Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জিএসটি নিয়ে বিভ্রান্ত পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা

| প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বিভ্রান্তি। ব্যাপক এবং চূড়ান্ত বিভ্রান্তি। জিএসটি, অর্থাৎ দেশজুড়ে সমহারে পণ্য ও পরিষেবা কর চালু হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্যিক মহলের প্রতিক্রিয়া এই একটি শব্দেই বর্ণনা করা যায়। ব্যবসায়ীরা, বিশেষত ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা সবাই বিভ্রান্ত যে, কীভাবে এই নতুন কর কাঠামোর সঙ্গে তারা যুক্ত হবেন। এমনকি যারা বাণিজ্য কর আদায় করবেন, সেই সরকারি কর্মকর্তারাও জনান্তিকে স্বীকার করছেন যে, বিভ্রান্ত তারাও। জিএসটি নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরেও তারা বুঝে উঠতে পারছেন না, কোন পণ্যের কর হার কী হবে এবং কীভাবে সেটা আদায় হবে। তার একটা বড় কারণ অবশ্যই বহুস্তরীয় কর ব্যবস্থা। পণ্য অনুযায়ী করের চারটি স্তর বেঁধে দেওয়া হয়েছে, অন্যান্য দেশের মত নির্দিষ্ট একটি কর হারে জিএসটি চালু হয়নি ভারতে। ফলে পুজোর বাজারের মরশুম শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও গত শনি ও রোববার, কলকাতা শহরের শপিং মলগুলো কার্যত খালি পড়ে ছিল।
এই প্রতিনিধির কথা হয় কাগজ ও স্টেশনারি পণ্যের পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ী কৃষ্ণেন্দু দের সঙ্গে। কলকাতার টেরিটি বাজারে তাঁদের বহু বছরের পারিবারিক ব্যবসা। শুক্রবার, জিএসটি চালুর আগের দিন ওই বাজারে বনধ পালিত হয়েছে। মমতা ব্যানার্জির সরকার পশ্চিমবঙ্গে জিএসটি মেনে না নেওয়ার যে নীতিগত অবস্থান নিয়েছে, তার সঙ্গে এই ব্যবসায়ীরা একমত। কেন? কৃষ্ণেন্দু দে জানালেন, প্রাথমিক কারণটা ব্যবহারিক। আগে প্রতি তিন মাস পর পর তাদের ব্যবসার হিসেব দাখিল করে কর জমা করতে হতো। জিএসটি-র নতুন নিয়মে সেটাই করতে হবে প্রতি ১০ দিনে এবং সেটাও যথেষ্ট জটিল এক হিসেব-নিকেশ, যার জন্য উপযুক্ত হিসাবরক্ষক নিয়োগ করতে হবে। ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে সেটা দুঃসাধ্য। আর এর জন্য যে বাড়তি খরচ হবে, তার দায় বহন করবে কে? প্রশ্ন করছেন কৃষ্ণেন্দু এবং তার আশঙ্কা, এর ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে, কারণ ব্যবসায়ীদের প্রবণতা থাকবে ওই বাড়তি খরচের ভার ক্রেতার ঘাড়েই চাপিয়ে দেওয়ার।
আরও একটা অসুবিধের কথা ওরা বলছেন যে, জিএসটি-উত্তর ভারতে সব লেনদেনকেই ডিজিটাল নজরদারির আওতায় নিয়ে আসতে চাইছে মোদী সরকার। ফলে ব্যবসায়িক লেনদেনের সময় জিএসটি নথিভুক্তি ক্রম, অথবা করদাতার স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর, অর্থাৎ ‘প্যান‘, কিংবা ব্যক্তিগত পরিচিতির আধার কার্ড নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
মজুতদার বা পাইকারি ব্যবসায়ীর জন্যে ক্রেতাদের এই তথ্য নেওয়াটা বাধ্যতামূলক, তার নিজের কেনা-বেচার হিসেব রাখার খাতিরেই। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ী যারা, নেহাতই কম টাকার লেনদেন করেন, তারা সেই জটিলতার মধ্যে যেতে চাইছেন না। তাদের অনেকেরই জিএসটি নথিভুক্তি, এমনকি প্যান কার্ডও নেই, এতই সামান্য তাদের ব্যবসার পরিমাণ। তার ওপরে হিসেব দাখিলের সরকারি হুকুম মেনে চলতে গিয়ে তারা ধনেপ্রাণে মারা পড়বেন।
আরও একটি সমস্যার কথা বললেন ব্যবসায়ী অনুপম চক্রবর্তী, যার ব্যবসা চা বাগানে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা। তিনি বলছেন, সরকারের আজব নিয়ম, ১০ দিনের মধ্যে হিসেব দাখিল করে কর জমা দিতে হবে। কিন্তু তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে, কলকাতার কারখানা থেকে যন্ত্রাংশ সড়কপথে ত্রিপুরা বা আসামের কোনো চা বাগানে পাঠাতে অন্তত ১৫-২০ দিন সময় লাগে। তা হলে কী করে তারা ১০ দিনে একটা বাণিজ্যিক লেনদেনের হিসেব দাখিল করবেন? তবে একটা বিষয় অনুপম বলছেন যে, এর ফলে পণ্য পরিবহন জটিলতামুক্ত হবে। বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন কর হারের ঝামেলা থাকবে না, পারমিটের সমস্যা থাকবে না। অনেক রাজ্যেই যে কারণে আমদানি শুল্ক আদায়ের চেকপোস্টগুলো তুলে দেওয়া শুরু হয়েছে, খবর পেয়েছেন অনুপম। কিন্তু তার মতে, মূল সমস্যা অন্যত্র।
পণ্য বিশেষে কর হার নির্দিষ্ট করে দেওয়ায়, যে জিনিসটা তারা হয়ত ৫ শতাংশ কর হারে কিনতেন, সেটা এখন ১৮ শতাংশ করের আওতায় চলে আসবে। এর ফলে সেই জিনিসটার দাম বাড়বে। কিন্তু তারা যখন সেই বেশি দামে সেটা বিক্রি করবেন, ক্রেতারা কিন্তু বাড়তি খরচের চাপ সামলাতে ব্যবসার পরিমাণ কমিয়ে দেবেন। ফলে ব্যবসার অঙ্ক কমবে, লাভ কমবে, বাজার দুর্বল হবে। অনুপম বলছেন, আলাদা লোক রেখে হিসেব রাখাই হোক, বা ব্যবসার পরিমাণ ও অঙ্ক ঠিক রাখা, বড় বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর কোনো অসুবিধে হবে না। মারা পড়বে তাদের মতো ছোট মাপের ব্যবসায়ীরা।
জনশ্রুতি অবশ্য আছে যে, নরেন্দ্র মোদী আম্বানিদের রিলায়েন্স, বা আদানির ফিউচার গ্রুপের মতো বড় বাণিজ্যিক গোষ্ঠীকে যতটা নেকনজরে রাখেন, ছোট, বা মাঝারি ব্যবসায়ীরা তার কাছে ততটা গুরুত্ব পায় না। ছোট কিছুতে সম্ভবত বিশ্বাসই রাখেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ