পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রূহুল আমীন খান : নির্মাণ হয়ে গেল হাতের নাগাল পর্যন্ত। উপরে যাওয়ার জন্য ফেরেস্তা জিব্রাঈল এনেছিলেন সেই সংরক্ষিত পাথরখানা। এর এমনি বৈশিষ্ট্য যে, আধুনিক লিফটের মতো কাজ করে। প্রয়োজন মতো উপরে-নীচে, ডানে-বাঁয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচল করে। এর উপর দাঁড়িয়ে সচ্ছন্দে হযরত ইবরাহীম গড়ে তুলতে লাগলেন প্রাচীর। পাথরটিতে গভীরভাবে হযরত ইবরাহীমের কদম মুবারকের ছাপ চিরদিনের জন্য অঙ্কিত হয়ে গেল। আল্লাহ কাবা তাওয়াফকারীদের প্রতি নির্দেশ জারি করলেন ‘ওয়াওখিজু মিন মাকামে ইবরাহীমা মুসল্লা’ তোমরা মাকামে ইবরাহীমকেই সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো। ২- বাকারা : ১২৫ আয়াত। কাবার তাওয়াফ শেষ করে এ স্থানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব।
নির্মাণ সমাপ্ত হলে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন ইবরাহীম এবার বিশ্ববাসীকে এই কাবায় হজের জন্য আহ্বান জানাও। তিনি আরজ করলেন : ‘ইয়া আল্লাহ! এই বিজন উপত্যকায় আমার ডাক কে শুনবে? আল্লাহ বললেন, ইবরাহীম! দাওয়াত দাও, ডাকো’ এটা তোমার কাজ। সবার কাছে সে ডাক পৌঁছে দেয়া আমার কাজ। নিকটবর্তী জবালে কুবায়সে উঠে দাওয়াত দিলেন ইবরাহীম আল্লাহ তায়ালা তাঁর এই ডাক পৌঁছে দিলেন রূহের জগতে সব রূহের কাছে। যে রূহ লাব্বায়েক বলে ডাকে সাড়া দিলো তাদের কিসমতে লেখা হলো হজ করা।
আল্লাহ বলেন : ফীহে আয়াতুন বাইয়্যেনাতুন- অর্থাৎ কাবা চত্বরে রয়েছে আল্লাহর সুস্পষ্ট বহু নিদর্শন। একে সম্মান দিতে হবে। তামীম করতে হবে। বেয়াদবী করলে তার রক্ষা নেই। এর মধ্যে রয়েছে মাকামে ইবরাহীম ও হজরে আসওয়াদ। হজরে আসওয়াদের সাথে বেয়াদবী করলে তার কি পরিণতি হয় তার কিছ্টুা আলোচনা প্রয়োজন। আগেই উল্লেখ করেছি এটি বেহেশতের একটি পাথর। হযরত আদম, হযরত ইবরাহীম এটি স্থাপন করেছেন কাবায়। এ পাথর পানিতে ডুবে না। এ পাথরে চুম্বন করলে তার গুনাহ থাকে না। এ পাথর বরাবর এসে তাকে চুম্বন বা তার প্রতি ইশারা করেই কাবার তাওয়াফ শুরু করতে হয় এবং শেষ করতে হয়। কাবায় একদা অগ্নিকান্ড ঘটেছিল এতে পাথরটি তিন খন্ড হয়ে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.) রৌপ্যের তার দিয়ে টুকরোগুলো বেঁধে দেন। কালক্রমে এই বাঁধন শিথিল হয়ে গেলে আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশীদ পাথরটি আড়াআড়িভাবে ছিদ্র করে রৌপ্য ঢালাই করে টুকরো তিনটি শক্তভাবে আটকে দেন।
অত্যন্ত বেদনার বিষয়, শিয়াদের কারামতি নামের একটি চরমপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের নেতা আবু তাহের কারামতির নেতৃত্বে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। আবু তাহের ৯৩০ ইং সালে মক্কা আক্রমণ করে এবং অত্যন্ত ঘৃণ্য বর্বরোচিত হত্যাকান্ড চালায়। বহু সংখ্যক হজযাত্রী ও মক্কাবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং পবিত্র হাজরে আসওয়াদকে উপড়ে ফেলে সাথে নিয়ে প্রথমে তাদের শহর আলহিসায় যাত্রা করে। পথে মহাবিঘœ ঘটে। যে উটের পিঠেই হাজরে আসওয়াদ চাপানো হয় কিছুদূর যেতে না যেতেই সেটি ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর আর একটি এভাবে একর পর এক ৪০টি উট ধ্বংস হওয়ার পর তারা কোনোমতে আলহিসায় পৌঁছে। এরপর পাথরটি নিয়ে তাদের আরেক শহর হাজরার দিকে রওয়ানা করে। এবারও ঐ একই সমস্যা দেখা দেয়। যে উটের উপরই চাপানো হয় কিছু দূর যেতে না যেতেই সেটি ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবে হাজরা পৌঁছতে পথিমধ্যে তাদের পাঁচশত উট ধ্বংস হয়ে যায়। পাথর ছিনতাইকারী কারামতিদের প্রতি গজব নেমে আসে। তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাদুর্ভাব ঘটে মহামারীর। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ৯৫১ ঈসায়ী সনে পাথরটি একটি রুগ্ন উটের উপর চাপিয়ে কাবার পানে যাত্রা করে। পাথর বাহক উটটি সাথে সাথে তরতাজা ও হৃষ্টপুষ্ট হয়ে যায় এবং নির্বিঘেœ কাবায় পৌঁছে যায়। পাথরটি কাবার পূর্ব কোণে যথাপূর্বাবস্থায় স্থাপিত হয়। ফিৎনার ২১ বছরকাল কাবা ছিল হাজরে আসওয়াদশূন্য অবস্থায়। তাওয়াফকারীরা পাথরের শূন্যস্থানটি বোছা দিয়েই নিজেদের আরজু পূরণ করে। কাবাকেন্দ্রিক এ রূপ অলৌকিক ঘটনা অসংখ্য। যারাই এর সঙ্গে বেয়াদবি করেছে তারাই লাঞ্ছিত হয়েছে, ধ্বংস ও বরবাদ হয়েছে। হবে ভবিষ্যতেও। আল্লাহ ঘরের ইজ্জত মর্যাদা আল্লাহই রক্ষা করবেন। আর কাবা সমহিমায় সগৌরবে বিরাজ করবে কাবার শান ও মর্যাদা দুনিয়ার সব স্থান সব মকান থেকে আলাদা। আল্লাহর ঘরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বিনা ইহরামে কারোরই মিকাত বা নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করার অনুমতি নেই। সেই ইহরাম অবস্থায় অনেক বৈধ কাজও হারাম হয়ে যায়। জাঁকজমকের বেশভূষা কিংবা অন্য কোনো পোশাক পরিধানেরও অনুমতি নেই কাবার সেই পথিকের। দুই প্রস্থ সেলাইবিহীন সাদা কাপড়ই ব্যবহার করতে হয় তাদের। হারামের এরিয়ার মধ্যে ঝগড়া-ফাসাদ, যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হওয়া সম্পূর্ণ হারাম। এখানের কোনো প্রাণী হত্যা করা যায় না। শিকার করা যায় না। এমনকি ইজকির (এক প্রকার ঘাস) ছাড়া অন্য কোনো গাছপালা তৃণলতা কাটা যায় না। আল্লাহর মখলুকের জন্য এ স্থান অভয়ারণ্য। হরমের এরিয়ায় অবস্থান করাই পুণ্যের কাজ। কিছু না পড়ে, না করে কেবলমাত্র আল্লাহর ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকাও মহাপুণ্যের কাজ। এখানে সর্বক্ষণ আল্লাহর অনন্ত রহমাতবারী বর্ষিত হতে থাকে। মসজিদে হারামে এক রাকাত নামাজ পড়লে অন্য স্থানের তুলনায় এক লাখ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। যে জন এখানে প্রবেশ করল সে নিরাপদ হয়ে গেল। সে আল্লাহর মেহমান, আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। এখানকার ধুলা মাটি পবিত্র নূরানী।
বদনসীব তারা যারা এসব নিয়ম ভঙ্গ করে। যারা এখানে হত্যা ধ্বংস ফাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করে তারা অভিশপ্ত। তারা আল্লাহর দুশমন, রাসূলের দুশমন, প্রতিটি মুসলমানের দুশমন, মুসলিম উম্মাহর দুশমন, মানবতার দুশমন। তাদের মোকাবেলা করা, নিবৃত করা সকল মুসলমানের দায়িত্ব। আল্লামা কবি ইকবালের ভাষায়
বিশ্বব্যাপী বুতখানা ও মূর্তিপূজা তার ভেতর
পাক কাবাই মহামহিম আল্লাহ পাকের পয়লা ঘর।
ওই কাবাই রক্ষা গেহ, রক্ষা কবচ মুসলিমের
আমরা সেবক রক্ষী কাবার শঙ্কা ভীতি নেই মোদের।
কারোর দরকার নেই। আল্লাহই তাঁর ঘর রক্ষার জন্য যথেষ্ট। আবরাহা ও তার হস্তি বাহিনীকে নির্মূল, নিশ্চিহ্ন করে দেয়াই তার প্রমাণ। কিন্তু সরাসরি তা করতে যাবেন কেন? তখন তো লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কালেমা উচ্চারণ করার মতো একজনও ছিল না। আজ তো এ কালেমা উচ্চারণকারীর সংখ্যা দেড়শত কোটির অধিক। কাবার রক্ষী ও সেবকের দাবিদার তো অসংখ্য-অগণিত। তাদের কর্তব্য আছে, দায়িত্ব আছে। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদুল হারামের এরিয়ায় ফেৎনা-ফাসাদ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারা এর উস্কানিদাতা, মদতদাতা? মুসলিম জাহানে ঝগড়া-ফাসাদ, লড়াই, হানাহানি আছে অবশ্যই তা মীমাংসা করতে হবে, তবে কোনোক্রমেই তা কাবায় মসজিদুল হারামের এরিয়ায় সম্প্রসারিত করা চলবে না। আল্লাহ একে নিরাপদ শহর বলেছেন। এই নিরাপত্তা বিনষ্ট হতে দেয়া যাবে না। রাজনীতি-ক‚টনীতির ধুলা-ময়লা জঞ্জাল থেকে মুক্ত রাখতে হবে আল্লাহর পবিত্র হারামকে। এখানের স্লোগান হবে শুধু এক আল্লাহর।
‘উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ
আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।
ওরা নিশি দিন মন্দ চায় ওরা নিশিদিন দ্ব›দ্ব চায়’। -নজরুল
আমরা গাহিব শির উঁচু করে মুক্ত কণ্ঠে আল আহাদ
কাবার হারামে ধ্বনিবে কেবল এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।
(সমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।