Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিকিম সীমান্তের ভূমি নিয়ে চীনের কঠোর হুঁশিয়ারি ভারতকে

আলোচনায় বসার ডাক বেজিংয়ের

প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০১ এএম, ১ জুলাই, ২০১৭

তিব্বতের ত্রিমুখী সংযোগস্থলে মুখোমুখি ৩ হাজার সেনা : আলোচনায় বসার ডাক বেজিংয়ের
ইনকিলাব ডেস্ক
ভারতকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিল প্রতিবেশী চীন। দু’দেশের মধ্যে চলামান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে তিব্বতের ত্রিমুখী সংযোগস্থলে ৩ হাজার সেনা সদস্য মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। ভারত-ভূটান-চীন সীমান্তে থাকা ডোংলাঙ এলাকা দখল নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ভারত ও চীনের মধ্যে ঠাÐা লড়াই চলছে। এবার সেই ঠাÐা লড়াইকেই সামনে এনে ভারতকে সরাসরি হুমকি দিয়েছে চীন। এমনকী, ১৯৬৭-র ভারত-চীন যুদ্ধের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তারা। তবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি চীনা হুঁশিয়ারীর জবাবে বলেছেন, ১৯৬২ সালের পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। ২০১৭ সালে ভারত বদলে গিয়েছে।
দিন কয়েক আগেই সিকিম সীমান্তে থাকা ওই এলাকায় ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অভিযোগ তোলে চীন। ডংলঙ প্রদেশকে নিজেদের অংশ বলে বরাবরই দাবি করে এসেছে চীন। অন্যদিকে, ভারত ও ভূটান ওই এলাকাটিকে ভূটানের অংশ বলেই মনে করে। আর এখানেই বেধেছে গোল।
চীনের পক্ষ থেকে বার বার অভিযোগ তোলা হচ্ছে, ভারতীয় সেনা জোর করে ওই এলাকায় ঢুকে চীনা বাঙ্কার ভেঙে দিচ্ছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে ভারতের তরফে পাল্টা দাবি করা হয়েছে চীনই ভারত ভূখÐে ঢুকে এই কাজ করছে। দুই দেশের মধ্যে পরিস্থিতি ক্রমাগত জটিল হচ্ছিল গত কয়েকদিন ধরেই। এবার সেই অবস্থাতেই ভারতকে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসার আহŸান জানিয়েছে চীন। সেই সঙ্গে তাদের তরফে এটাও বলা হয়েছে, ভারত যেন কোনও পরিস্থিতিতেই ডংলঙ নিয়ে মাথা না ঘামায়। কারণ ওটা চীনের অংশ।
স¤প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেন, ভারত যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। বিপদ চীন থেকেই আসুক বা পাকিস্তান থেকে। এমনকী যদি তা দেশের ভিতর থেকেও হয়। জেনারেল রাওয়াত বলেছিলেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী একসঙ্গে ‘আড়াইখানা যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি রয়েছে। আড়াইখানা শক্তির বিরুদ্ধে টানা লড়াই চালিয়ে যেতে ভারতীয় সেনাবাহিনী মানসিক ও শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
আড়াইখানা যুদ্ধ বলতে তিনি চীন, পাকিস্তান এবং ভারতের অভ্যন্তরে মাওবাদী ও অন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুদ্ধের কথা বলেছিলেন। রাওয়াতের মতে, মাওবাদী ও অন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও সিআরপিএফ তো যুদ্ধই চালাচ্ছে।
ভারতের সেনাপ্রধানকে টার্গেট করে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মুখপাত্র কর্নেল উও কিয়ান বলেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কেউ বার বার ‘যুদ্ধ’ শব্দটা খুব উচ্চারণ করছেন। এরকম ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ করা থেকে তারা বিরত থাকুন। যুদ্ধ শব্দটি বার বার উচ্চারণ করলেই সমস্যা মিটে যাবে না। ভারতীয় সেনাকর্তারা বরং ‘ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন’। ইতিহাস থেকে দেখুন যুদ্ধ করার কী ফল হয়েছিল তাদের।’
অন্যদিকে, ডংলং-এ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ করে বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং বলেছেন, ‘ভারত ওই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নিলেই তবেই সমস্যা মিটতে পারে। ওই ছবি আমরা চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করবো। অন্যথায় ভারতের সঙ্গে কোনো অর্থপূর্ণ আলোচনায় বসা সম্ভব নয়।’
এদিকে, চীনা সামরিক মুখপাত্রের হুঁশিয়ারি আসলে ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের প্রতিই ইঙ্গিত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ওই যুদ্ধে ভারতের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ভারতের প্রায় ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার পার্বত্য জমি সেসময় চীনের দখলে চলে যায়। চীনা সেনারা সেসময় অরুণাচল প্রদেশ ও অসমে ব্যাপক হত্যাকাÐ চালিয়েছিল।
চীনের সরকারি প্রচার মাধ্যম গেøাবাল টাইমসেও নয়াদিল্লিকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ভারতকে ‘শিক্ষা’ দেয়া দরকার বলে মন্তব্য করা হয়েছে। তাদের নীরবতাকে যেন কোনওভাবেই দুর্বলতা না ভাবা হয় বলে বলা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ‘উদ্ধত’ বলেও আখ্যা দিয়েছে গেøাবাল টাইমস।
স¤প্রতি চীনা বাহিনী সিকিমের লালটেন পোস্ট এলাকায় ঢুকে ভারতীয় বাহিনীর দু’টি বাঙ্কার ভেঙে দিয়ে চলে যায়। যদিও ভারতের দাবিকে অস্বীকার করে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে তারা নয়, বরং ভারতীয় সেনারাই চীনের এলাকায় ঢুকে পড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতে গ্যাংটকে ১৭ মাউন্টেন ডিভিশন ও কালিম্পংয়ে ২৭ মাউন্টেন ডিভিশনের সদরদপ্তর পরিদর্শন করেন।
গণমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, দু’দেশের প্রায় তিন হাজার সেনা জওয়ান এখন সিকিম, ভুটান ও তিব্বতের ত্রিমুখী সংযোগস্থলে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
৬২-র সেই ভারত আর নেই : জেটলি
১৯৬২ সালের যুদ্ধের ফলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভারতকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে চীন যে বার্তা দিয়েছে তার পাল্টা জবাবে চীনের বিরুদ্ধে অন্য দেশের জমি দখল করার অভিযোগ করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেছেন, ১৯৬২ সালের পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। ২০১৭ সালে ভারত বদলে গেছে।
ভারত, চীন ও ভুটান সীমান্তের অঞ্চল ডংলঙ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। এই সমস্যা না মেটা পর্যন্ত এই অঞ্চলের শান্তি বজায় রাখার জন্য চীনের সঙ্গে চুক্তি করেছিল ভুটান। কিন্তু স¤প্রতি এই অঞ্চলে সেনা শিবির পর্যন্ত একটি রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে চীন। অবিলম্বে এই কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে ভুটান।
ডংলঙে কথিত ‘আগ্রাসন’ নিয়ে চীনকে পাল্টা আক্রমণ করে জেটলি বলেছেন, ‘ভুটানের বিবৃতিতেই স্পষ্ট হয়ে গেছে, ওই অঞ্চলটি তাদের। সেটি ভারতীয় সীমান্তের কাছে। সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে ভারত ও ভুটানের চুক্তি রয়েছে। ভুটানের বক্তব্যে পরিষ্কার, চীন তাদের জমি দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। চীন যেভাবে অন্য দেশে ঢুকে পড়ছে, সেটা ভারত করে না।’ সূত্র : ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ