Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজস্ব ঘাটতি ৫৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে সিপিডি

| প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নতুন ভ্যাট আইনের পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়েছে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : চলতি ২০১৭- ১৮ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ৫৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে বাজেট প্রণোদনা বাবদ রাখা ১০ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার সঠিক ব্যবহার নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সেন্টার ফর সিপিডি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনের প্লেন উড়তে পারেনি; মুখ থুবড়ে পড়েছে। নির্বাচনের পরে যাতে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে না হয়, সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই অনলাইন-ব্যবস্থাসহ অন্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। ক্র্যাশ ল্যান্ড করা প্লেন আবার উড়াতে হবে এটাই মূল চেষ্টা হওয়া উচিত। দেবপ্রিয় বলেন, ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়ায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হবে। এ ঘাটতি সর্বনিম্ন ৪৩ হাজার কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সরকারকে বলব আসছে নির্বাচনী ডামাডোলে যেন ভ্যাট আইনের প্রস্তুতি হারিয়ে না যায়। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বাজেটের পুঁজিবাজার, ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিতে ১০ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ ব্যবহারে সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক উচিৎ।
সিপিডি ফেলো বলেন, অনেক সময় দেখা যায় সরকারি ব্যয় দিয়ে ব্যক্তি পুঁজিতে লাভ দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংকের জন্য রাখা ২ হাজার কোটি টাকা কোনো কাজে আসবে না। এই অর্থ সিন্ধুর মধ্যে বিন্দুর মতো তলিয়ে যাবে। ব্যাংকে যে পরিমাণ ঘাটতি আছে-সেখানে এই ২ হাজার কোটি টাকা কোনো অবদানই রাখবে না। এর জন্য প্রয়োজন কাঠামোগত সংস্কার।
দেবপ্রিয় বলেন, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ পরিচালনায় সুশাসন, বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিকভাবে দেখভাল করা, ব্যাংকিং বিভাগ কী করছে- এসব বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়ে গেছে। এ জন্য ব্যাংকিং খাতের সংস্কার যে হচ্ছে না। এর মূল কারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা নাকি রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এটা খতিয়ে দেখতে হবে।
সরকারকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনেক কিছু সংযত করার সুযোগ আছে। এর মধ্যে বøক বরাদ্দ ৩ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা রয়েছে। এই টাকা পরিহার করার সুযোগ আছে কি না- সরকার বিবেচনা করতে পারে। এছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া ১ হাজার ৬৬ কোটি টাকাও সর্তকতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। একইসঙ্গে চালের ওপর আমদামি শুল্ক পুরোপুরি তুলে দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন আইনের পক্ষে সিপিডি। যদি ১২ শতাংশ একক ভ্যাট হার নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হতো; তবে নতুন আইনের এই পরিণতি হতো না। তিনটি কারণে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে মনে করে সিপিডি। এগুলো হলো প্রস্তুতির অসম্পূর্ণতা; রাজনৈতিক সহমতের অভাব এবং সামাজিক তাৎপর্যের প্রভাব।
সিপিডি মনে করে, বাজেটের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বেশি ঋণ নেওয়ায় সরকারের দায় বাড়ছে। এতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এটি মধ্য মেয়াদে টেকসই হবে না। ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। সিপিডি আরও মনে করেন, সঞ্চয়পত্র সামাজিক সুরক্ষার বিষয় নয়। অন্যভাবে খরচ করে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া যেতে পারে।
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সঞ্চারী হতে হবে। এ জন্য অর্থনীতি বহুমুখীকরণ করতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি নিতে হবে। উৎপাদনশীলতা-নির্ভর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্যাট

১০ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ