পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহেশখাল বাঁধ ভাঙার পরও ভাসছে আগ্রাবাদ : বিশেষজ্ঞদের মতে- খাল-ছরাগুলো সংস্কার করে ¯øুইচ গেইট ও শহররক্ষা বাঁধের বিকল্প নেই
শফিউল আলম : গত এক সপ্তাহ যাবত সাময়িক হালকা বৃষ্টি ছাড়া চট্টগ্রামে ঝলমলে রোদ। তবুও ভাসছে আগ্রাবাদ। সেই সাথে আশপাশের হালিশহর, গোসাইলডাঙ্গা, কুসুমবাগ, বন্দর কলোনীসহ বিশাল এলাকা। বর্ষণ না হলেও সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে নিয়মিত প্লাবিত হচ্ছে বন্দরগরীর ‘নাভি’ আগ্রাবাদ। গত ১৩ জুন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীকে (যদিও একাংশ) সাথে নিয়ে বহু ঢাকডোল পিটিয়ে আগ্রাবাদের কথিত ‘দুঃখ’ সেই মহেশখালের বাঁধটি ভেঙে দেয়ার কাজ ‘উদ্বোধন’ করে। যদিও তখন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে ‘সতর্ক’ আশাবাদের সাথে বলেছিলেন, তিনি এলাকাবাসীর ‘দাবির প্রতি সম্মান’ দেখানোর জন্যই তিনটি সংস্থার যৌথ সভায় (১ জুন) এ বাঁধটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকে আরও ব্যাপক মাত্রায় জোয়ারের কবলে লাখ লাখ মানুষের পানিবদ্ধতার দুঃখ-দুর্দশা এবং পুরনো সমস্যাটি নিয়েছে নতুন মোড়। বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান এ প্রসঙ্গে আলাপকালে গতকাল (শুক্রবার) ইনকিলাবকে বলেছেন, আবেগের বশে হুট করে মহেশখালের বাঁধটি ভেঙে দিয়ে সুফল আসেনি। খুবই প্রয়োজন ছিল বাঁধের সাথে পরিকল্পিতভাবে ¯øুইচ গেইট তৈরি করার। সেদিকে মনোযোগ দেয়া হয়নি। পাম্পগুলোও সচল ছিল না। বাঁধ ভাঙার পরও এখন দিনে দু’বার জোয়ার-ভাটায় আগ্রাবাদ ডুব-ভাসি করছে। এমনকি শীতকালেও আগ্রাবাদ জোয়ারে ডুবেছে। জোয়ার ভাটা সম্পূর্ণ একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার। বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত ও যথাযথ সমীক্ষা, সমন্বয় করেই আগ্রাবাদসহ সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রাম মহানগরীকে জোয়ার ও বৃষ্টি-জনিত পানিবদ্ধতার সঙ্কট থেকে মুক্ত করার উপায় খুঁজতে হবে। তিনি অবশ্য বলেন, বর্তমানে বন্দর রিপাবলিক ক্লাবের স্থানের তুলনায় ৫নং জেটির কাছে সেতু সংলগ্ন মহেশখালের মুখে বর্ধিত বাজেট বরাদ্দ রেখে ¯øুইচ গেইট সম্বলিত বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া হলে তাতে সুফল আসবে।
অপর দু’জন বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলী জানান, মহেশখালসহ নগরীর খাল-ছরাগুলো অবিলম্বে সংস্কার, অবৈধ দখলমুক্ত করা, মূল খতিয়ান-ম্যাপ অনুসারে খালের অবস্থান ফিরিয়ে এনে উভয় তীর বাঁধানো, সড়ক রাস্তাঘাট সেতু-কালভার্ট উঁচু করে নির্মাণ, আঁকাবাকা খাল সোজাকরণ ও ভারাট-দূষণ কঠোরভাবে রোধ করার উপর তাগিদ দিতে হবে। সর্বোপরি পতেঙ্গা-হালিশহর থেকে কাট্টলী-ফৌজদারহাট পর্যন্ত দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত মজবুত ও স্থায়ী চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধের বিকল্প নেই। তদুপরি মহানগরীতে অপরিকল্পিতভাবে সড়ক রাস্তাঘাট নির্মাণ, পাহাড়-টিলা ধ্বংস, খাল-নালা ভরাট ও বেদখল বন্ধ না হলে পানিবদ্ধতার সঙ্কট আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। প্রসঙ্গত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় গিয়ে মেশা মহেশখালের উপর ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকায় নির্মিত হয় অপরিকল্পিত বাঁধ। এলাকার একাংশের মানুষের দাবির মুখে যা ভাঙা হলো ১৩ জুন। পানিতে গেল বাঁধ নির্মাণের বিপুল অর্থ।
বন্দরনগরীর বনেদী পাড়া আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ২২নং রোডের স্থায়ী বাসিন্দা একজন তরুণ আইটি প্রকৌশলী জানান, বিয়ের পর প্রথম ঈদে এবার শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সন্ধ্যার জোয়ারে রাস্তাঘাট ডুবে যাবার আগেভাগেই তাকে ঘরে ফিরতে হয়েছে। আগ্রবাদে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ রোডে তার অফিসে যাওয়া-আসার পথেও সেই একই বিড়ম্বনা। আগ্রাবাদ ও হালিশহরের কয়েকজন বাসিন্দার সাথে আলাপচারিতায় তাদের দুর্ভোগের চালচিত্র হলো, সকাল-সন্ধ্যায় জোয়ারের দুইটি টাইম মাথায় রেখেই অভিনব জীবনযাত্রা চালিয়ে নিতে হচ্ছে। ঘড়ির কাটার মতো জোয়ারের সময়ে ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হয়। আবার ভাটার সময় রাস্তাঘাট সড়ক অলিগলির পানি নেমে গেলে স্বাভাবিক চলাফেরা করা যায়। তবে অনেক জায়গায় জোয়ারের পানি আটকে গিয়ে কম-বেশি দিনভর কষ্ট পোহাতে হয়।
এ অবস্থায় চট্টগ্রামের ‘নাভি’ আগ্রাবাদ এলাকাটি সমুদ্র উপকূলের সাথে লাগোয়া না হলেও পড়েছে নিয়মিত জোয়ারের কবলে। এতে করে সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আমদানি-রফতানি, কাস্টমস, কর ও শিপিং-সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি অফিস পাড়া, মসজিদ, হাসপাতাল-ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, শো-রুম, গার্মেন্টস কারখানা, গুদাম, আড়ত, আবাসিক এলাকা, রাস্তাঘাট সড়ক মাঠ জোয়ারে দিনে দু’বার প্লাবিত হচ্ছে। ভাটায় পানি কমছে। যা পরিণত হয়েছে আগ্রাবাদসহ বিশাল এলাকার মানুষের জন্য ‘দুঃখের বার মাইস্যা’। শুধুই জোয়ারের দুর্ভোগ নয়; আটকে থাকা পানির সাথে নালা-নর্দমা ও ডাস্টবিনের গলিত ময়লা-আবর্জনায় অবর্ণনীয় কষ্টে অতিষ্ঠ মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। আগ্রাবাদ-হালিশহরে ৩ থেকে ৪ বছর যাবত এ সমস্যা ক্রমেই বেড়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক সুরাহা যেন খুঁজে পায় না। আগ্রাবাদ হালিশহর ছাড়াও পতেঙ্গা, কাটগড়, দক্ষিণ হালিশহর থেকে শুরু করে সাগরিকা, কাট্টলী-ফৌজদারহাট উপকূলব্যাপী নিয়মিত জোয়ারে ডুবে যাচ্ছে। বন্দরনগরীর পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণের বিস্তীর্ণ এলাকার ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় বিপর্যস্ত।
নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি আশিক ইমরান অভিমত ব্যক্ত করেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হয়ে যাওয়ার কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তার জ্বলজ্যন্ত নজির হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরী। আগেও জোয়ার-ভাটা ছিল। কিন্তু তাতে চট্টগ্রাম এভাবে ডুবতে দেখা যায়নি। এখন শীতকালেও আগ্রবাদ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। বেড়েছে পানিবদ্ধতার সমস্যা। তবে এডহক (সাময়িক) সমাধানের চেষ্টা করলে কোন সুফল আসবে না। সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা, বিভাগ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সমন্বিতভাবে সুরাহা করতে হবে। তিনি বলেন, আগ্রাবাদসহ চট্টগ্রাম নগরীর জোয়ার ও পানিবদ্ধতার সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যাপক একটি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তবে তা হবে দীর্ঘমেয়াদি এবং বিপুল অঙ্কের অর্থায়ন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও জটিল। এর আগে স্বল্পমেয়াদে জোয়ার-পানিবদ্ধতার জনদুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়াগুলো এখনই শুরু করা অপরিহার্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।