পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : জেনে শুনে ভুল বিচার করলে তা হবে মহাপাপ। প্রথম নারী বিচারক হিসেবে ব্যর্থ হয়ে যাইনি। আল্লাহর কাছে তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সব সময় সততা নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে বিচার কাজ সম্পন্ন করেছি। জেনে-বুঝে অবিচার করা বা অমনোযোগী হয়ে বা অবহেলা করে ভুল বিচার করা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। কথাগুলো বলছিলেন সুপ্রিম কোর্টের দেশের প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসের পর এক বিদায়ী সংবর্ধনায় বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা তার দীর্ঘ ৪২ বছরের বিচারিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচার কক্ষে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এসময় আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ, সিনিয়র আইনজীবীসহ সুপ্রিমকোর্টের কয়েকশত আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার গতকাল ছিলো তার শেষ কর্মদিবস। আজ (শুক্রবার) ৭ জুলাই তার বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের অবসরের বয়সসীমা অনুযায়ি তিনি অবসরে গেলেন।
বিচারপতি নাজমুন আরা বলেন, আমি আত্মতৃপ্তি নিয়ে বিচারাঙ্গন থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমার সুদীর্ঘ বিচারক জীবনে কখনোই জেনে-বুঝে বা অবহেলা করে বা অমনোযোগী হয়ে কোনো ভুল বিচার বা অন্যায় বিচার করিনি। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, প্রায় ৪২ বছরের বিচারকের জীবন আমার শেষ হলো আজ। বিচার করার কঠিন কাজ ও বিচারকের সীমাবদ্ধ জীবন থেকে মুক্ত হওয়ার আগ্রহ ছিল আমার। তবে আজকের এ ক্ষণটিতে আমার কষ্ট হচ্ছে এই বিচার অঙ্গন থেকে বিদায় নিতে, আপনাদের ছেড়ে যেতে। আল্লাহ আমাকে বিচারক বানিয়েছেন, এ দেশের প্রথম নারী বিচারক। তবে আমার বিচারক হওয়ার পেছনে আমার মরহুম আব্বার ইচ্ছা ও আম্মার প্রেরণা বড় ভূমিকা রেখেছে, যোগ করেন নাজমুন আরা।
১৯৭২ সালের আইনজীবী পেশার প্রথম দিন কোর্টের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, বোধ হয় আমার মনের কোণায় ইচ্ছাটা উঁকি দিয়েছিল- আমি কি জজ হতে পারি না? কিন্তু জানলাম আমি জজ হতে পারি না। ওই সময় বাংলাদেশের নারীরা জজ হতে পারত না। আমি ওকালতি করার বছর দেড়েক পরে ওই বিধান সরকার তুলে দেয়। বিদায়ী বিচারপতি বলেন, ১৯৭৫ সনের শেষের দিকে দেশের প্রথম নারী বিচারক হয়ে খুলনার জজশিপে মুন্সেফ হিসেবে যোগদান করি। ওই সময়ে খবরের কাগজে এটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল। প্রতিক্রিয়া দুই রকমেরই হয়েছিল। কেউ স্বাগত জানিয়েছেন। আবার অনেকে নাক সিঁটকেছিলেন- নারী আবার বিচারক হতে পারে নাকি, নারী আবার কী বিচার করবে? কর্মক্ষেত্রে আমি এই দুই রকমের আচরণ পেয়েছিলাম।
বিচারতি বলেন, প্রথম নারী বিচারক হিসেবে ব্যর্থ হয়ে যাইনি। আল্লাহর কাছে তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রথম নারী বিচারক হিসেবে আমি ব্যর্থ হলে হয়তো আজ বাংলাদেশের প্রায় ৪০০ নারী বিচারক হতো না। আমার অনেক বিচারই হয়তো ভুল হয়ে গেছে, আপিলে গিয়ে হয়তো সংশোধিত হয়েছে। জেনে-বুঝে অবিচার করা বা অমনোযোগী হয়ে বা অবহেলা করে ভুল বিচার করা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। পক্ষাশ্রিত হয়ে বা কোনো কারণে বা কারো দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে বিচার করা মহাপাপ। আমার আত্মতৃপ্তি আমি জেনে-বুঝে বা অবহেলা করে বা অমনোযোগী হয়ে বা পক্ষাশ্রিত বা প্রভাবান্বিত হয়ে ভুল বিচার, অন্যায় বিচার করিনি কখনোই।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা তার প্রজ্ঞা, মেধা ও সততা দিয়ে বিচার বিভাগকে সমৃদ্ধ করেছেন। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তার প্রচেষ্ঠা অব্যাহত ছিলো। আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচার কাজে দক্ষ, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ বিচারক হিসেবে তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। বিচারবিভাগে তার অবদান দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।