বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : বানরগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল অনেক দিনের অভুক্ত। ওরা খাবারের জন্য হাত পাতছিলো। খাবারের জন্য মানুষের কাছে বানরদের এমন আকুতি আমি আর দেখিনি। তাই দোকান থেকে ৪ হালি কলা কিনে দিয়েছি। সাথে থাকা আপেলও দিয়েছি। ওরা সেসব খাবার খুব আনন্দের সাথে খাচ্ছিল দেখে ভালো লাগল। কথাগুলো বলছিলেন সীতাকুÐের টেরিয়াইল বহু মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রতন চক্রবর্তী। তিনি গত শুক্রবার দুপুরে পূজা দিতে গিয়েছিলেন সীতাকুÐ পৌরসদর চন্দ্রনাথ মহাতীর্থের শম্ভুনাথ মন্দিরে। এখানে এসে ঝাঁকে ঝাঁকে বানর দেখে বিস্মিত হন তিনি। ইতিপূর্বে এই মন্দিরে বহুবার আসা হলেও বানরের দেখা মেলেনি। কিন্তু এদিন শম্ভুনাথ মন্দির যেন বানরের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিলো। মন্দিরের চতুর্দিকের গাছপালা, ছাদসহ বিভিন্ন স্থাপনার উপরে অসংখ্য বানর ছিলো। তবে বানরগুলোকে দেখে অভুক্ত মনে হচ্ছিল। তারা মানুষজনের খুব কাছে এসে খাবারের জন্য আকুতি করছিলো। এসব দৃশ্য দেখে শিক্ষক রতন চক্রবর্তীর মত আরো অনেক পূণ্যার্থী তাদেরকে কলাসহ নানান খাবার কিনে দেন। কিন্তু তাতেও যেন তাদের ক্ষুধা নিবারন হচ্ছিল না। এ কারণে এক পর্যায়ে মন্দির সংলগ্ন দোকানটিতেই হানা দেয় বানরের দল। কেড়ে নিয়ে যায় কলা। এসব ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত এ প্রতিবেদককে শম্ভুনাথ মন্দিরে প্রথমবার বানর দর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন অনেকে। তাদের একজন শিক্ষক রতন চক্রবর্তী। তিনি আরো বলেন, আমি জানতাম এই পাহাড়ের গভীরে অনেক বণ্যপ্রানী আছে। আছে বহু বানরও। কিন্তু লোকালয়ের এত কাছে মন্দিরে এক সঙ্গে এত বানর নেমে আসতে দেখিনি কখনো। তিনি ধারণা করছেন বনদস্যুদের কারণে পাহাড়ের গাছপালা কমে যাওয়ায় আগের মত ফল-মুল পাচ্ছে না বন্যপ্রানীরা। হয়ত যে পরিমান ফল উৎপাদন হচ্ছে তা বন্যপ্রানীদের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ কারণে খাবার না পেয়ে জীবিকার তাগিদেই তারা লোকালয়ে চলে আসছে। মন্দিরে আসা আরেক পূন্যার্থী সীতাকুÐ পৌরসদরের আমিরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা রাজিব দে প্রতিবেদককে বলেন, অভুক্ত বানরগুলোকে দেখে অনেকেই খাবার কিনে দিতে থাকেন। আমিও দোকান থেকে কলা কিনে দিয়েছি। তারা অবিকল মানুষের মত করে কলাগুলো নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে খেয়েছে। রাজিব বলেন, বানরগুলোর এত ক্ষিধে পেয়েছিলো যে, সবাই কলা কিনে দেবার পরও তাদের ক্ষুধা পূরণ হয়নি। শেষে হটাৎ তারা হানা দেয় নিচের দোকানটিতে। সেখান থেকে কলার কাঁধি থেকে বহু কলা ছিঁড়ে নিয়ে যায়।
তিনিও মনে করছেন গহীন পাহাড়ে খাদ্য সংকটের কারণে বানরগুলো বাঁচার তাগিদে এখানে এসে খাবার খুঁজছে। রাজিব আরো বলেন, মানুষ যেভাবে বানরগুলোর অবস্থা দেখে খাবার দিয়েছে তাতে বানরগুলো হয়ত আর গহীন পাহাড়ে ফিরে যাবে না। এখানে বসেই দর্শনার্থীদের দেওয়া খাবার খেয়ে থাকবে ওরা। এদিন এ বানরগুলো দেখে নানারকম মন্তব্য শোনা যায় উপস্থিত মানুষের মধ্যে। তাদেরই একজন বলেন, নির্বিচারে বন উজাড়, পাহাড় কাটা, ফলের চাষ কমে যাওয়াসহ নানা কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্যের অভাব এত তীব্র হয়ে উঠেছে যে, ওদের বেঁচে থাকাই মুস্কিল। আগে ওরা মানুষজন দেখলে ভয় পেত। কিন্তু এখন তাদের বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে যাওয়ায় সব ভয়কে জয় করে তারা মানুষের কাছে এসে খাবারের জন্য হাত পাতছে! বানরগুলোর এ অবস্থাই বুঝিয়ে দিচ্ছে জীববৈচিত্রর অস্তিত্বের সংকট চরমে। এসব মানুষ মনে করেন, শুধু বানর নয় পাহাড়ের বন্যপ্রাণীদের রক্ষায় বিশেষ কোন পরিকল্পনা না দিলে একদিন খাদ্য ও আবাসের সংকটের কারণে এ ধরণের বহুপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুÐ অভ্যন্তরীন বন বীটের বীট কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মজিদ প্রতিবেদককে বলেন, বানররা এভাবে লোকালয়ে চলে আসার প্রধান কারণ হলো পাহাড়ে খাদ্য সংকট। তিনি বলেন, অপ্রিয় সত্য কথা হচ্ছে পাহাড়ে দিনদিন জুম চাষ বাড়ছে। জুম চাষীরা গাছপালা কেটে তাদের মত করে আবাদ করে। বানর বা অন্য প্রাণী সেখানে গেলে তারা তাড়িয়ে দেয়। এভাবে দীর্ঘ পাহাড়ে কোন খাবার পায় না বানররা। তাই তারা লোকালয়ে নেমে এসে খাবার চায়। জুম চাষের কারণে বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয় আর নিরাপদ নেই। এটাও বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে বলে বন কর্মকর্তারা মনে করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।