Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চোরা পথে আসছে ভারতীয় বীজ ধান

আমন চাষ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয়

প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:১২ পিএম, ৬ জুলাই, ২০১৭

মহসিন রাজু, বগুড়া ব্যুরো : চলতি আমন মওশুমের শুরুতেই পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলাকে নিয়ে গঠিত বগুড়া কৃষি অঞ্চলে তীব্র বীজ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ধান চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবার আমনের বীজ ধানের দাম ও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুন মুল্যে বিক্রি হচ্ছে। চোরা পথে আসছে ভারতীয় বীজ ধান। কৃষি তথ্য সার্ভিস দপ্তর সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে বীজ সঙ্কটের কারণে বীজতলা তৈরীর লক্ষ্যমাত্রা এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি।
কৃৃষি বিভাগ ও বিএডিসি সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলাকে নিয়ে গঠিত বগুড়া কৃষি অঞ্চলে এবার সাড়ে ৩ লক্ষ হেকটর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিকটন। এর মধ্যে বগুড়ায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭শ’ ২০ হেক্টরে চাষের বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬’শ ৫৬ মেঃ টন ,জয়পুরহাটে ৫৯ হাজার ১শ’ ৩৫ হেক্টরে চাষের বিপরীতে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯শ’ ৪৪ মেঃ টন, পাবনা জেলায় ৫১ হাজার ৩শ’ ৮৭ হেক্টরে চাষের বিপরীতে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২শ ২৩ মেঃ টন এবং সিরাজগঞ্জ জেলায় ৬৯ হাজার ৮শ’ ৬৩ হেক্টরে চাষের বিপরীতে ১ লাখ ৯০ হাজার ৫শ ৮২ মেঃ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলে আমনের বীজতলা তৈরীর জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৮শ’ ৩১ হেক্টর। গতকাল এই রিপোর্ট তৈরীর সময় স্থানীয় কৃষি তথ্য সার্ভিস দপ্তরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৬ হাজার ৯শ’ ৪১ হেক্টরে বীজতলা তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ মতিউর রহমান। আমন বীজতলা তৈরীর জন্য আবহাওয়া অনুকুল থাকলেও বীজ ধান সঙ্কটের জন্যই মুলত বীজতলা তৈরীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে চাষীরা জানিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলেই আশাবাদী কৃষি কর্মকর্তারা।
মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এবার ধানের মূল্য বেশি হওয়ায় বিএডিসির ডিলাররা মওশুমের শুরুতেই তাদের নামে বরাদ্দ কোটা তুলে নিয়েছে। চাষি পর্যায়ে গত দু’বছরে বগুড়া অঞ্চলে বিএডিসির সরবরাহকৃত বীজের তুলনায় ভারতীয় বীজ ধানের চাহিদা বেশি থাকলেও এবার ধান/চালের দাম বেশি হওয়ায় বিএডিসির সরবরাহ কৃত ধানবীজও বিক্রি হয়েছে দ্বিগুন মুল্যে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ডিল্রাই বীজ ধান তুলে নিয়ে তা’ চাল তৈরীর জন্য মিলারদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও বিএডিসি কর্মকর্তারা তা’ স্বীকার করেননি। বিএডিসি বগুড়ার উপসহকারি পরিচালক গোলাম সারওয়ার জানিয়েছেন, এবার মওশুমের শুরুতেই বগুড়ার ১২ উপজেলার ২শ ৫৭ জন নিবন্ধিত বীজ ডিলার তাদের কোটা ৬শ টন বীজ ধান তুলে নিয়েছেন। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ডিলারদের বীজ ধানের কোটা তুলে নেওয়ার আগ্রহ একটু বেশিই ছিল বলে তাদের মনে হয়েছে। তবে বিএডিসির সরবরাহ করা ১০ কেজি ওজনের এক বস্তা ধান বীজের বিক্রয় মূল্য৩শ ২০ টাকা হলেও তা’ যে ডিলাররা দ্বিগুন দামে বিক্রি করেছে বা মিলারদের কাছে সরবরাহ করে সে তথ্য তাদের জানা নেই।
তবে নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক মিল ও চাতাল মালিক জানিয়েছেন, বিএডিসির ধান বীজের মান ভালো হওয়ায় ওই বীজ ধান থেকে চাল উৎপাদন করা লাভ জনক হওয়ায় গত কয়েক বছর ধর্ইে তারা বিভিন্ন চ্যাণেলে বীজ ধান সংগ্রহ করে আসছে। কর্মকর্তারা এটা অস্বীকার করলেও এটা সত্য।
এদিকে বীজের বাজারে বিএডিসির বীজ না পাওয়ায় ব্যাপকহারে ঢুঁকে পড়ছে ভারতীয় ধান বীজ। কয়েক বছর ধরে বিএডিসির সরবরাহকৃত বীজ ধান বি আর -১১, ব্রী – ৫২ ও ৫১ এবং ব্রী - ৪৯, ব্রী -৩২, ব্রী- ৩৪, ফলন আর আগের মতো নেই। বিশেষ করে ব্রী ৪৯ জাতের ধান ক্ষেতে পেকে ওঠার আগে আগে স্থানীয় ভাষায় ‘‘লক্ষীর গু’’ নামক রোগের প্রকোপ হয়, চিটা লাগে বেশি। সেই সাথে লেট বøাইট ’’ পাতা পচে / ঝলসে যাওয়া রোগের প্রকোপ হয় বেশি জাতীয় অভিযোগ তুলে ভারত থেকে চোরা পথে বীজ ধান আনছে
ডিলাররা। এক সপ্তাহের বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, স্বর্ণা - ৫ ও সাদা রঞ্জিত নামের ভারতীয় ধান বীজে এখন সয়লাব ধান বীজের বাজার। কোনো রকম মনিটরিং না থাকায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় ধান বীজ। ভারতীয় বীজের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশীয় বীজ কোম্পানীগুলোর সরবরাহকৃত বীজই এখন আমন চাষীদের ভরসা বলে জানিয়েছেন ধান চাষীরা। ফলে অনেকেরই আশঙ্কা মওশুমের শেষে বন্যা দেখা দিলে এবং বীজ সঙ্কট অব্যাহত থাকলে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নাও হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ