Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশ কনস্টেবলসহ সারা দেশে নিহত ১২ জন : সড়কে বাড়ছে মৃত্যু

| প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১২ জন। এছাড়াও আহত হয়েছে আরো ৩০ জন। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
পটিয়া উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের পাইরোল এলাকায় সৌদি পরিবহনের একটি চেয়ারকোচের চাপায় সিএনজি দুই যাত্রী নিহেত হয়েছেন। নিতরা হলেন, পটিয়া পৌর সদরের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রফিকের শিশু কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস (১২) ও অপরজন বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখিল গ্রামের মাহমুদুর রহমানের পুত্র মোবারক উল্লাহ (২২)। এতে আহত হয়েছেন পৌর সদরের আবদুস সালামের কন্যা উর্মি আকতার (১৪), সাইফুল ইসলামের পুত্র সাজ্জাদ হোসেন (৩), সাইফুল ইসলাম (৪৫), আসমা আকতার (১৩)। গতকাল (শুক্রবার) দুপুর পৌনে ১টায় এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ঈদের পঞ্চম দিন পটিয়া পৌর সদরের পোস্ট এলাকার আদু তালুকদার বাড়ীর মো. রফিকের পরিবার সিএনজি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে বেড়াতে বের হন। তাদের সিএনজিটি (চট্টগ্রাম থ-১২-৫৭৩৪) মহা সড়কের পাইরোল বড়–য়া পাড়া এলাকায় পৌছলে কক্সবাজারমূখী সৌদিয়া পরিবহনের যাত্রীবাহী চেয়ারকোচ (চট্টমেট্রো চ-১১-২৭৮) চাপা দিলে ঘটনাস্থলে জান্নাতুল ফেরদৌস মারা যায়। অপরজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। নিহত ফেরদৌস আবদুর রহমানের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ মহিউদ্দিন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে ঘাতক বাসটি আটক ও ধুমড়েমুচড়ে যাওয়া সিএনজিটি উদ্ধার করেন। তবে চালক পলাতক রয়েছে।
এদিকে, রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস ডিভাইডারের উপরে উঠে যাওয়ায় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিয়ন্ত্রণ হারানো বাসের ধাক্কায় দু’টি প্রাইভেটকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসময় প্রাইভেটকারে থাকা যাত্রীরাও আঘাতপ্রাপ্ত হন।
দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে বনানীর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওদিকে, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় শহিদুল ইসলাম শহিদ (৩৫) নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শহিদুল ইসলাম জয়পুরহাটের গনিপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে। তিনি ভবেরচর হাইওয়েপুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। ভবেরচর হাইওয়েপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হাসেম আলী মুন্সী জানান, শুক্রবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকাগামী এস-আলম পরিবহনের একটি বাস বিকল হয়ে যায়। পুলিশ রেকার এনে সেটি সরাতে যায়। এসময় কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম বিকল হয়ে যাওয়া গাড়িটি সরানোর কাজে রাস্তা পাড় হতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার মাথা য় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি আরও জানান, শহিদুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অজ্ঞাতনামা গাড়িটি আটক করা যায়নি।
অন্যদিকে, রংপুরের তারাগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরো ৮জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার রুহুল আমিন (৩৮) ও হেলপার মোতালেব (৪০) এবং এশিয়া এন্টারপ্রাইজের যাত্রী নয়ন রায় (২২)।
স্থানীয় সূত্র জানান, রংপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাস দাঁড়িয়ে থেকে চাকা মেরামত কালে ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা গামী হানিফ পরিবহন নামের অপর একটি যাত্রীবাহী বাস পিছন থেকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার রুহুল আমিন (৩৮) ও হেলপার মোতালেব (৪০) এবং ওপর বাসের যাত্রী নয়ন রায় (২২)নিহত হয়। এ ঘটনায় আহতদের তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ওদিকে, রাজবাড়ীতে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংর্ঘষে আব্দুল হান্নান (৪৪) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় সদর উপজেলার রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের খানগঞ্জ ইউপির দূর্গাপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হান্নান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার সানদিয়ারা দক্ষিণমূল গ্রামের আদালত হোসেনের ছেলে।
প্রত্যক্ষদশীরা জানান, সন্ধ্যায় হান্নান মোটরসাইকেল যোগে কর্মস্থল রাজবাড়িতে ফিরছিলেন। দূর্গাপুর এলাকায় পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। হান্নানকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, গাইবান্ধা পৃথক সড়ক দুঘৃটনায় সাধক কুমার দাস(৩০) ও ছামছুজ্জামান (৩৫) নামে দু’জন নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোরে পলাশবাড়ী ইপজেলায় জুনদহ এলাকায় ও সকালে সদর উপজেলায় হাশেম বাজারে এ দুটি দুর্ঘটনা ঘটে।
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুÐ থেকে জানান, সীতাকুÐে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বারআউলিয়া, কুমিরা ও সলিমপুরে এসব ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুÐ উপজেলাটি ক্রমশ অত্যাধিক দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা হিসেবে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এমন কোন দিন নেই যেদিন এখানে দুর্ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটে না। শুধু গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখানে প্রতিদিনই একাধিক দুর্ঘটনায় প্রানহানির ঘটনা ঘটেছে। এ হিসাব যখন মহাসড়কের নিত্য যাত্রীদের মাথা ব্যাথার কারণে পরিণত ঠিক তেমনি সময়ে এর সাথে যোগ হয়েছে নানারকম অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনাও। গত সপ্তাহে এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক খুন, পানিতে ডোবা, বিদ্যুৎ স্পৃষ্টসহ বিভিন্নভাবে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫ জনের। যা মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘতর করে তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, এখানে সর্বশেষ প্রানহানির ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। এদিন দুপুরে ফেনী থেকে ডিজে পার্টি নিয়ে মিনি ট্রাকযোগে গান-বাজনা করতে করতে ঈদের আনন্দ ভ্রমন করছিলো ১৩ জন যুবক। এভাবে গান-বাজনা করতে করতে তারা চট্টগ্রাম থেকে পুনরায় ফেনীর উদ্দেশ্যে যাবার সময় বারআউলিয়া হাইওয়ে থানা সংলগ্ন সোনাইছড়ি বিদ্যালয়ের সামনে কাভার্ড ভ্যানকে ধাক্কা দিলে ট্রাকটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে ১৩ ট্রাক যাত্রী ও গাড়ি চালক আহত হয়। তাদের মধ্যে আশংকাজনক ৭জনকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাসেল (২২) নামক একজনের মৃত্যু হয়। রাসেল ফেনী ছাগল নাইয়া থানার মোঃ বাহার উদ্দিনের পুত্র। একই দিন ছোট কুমিরায় মহাসড়ক পারপারের সময় প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোঃ ফাহিম (১৫) নামক এক কিশোর মারা যায়। এসব ঘটনার পর রাত ১১টার দিকে মহাসড়কের সলিমপুরে রাস্তার পাশে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অজ্ঞাত পরিচয় ঐ যুবক কোন গাড়ির ধাক্কায় নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আদমদীঘি (বগুড়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়কের আদমদীঘি হাসপাতাল গেটের নিকটে আটো চার্জার ও ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ অন্তত ১০জন আহত হয়েছে। আহতদের কিছু আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহতরা হলেন- উপজেলার কেশরতা গ্রামের ছাত্তার ও তার পুত্রবধূ আনজুয়ারা বেগম, নাতী সাদিকুল ইসলাম, একই উপজেলার ডুররী গ্রামের মজনু, তালশন গ্রামের লক্ষণন চন্দ্র, নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের আমেনা খাতুনসহ ১০জন আহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত বৃহস্পতিবার সাড়ে ১০টার দিকে মহাসড়কের আদমদীঘি হাসপাতাল গেটের নিকটে একটি শ্রমিক সংগঠনের লোকজন ব্যারিকেট দিয়ে মিনি ট্রাক, পিকআপ ও অবৈধ ভটভটি মহাসড়কের পাশে থামিয়ে চাঁদা আদায়ের জন্য মিনিট্রাক আটকালে নওগাঁর অভিমূখী ট্রাকটি ওভারটেক করতে গেলে যাত্রীবাহি আটো চার্জারের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে আটো চার্জাটি দুমড়ে মুচকে যাত্রীরা ছিটকে পড়ে। পুলিশ ট্রাক ও অটো চার্জারটি উদ্ধার রকে থানা হেফাজতে নিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ