Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বছরে ৮০০ কোটি টাকা

| প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : দেশে আমদানি করা মোট মোবাইল হ্যান্ডসেটের এক-চতুর্থাংশই আমদানী হচ্ছে অবৈধভাবে। অবৈধভাবে আমদানী করা হ্যান্ডসেটের কারণে বছরে ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে নিম্নমান ও নকল হ্যান্ডসেট কিনে প্রতারিত হচ্ছে গ্রাহকরা। আর এসব হ্যান্ডসেট আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সমস্যায় পড়ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তাই অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমদানী বন্ধে জাতীয় পর্যায়ে ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) স্থাপন করতে যাচ্ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এনইআইআর এর কার্যক্রম শুরু হলে বন্ধ হয়ে যাবে অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমাদানী। মোবাইল হ্যান্ডসেট চুরি রোধ, চুরি হওয়া হ্যান্ডসেট টেলিযোগাযোগের জন্য অপ্রজনীয় বস্তুতে পরিণত করা এবং তা সহজে পুনরুদ্ধারও করা যাবে। এছাড়া বৈধভাবে আমদানী করা হ্যান্ডসেটের এক বা একাধিক ইউনিক আইএমইআই নম্বর থাকার ফলে অবৈধভাবে আমদানী করা হ্যান্ডসেটগুলো নেটওয়ার্কেই প্রবেশ করতে পারবে না।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই দেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও আমদানী বাড়ছে। গতবছরই প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ মোবাইল ফোন আমদানী হয়েছে। মোবাইল হ্যান্ডসেট ও বেতার যন্ত্রপাতি আমদানী করার জন্য ৮৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে রেডিও ইক্যুইপমেন্ট ইম্পোর্টার ও ভেন্ডর এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট দিয়েছে কমিশন। এসব প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি মোবাইল ফোন আমদানীর অনাপত্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও থামছে না অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানী। দেশে বর্তমানে আমদানী করা হ্যান্ডসেটগুলোর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ হ্যান্ডসেটই অবৈধভাবে আমদানী করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে বছরে গড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার অধিক মূল্যের মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানী করা হয়। অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানীর ফলে সরকার বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অবৈধভাবে আমদানি করা এসব মোবাইল হ্যান্ডসেট নানাবিধ আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। পরবর্তীতে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
বিটিআরসি’র বলছে, অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমাদানির কারণে একদিকে সরকার যেমন বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে বৈধ আমদানিকারকগণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন। ভোক্তা সাধারণ নকল ও নিম্নমানের হ্যান্ডসেট কেনার মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন। এসব সেটের মাধ্যমে ক্রমশই বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এছাড়া অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমাদারিন কারণে ভূয়া/ডুপ্লিকেট আইএমইআই সম্পন্ন সেট ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীরা আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্য সাধন করছে, পরবর্তীতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অপরাধীদের আওতায় আনতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে অবৈধভাবে আমদানি করা হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। একইভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মোবাইল ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান এবং তাদের এসোসিয়েশন হতে আবেদনও জানানো হয়েছে।
যদিও অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানী বন্ধ করতে বিটিআরসি, জাতীয় রাজস্ব কর্তৃপক্ষ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায়ই বিভিন্ন ধরণের প্রতিরোধমূলক অভিযান পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু এতেও অবৈধ হ্যান্ডসেটের অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) স্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে বিটিআরসি।
এনইআইআর স্থাপন করলে কি কি সুবিধা সমূহ পাওয়া যাবে এ বিষয়ে বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমাদানী বন্ধ করা যাবে। মোবাইল হ্যান্ডসেট চুরি রোধ, চুরি হওয়া হ্যান্ডসেট টেলিযোগাযোগের জন্য অপ্রজনীয় বস্তুতে পরিণত করা এবং তা সহজে পুনরুদ্ধার করা যাবে। চুরি হওয়া সেট আলাদাভাবে ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকবে, অপারেটরদের ইআইআর সমূহ ব্যবহার করে এক্সেস কন্ট্রোল ব্যবস্থার মাধ্যমে চুরি হওয়া মোবাইল সেটের পুন:ব্যবহার ঠেকানো যাবে। বৈধভাবে আমদানীকৃত হ্যান্ডসেটের এক বা একাধিক ইউনিক আইএমইআই নম্বর থাকবে। বৈধভাবে আমদানী হওয়া সেটসমূহই কেবল মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারবে। এটি অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। জাতীয়ভাবে আইএমইআই ডাটাবেইজ সংরক্ষণের মাধ্যমে নিরাপত্তা ঝুকির বিষয়টি অনেকটাই হ্রাস পাবে। কোন ধরণের অপরাধ কার্যক্রমে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ও মোবাইল হ্যান্ডসেট সনাক্তকরণের মাধ্যমে অপরাধী চিহ্নিত করতে সহজ হবে এবং এর মাধ্যমে অপরাধ প্রবনতা হ্রাসসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আইএমইআই ক্লোনিং বন্ধ হবে। এজন্য এনইআইআর স্থাপনের আগে সকল মোবাইল ফোন অপারেটরদের স্ব-স্ব নেটওয়ার্কে ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি (ইআইআর) স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া এনইআইআর কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য উন্মুক্ত নিলাম পদ্ধতি প্রয়োগেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনা করেই আমরা ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি বাস্তায়ন হলে অবৈধ পথে হ্যান্ডসেট আমদানী বন্ধ হবে। পাশাপাশি গ্রাহকরাও প্রতারণার হাত থেকে বাঁচবে। এছাড়া ভূয়া আইএমইআই ব্যবহার করে যে অনৈতিক ও অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হয় তা বন্ধ হবে এবং সেট হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করাও সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজস্ব


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ