি লোকসান হওয়ায় এবং বিগত বছরগুলোতে ভুট্টার ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় এলাকার চাষিরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা, মদনা, কুড়ালগাছি, চন্দ্রবাস, জুড়ানপুর, জয়রামপুর, দেউলি, নতিপোতা, কলাবাড়ি, গোপালপুর, লোকনাথপুর এলাকায় ব্যাপকভাবে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ভুট্টাচাষি হাউলী গ্রামের আঃ মজিদ, আজিজুল, নাস্তিপুর গ্রামের জাকির চৌধুরী, আব্দুল কাদের, রূদ্রনগর গ্রামের মনিরুল, লোকনাথপুর গ্রামের বাবলু, আইনাল ও জয়রামপুর গ্রামের আবুল কালাম বলেন, আমরা প্রতি বছর ভুট্টার চাষ করে থাকি। গত বছর ভুট্টা উঠার সাথে সাথে ড্যাপ (আধা শুকনা) ভুট্টা ভাল দামে বিক্রি করেছি। যেহেতু বর্তমানে এলাকায় ভুট্টার আবাদ বেশি তাই সরকারিভাবে ভুট্টার বাজারদর বেঁধে দিলে চাষিরা উপকৃত হবে। নচেৎ মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হলেও লোকসানের বোঝা চেপে যাবে ভুট্টাচাষিদের মাথায়। লোকনাথপুর গ্রামের ভুট্টাচাষি বাবলু বলেন, চলতি মৌসুমে আমি ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। গাছও ভাল হয়েছে। তবে গত কয়দিন আগেকার একদিনের ভারি বৃষ্টি ও হালকা বাতাসে বেশ কিছু এলাকায় ভুট্টার গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। তাতে এবার ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দর্শনা পৌর এলাকার পরানপুর গ্রামের ভুট্টাচাষি জাহিদুল বলেন, গত বছর আবাদ করে লাভ হওয়ায় এবারও ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোয় অন্যান্য ফসলের আবাদে লোকসান হয়ে এলাকার চাষিরা কয়েক বছর থেকে ব্যাপকহারে ভুট্টা আবাদে ঝুঁকে পড়েছে। ফলন ও দাম ভালো পেলে গতবারের মতো এবারও চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে। ভুট্টাচাষিরা জানান, ভুট্টা চাষে সময় এবং খরচ কম লাগে এবং অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টায় ফলনও বেশি হয়। বাজারে চাহিদা থাকায় ভাল দামে বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়। ভরা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে অন্য ফসলের ক্ষতি হয়ে চাষিরা আর্থিকভাবে লোকসানের সম্মুখীন হলেও এ ফসলের তেমন একটা ক্ষতি হয় না। এবার ফসল ওঠার আগে বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে চাষিরা বিঘাপ্রতি ২৮ থেকে ৩০ মণ ভুট্টা ঘরে তুলতে পারবে বলে জানিয়েছে। চাষিরা অভিযোগ করে বলেছেন, দেশে বর্তমানে ব্যাপকহারে ভুট্টার আবাদ হলেও এর বীজ উৎপাদনে ব্যাপারে সরকারি বা বেসরকারি কোন উদ্যোগ নেই। বর্তমানে এর বীজ শতভাগ আমদানিনির্ভর। আর দামও দেশে উৎপাদিত ভুট্টার প্রায় ২৫-৩০ গুণ বেশি। বিভিন্ন সময়ে বেশি দামে এসব বীজ কিনে চাষিরা প্রতারিত হন। তাই সরকারি বা বেসরকারিভাবে উদ্যোগে দেশে ভাল বীজ উৎপাদন হলে চাষিরা উপকৃত হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, এ এলাকার মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। ভুট্টা আবাদ লাভবান হওয়ায় বর্তমানে কৃষকরা এ আবাদে দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে বিঘাপ্রতি ২৮ থেকে ৩০ মণ হারে ভুট্টার ফলন পাওয়া যায়। বর্তমানে ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার শুরু হওয়ায় এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। ভুট্টা ও ভুট্টাগাছের কোন অংশই ফেলনা নয়। এর শুকনা গাছ ও মোচার ফেলে দেওয়া অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। অনেকে মনে করেন, ভুট্টার শুকনা গাছ ও মোচার ভিতরের অংশ দিয়ে কাগজ বা পারটেক্স তৈরির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সরকারি বা বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে ভুট্টার শুকনা গাছ দিয়ে কাগজ বা পারটেক্স তৈরি করে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। দেশে ব্যাপকহারে পোল্ট্রি ব্যবসা শুরু হলে প্রথম দিকে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ভুট্টা আমদানি করতে হতো। ৫/৬ বছর যাবৎ দেশের উৎপাদিত ভুট্টা দিয়ে সে চাহিদা পূরণ হওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানী প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। উপরোন্ত বর্তমানে আমাদের দেশের উৎপাদিত ভুট্টাই রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের মাটি ভুট্টাচাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তাই সরকার এ চাষের প্রতি একটু বেশি নজর দিলে হলে এ ভুট্টা চাষই পাল্টে দিতে পারে দেশের অর্থনৈতিক চালচিত্র এমনটাই মন্তব্য সচেতন মহলের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দাম ভাল পেলে এবারও কৃষকের মুখে ফুটবে সুখের হাসি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ