Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এশিয়ার মেগা বাণিজ্য চুক্তিতে চীন-ভারত মতানৈক্যের ছায়া

| প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : এশিয়ার ১৬টি দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে ভারতের হায়দরাবাদে জড়ো হয়েছেন দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে নীতিমালা শিথিলসহ বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্য নিয়ে রিজিওনাল ক¤িপ্রহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) চুক্তিটি চলতি বছরের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু ভারত ও চীনের মধ্যে চলমান সীমান্ত উত্তেজনার কারণে আরসিইপির সা¤প্রতিকতম বৈঠকটি কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এশিয়ার মেগা বাণিজ্য চুক্তি হিসেবে পরিচিত আরসিইপিতে চীন ও জাপানের মতো বৃহত্ অর্থনীতির দেশগুলো যুক্ত রয়েছে। মূলত অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ এশিয়ান নেশন্স (আসিয়ান) ও আসিয়ানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে এমন ছয়টি দেশের মধ্যে আরসিইপি চুক্তি প্রস্তাব করা হয়। ২০১২ সালের নভেম্বরে কম্বোডিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে আরসিইপি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়। আরসিইপি’কে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তির বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে আরসিইপি নিয়ে আলোচনা যতটা সম্ভব দ্রæত সমাপ্ত করার আহŸান জানিয়েছে চীন। তবে নিজ দেশের দক্ষ কর্মীদের অবাধ প্রবেশাধিকারের দাবির পক্ষে ভারতের অটল অবস্থান তাতে বাদ সেধেছে। ভারতের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, এ বাণিজ্য চুক্তিটি দ্রæত সম্পন্নে তাদের পক্ষ থেকে কোনো তাড়া নেই। ভারতের এ অবস্থানের কারণে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো তাদের স্থানীয় অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক অমিতেন্দু পালিত এ প্রসঙ্গে জানান, যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নেতৃত্বের স্থান দখল করতে আরসিইপি দ্রæত সম্পন্নের পক্ষে চীন। অন্যদিকে চুক্তিটিকে সেরা হিসেবে দেখতে চায় জাপান ও নিউজিল্যান্ড; তাই দেশ দুটি আরসিইপি সম্পন্ন নিয়ে খুব তাড়াহুড়া করতে রাজি নয়। এদিকে চীন ও ভারতের মধ্যে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা আরসিইপি নিয়ে তাদের মতানৈক্যকে আরো উসকে দেবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। আর এ শঙ্কা সত্যি হলে আরসিইপি চূড়ান্ত রূপ পেতে আরো বিলম্বিত হতে পারে। প্রসঙ্গত ভারত-চীন-ভুটান সীমান্তে দোকালাম এলাকায় চীন একটি রাস্তা তৈরি করতে চাইলে ভারতের সঙ্গে তাদের সীমান্ত উত্তেজনা শুরু হয়। সিকিম-ভুটান সীমান্তের এ জায়গাটি চীনে দংলাং নামে পরিচিত। চীনের এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে ভুটান। আর ভুটানকে ভারত সমর্থন দেয়ায় এ উত্তেজনার শুরু হয়। এ রাস্তাটি যদি তৈরি হয়, তাহলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে একটা যোগযোগ স্থাপনের উপায় হবে চীনের। তবে এ সড়ক কৌশলগতভাবে ভারতকে কিছুটা অরক্ষিত করবে। তাই মূল ভূখÐ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) দূরে এ রাস্তা হওয়ায় উদ্বিগ্ন ভারত। এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে গত ১৬ জুন থেকে। বলা হচ্ছে, দু’দেশের মধ্যে গত ৩০ বছরের মধ্যে এটাই দীর্ঘস্থায়ী সংকট। দোকালামের দুপাশে বিশ্বের বৃহত্ দুই দেশের প্রায় ছয় হাজার সৈন্য মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এ পরিস্থিতি দেশ দুটিকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দেয় কিনা। এ অবস্থায় উত্তেজনা নিরসনে সরাসরি আলোচনায় বসতে ভারত ও চীনের প্রতি আহŸান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিন পরেই টিপিপি চুক্তি থেকে তার দেশকে প্রত্যাহার করার পর সবার দৃষ্টি এখন আরসিইপির দিকে। আরসিইপিভুক্ত দেশগুলো বিশ্বের জিডিপির ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও বৈশ্বিক রফতানি কার্যক্রমের এক চতুর্থাংশের বেশি এসব দেশের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে। সীমান্ত ঘিরে উত্তেজনা সত্তে¡ও আরসিইপি নিয়ে চীনসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে ভারত। বিশেষ করে চুক্তিতে সেবা খাতকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার পক্ষে কাজ করছে দেশটি। ভারতের জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ৫০ শতাংশ। আরসিইপিতে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর জন্য পণ্য বাণিজ্যে বিশেষ শুল্ক ছাড় দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। বিনিময়ে নিজেদের সেবা খাতেও সমধর্মী সুবিধা চায় দেশটি। নয়াদিল্লিভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব চাইনিজ স্টাডিজের পরিচালক অশোক কান্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, সেবা খাতের মতো কিছু বিষয়ে এখনো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে; যা নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ উদার বাণিজ্য চুক্তি প্রত্যাশা করছি। বøুমবার্গ, দ্য এশিয়ান এজ, ইকোনমিক টাইমস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ