Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হামে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে নয় শিশুর মৃত্যু

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তীব্র অপুষ্টি এবং আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণে অনিহা ত্রিপুরাপাড়ায় ২০ বছরের মধ্যে এ এলাকার হামের টিকা দেয়া হয়নি
স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার ত্রিপুরাপাড়ায় অসুস্থ নয় শিশু যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বরণ করেছে। হামের আক্রমনে তারা অসুস্থ হয় এবং চিকিৎসা না পেয়ে তাদের মৃত্যু ঘটে। গতকাল মহাখালী রোগতত্ত¡ রোগনিয়ন্ত্রন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য জানান। ত্রিপুরা পাড়ায় অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণ-ক্লিনিক্যাল ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা এবং রোগতাত্তি¡ক সমীক্ষার পর্যবেক্ষণ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই এলাকার শিশুরা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছিল এবং এর ফলে হামের সংক্রমণ একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অপুষ্টির কারণে সংক্রমন তীব্র আকার ধারন করেছিল।
তিনি বলেন, ত্রিপুরা পাড়ায় মোট ৮৫টি বাড়িতে ৩৮৮ জন মানুষ বাস করে। এরা কেউই হামের টিকা পায়নি। ৩৮৮ জনের মধ্য বয়সভেদে সন্দেহজনক হাম আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯০ জন। এদের মধ্যে ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী আক্রান্তের হার ৯২ দশকিক ৫ শতাংশ, ১ থেকে ৪ বছর বয়সী আক্রান্তের হার ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ, নয় মাস বয়সীদের ৪০ শতাংশ, ৯ থেকে ১১ মাস বয়সীদের ২০ শতাংশ, ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের ১৫ শতাংশ, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের ১০ শতাংশ এবং ২০ বছরের উপরে বা নিচে শুণ্য দশমিক ৯ শতাংশ।
এই মৃত্যুর দায় সরকার স্বীকার করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি দু:খজনক। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে জানানো হবে। ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ২০ বছরের মধ্যেও ত্রিপুরাপাড়ায় কোন হামের টিকা দেয়া হয়নি।
হামের টিকা না পাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিকা কর্মসূচি পরিচালিত হয় ওয়ার্ড ভিত্তিক মাইক্রোপ্লান অনুযায়ী। ত্রিপুরা পাড়ার বসবাসকারী উক্ত জনগোষ্টি মাইক্রোপ্লানে অন্তর্ভক্ত ছিল না। তিনি বলেন, এই এলাকার জনগোষ্টি একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোস্টির অন্তর্ভক্ত। তাদের মধ্যে অশিক্ষা, অসচেতনতা এবং কুসংস্কার বিদ্যমান, এছাড়া আধূনিক চিকিৎসা গ্রহণে প্রচন্ড অনিহার কারনে তারা বরাবরই চিকিৎসা সেবার বাইরে থেকে গেছেন।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের সকল প্রত্যান্ত অঞ্চলের টিকাদান কর্মসুচির মাইক্রোপ্লান পর্যালোচনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের কোন ক্ষদ্র জনগোষ্ঠি বাদ পড়ছে সেগুলোকে মাইক্রোপ্লানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
দেশে হামের টিকা কার্যক্রম ঠিক ভাবে চলছে এমন দাবি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় হামের প্রাদুর্ভাবের কোন আশঙ্কা নেই। ত্রিপুরাপাড়ায় হামের সংক্রমন সম্পর্কে তিনি জানান, ত্রিপুরা পাড়ায় হামের সংক্রমনের লক্ষণ চলতি বছরের ২২ জুন প্রথম দেখা দেয়। সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত শিশুর মধ্যে জ্বরের লক্ষন দেখা দেয় ১০ জুলাই। প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ৮ জুলাই। চিকিৎসা পাওয়ায় ১২ জুলাইয়ের পর আর কারও মৃত্যু ঘটেনি। মৃত নয়টি শিশুর বয়স ৩ থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
তিনি জানান, ঘটনা শোনার পর আইইডিসিআর এর টিম সেখানে গিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীদের রক্ত ও লাল এর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ঢাকায় যথাক্রমে আইইডিসিআর ল্যাবরেটরি এবং জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পোলিও ও মিজলস ল্যাবরেটরিতে নমুনা সমুহ পরীক্ষা করা হয়। ত্রিপুরাপাড়া বর্তমান ও পববর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরে মহাপরিচাল বলেন, চিকিৎসাধীন রোগীদের সুচিকিৎসা চলছে। এলাকার বাসিন্দা বীরেন্দ্র ত্রিপুরার বাড়িতে অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইপিএইচএন উক্ত পল্লীতে পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একইসঙ্গে ওই এলাকায় রোগ ব্যাধি ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত পর্যাবেক্ষণ চলমান থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আইইডিসিআর’র পরিচালক প্রপেসর ডা. মীরজাদী সেব্রীনা ফ্লোরা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রন) প্রফেসর ডা. সানিয়া তাহমিনা, পরিচালক (প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা) ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ