পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতজুড়ে গত মধ্যরাত থেকেই বাস্তবায়িত হয়েছে জিএসটি। বাস্তবায়িত হয়েছে এক দেশ, এক কর ব্যবস্থা। গত মধ্যরাতে সংসদে বিশেষ অধিবেশনের মাধ্যমে চালু হয়েছে জিএসটি যুগ। ৩০ জুন রাত বারোটার ঘণ্টা বাজার পরই ভারত প্রবেশ করেছে জিএসটি অর্থাৎ ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স’ যুগে। এরপর কী হবে সেই নিয়ে ধোঁয়াশায় অধিকাংশ ভারতবাসী। অনেকেই বুঝতে পারছেন না সাধারণ মানুষের মধ্যে এর কী প্রভাব পড়তে চলেছে। আমজনতার লাভ হবে না ক্ষতি তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন মহলে জিএসটি এখন আলোচনার মূল বিষয়।
ভারতীয় পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে গতরাত সাড়ে ১১টার পর এক ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, অন্যান্য মন্ত্রীরা, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া, সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর, রতন টাটা, অমিতাভ বচ্চন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, লালকৃষ্ণ আদভানী, শরদ পওয়াররা। সিপিএম এই অনুষ্ঠান বয়কট করলেও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এই অনুষ্ঠানে হাজির। তিনি জিএসটি নিয়ে গঠিত কমিটির প্রথম প্রধান ছিলেন। সেই কারণেই বিশেষ আমন্ত্রিত।
প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টে পৌঁছনোর পর তাকে স্বাগত জানান সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার। এরপর প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের সঙ্গে সেন্ট্রাল হলে গিয়ে নির্দিষ্ট আসনে বসেন প্রেসিডেন্ট। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর ভাষণ দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এক দেশ, এক কর, এক বাজার। সারা বিশ্বে যখন অর্থনৈতিক মন্দা, আমরা তখন জিএসটি-র পথে। দেশ ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। অসীম দাশগুপ্তর থেকে জিএসটি-র প্রথম পাঠ পেয়েছি। এমপাওয়ারড কমিটির প্রধান অমিত মিত্রসহ সকলেই সাহায্য করেছেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একসঙ্গে কাজ করবে।
অর্থমন্ত্রীর পর ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে চলেছি। সকলের যৌথ প্রচেষ্টার ফল জিএসটি। কোনও একটি দল বা সরকারের কৃতিত্ব নয়। সংসদের সেন্ট্রাল হল বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। জিএসটি চালু করার জন্য এর চেয়ে পবিত্র জায়গা ছিল না। জিএসটি নিয়ে আতঙ্কে ছিল অনেক রাজ্য। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি দীর্ঘ আলোচনা করেছে। তারই ফল স্বরূপ জিএসটি চালু হচ্ছে। এটা একসঙ্গে পথ চলার শক্তি দেবে। জিএসটি টিম ইন্ডিয়ার প্রমাণ। জিএসটি-তে গরিব মানুষের কথা ভাবা হয়েছে। লক্ষ্য দূরে হলেও, পৌঁছনো সম্ভব। এক দেশ, এক করের স্বপ্ন সফল। করের অব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাচ্ছে দেশ।
জিএসটি প্রয়োগ করা হলে সাধারণ মানুষের জীবনে কী কী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে?
১. জিএসটি অর্থাৎ এক দেশ, এক কর। অর্থাৎ আর আলাদা করে কোনও কর দিতে হবে না ক্রেতাদের। ক্রেতাকে একটি পণ্য কিনতে বা পরিষেবা নিতে বর্তমানে একাধিক ট্যাক্স বা কর দিতে হয়। পরিষেবা কর, উৎপাদন শুল্কের মতো কিছু কর নেয় কেন্দ্র। রাজ্যগুলি নেয় সেলস ট্যাক্স, লাক্সারি ট্যাক্স, ভ্যাটের মতো কর। আলাদাভাবে না নিয়ে, এক ছাতার তলায় সব করকে আনতেই গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা পণ্য ও পরিষেবা করের জন্ম। অর্থাৎ, ক্রেতা একটি পণ্য কিনলে বা পরিষেবা নিতে চাইলে যে একটিমাত্র কর দেবেন, সেটাই জিএসটি।
২. এক ট্যাক্স হয়ে যাওয়া কর প্রদান ও আদান অনেক সহজ হয়ে উঠবে। ৩. এবার থেকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে জিনিসপত্র বা পরিষেবার জন্য একই কর দিতে হবে। ৪. মনে করা হচ্ছে জিএসটি চালু হলে এক করের নীতি হওয়ায় স্বচ্ছতা আসবে অনেকটাই। ৫. কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আগে জানিয়েছিলেন, এই ক্যাটোগরির ৯০ শতাংশ পরিচালন করবে রাজ্য, বাকিটুকু কেন্দ্র। এই রাজস্ব আয় কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ৫০:৫০ ভাগে বন্টিত হবে। ৬. নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস শাক সবজি, তাজা ফল, দুধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য, গোশত, ডিম, চাল, গমের উপরে কোনও কর বসছে না। ৭. জিএসটি বাস্তবায়িত হলে দাম বাড়বে চা, কফি ও মশলার। এই জিনিসগুলিতে এবার থেকে ৫ শতাংশ জিএসটি দিতে হবে। বর্তমানে যাতে ৩-৪ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। ৮. টোব্যাকো, লাক্সারি গুডসেও দিতে হবে বাড়তি ট্যাক্স। এখন থেকে এই পণ্যগুলির জন্য দিতে হবে ২৮ শতাংশ ট্যাক্স। ৯. আজ পয়লা জুলাই থেকে জিএসটির কারণে ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড এসি-র টিকিটের দাম বাড়তে চলেছে। ১০. ব্যাঙ্কিং পরিষেবাতে ১৮ শতাংশ জিএসটি বাস্তবায়িত হবে। এখন ব্যাঙ্কিং পরিষেবার ক্ষেত্রে দিতে হয় ১৫ শতাংশ জিএসটি। এবার থেকে ডিমান্ড ড্রাফ্ট, ফান্ড ট্রান্সফারে বেশি টাকা দিতে হবে। সূত্র : নিউজ ১৮।
ঘোর বিপদের মুখে গণতন্ত্র : মমতা
‘এমন এক মধ্যরাতেই স্বাধীনতা পেয়েছিল ভারত। শুক্রবার মাঝরাতে সেই দেশের গণতন্ত্রই ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে। ভারতেরন কেন্দ সরকারের জিএসটি চালুর সিদ্ধান্তকে আরও একবার এইভাবেই সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ক্ষোভ উগরে নেত্রী লিখেছেন, ‘১৪ অগাস্ট ’৪৭ মধ্যরাতে ভারত স্বাধীন হয়েছিল। ৩০ জুন ২০১৭, মাঝরাত গণতন্ত্র ঘোর বিপদের মুখে।’
এখানেই শেষ নয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, ফিরে আসছে ইনসপেকটর রাজের প্রহসন। তার অভিযোগ ‘জিএসটির মধ্যেই লুকনো আছে গ্রেফতারির বন্দোবস্ত। ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হবেন। আজ মধ্যরাত থেকে বিপর্যয় নামার আশঙ্কা করছি। উদ্যোগপতি ও মানুষের উপর নামছে বিপর্যয়।’
ক্ষুব্ধ তৃণমূল সুপ্রিমো জানিয়েছেন, প্রথম থেকেই জিএসটি-এর গ্রেফতারি ধারাটির বিরোধিতা করে এসেছে তৃণমূল। এটা প্রায় সরকারি জোরজুলুম বলে মনে করছেন তিনি। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘জিএসটি আইনে কিছু ক্ষেত্রে তো জামিন অযোগ্য ধারাও রাখা হয়েছে। বর্তমানে ভ্যাট না মানলে শাস্তির বিধান আছে কিন্তু জিএসটিতে ইন্সপেকটরদের গ্রেফতার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য এই কালা আইনের বিরোধিতা করলেও কর্ণপাত করেনি কেন্দ্র সরকার।’
(এর আগের খবর পৃষ্ঠা-৬)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।