পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : জটিল আকার ধারণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারসহ পণ্যের জট। সেই সাথে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে জাহাজের জট। এই দ্বিমুখী জট ক্রমেই বেসামাল হয়ে উঠছে। বন্দরের জেটি-বার্থ ইয়ার্ড-শেডগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। জট পরিস্থিতির আরও অবনতি এড়ানোর উপায় নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। জেটি-বার্থে ভিড়ার জন্য বহির্নোঙর ও সাগরের কুতুবদিয়ায় সারি সারি অলস অপেক্ষায় আছে জাহাজবহর। আমদানি-রফতানিমুখী জাহাজের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বন্দরে কন্টেইনার ও জাহাজজটের আরো অবনতি হয়েছে। কোন জাহাজ কখন জেটি-বার্থে ভিড়তে পারবে সেই সিডিউল ঠিক রাখা দূরে থাক; বরং ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি প্রতিটি জাহাজের অনিশ্চিত অপেক্ষার জন্য বাড়তি ফিক্সড অপারেটিং কস্ট বাবদ দৈনিক হাজার হাজার ডলার হারে ডেমারেজ বা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় গার্মেন্টস খাতসহ রফতানিমুখী শিল্পে পড়তে শুরু করেছে বিরূপ প্রভাব। লিড টাইম ঠিক রাখার উপায় নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় আছেন রফতানিকারক ও বিদেশি বায়াররা। আবার আমদানি শিল্প কাঁচামাল খালাসে অনিশ্চয়তার কারণে বিপাকে পড়েছেন শিল্প মালিকগণ।
তবে ঈদ অবকাশের অজুহাতে অনেক আমদানিকারক বন্দরজটের এই পরিস্থিতি সত্তে¡ও সময়মতো পণ্যসামগ্রী খালাস, ডেলিভারি পরিবহন না নিয়ে যেন নির্লিপ্ত থেকেই নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। পণ্য ডিসচার্জের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের তিন শিফটে প্রস্তুতি থাকলেও বন্দর ব্যবহারকারীদের একাংশের সাড়া তেমন নেই। যেহেতু বন্দর কার্যক্রম হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ চেইন ওয়ার্কের প্রক্রিয়া। এটি ব্যাহত হওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে জটের আকার। সমগ্র বন্দরে গতকাল বিকেল পর্যন্ত কন্টেইনারের স্তুুপ জমে উঠে ৪০ হাজার ৩শ’টি। অথচ বন্দরে কন্টেইনারের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৩৬ হাজার ৩৫৭। এর পাশাপাশি বন্দরের বহির্নোঙরে, কুতুবদিয়া সাগরে অপেক্ষমান আমদানি জাহাজের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত বন্দর জেটি-বার্থে বার্থিং করার (ভিড়ার) জন্য সেখানে বিভিন্ন পয়েন্টে অলস ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে ২৭টি জাহাজ। আর ঈদের ছুটির আগে অপেক্ষায় থাকা জাহাজ ছিল ১৫টি। বন্দরজট হালকা করতে যে কোন সময়েই কনজেশন সারচার্জ বা জটের মাসুল আরোপ করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়। যে কোন সমুদ্র বন্দরে স্বচ্ছন্দে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তত ৩০ শতাংশ স্থান, ধারণক্ষমতা ও অবকাঠামো খালি রাখার বিধি-বিধান রয়েছে আঙ্কটাড ও অন্যান্য পোর্ট-শিপিং কনভেনশনে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর পণ্যভার যেন উপচে যাচ্ছে বছরের অধিকাংশ সময়েই।
সঙ্কটের পেছনে ৫টি কারণ
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে মূলত পাঁচটি কারণেই কন্টেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে সমস্যা আর সঙ্কট। এক. সা¤প্রতিক টানা বৈরী আবহাওয়ায় বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কাজকর্ম ব্যাপকভাবে বিঘিœত ও বিলম্বিত (ডেফার) হয়। দুই. ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে থেকেই ‘ঈদ আমেজে’ বন্দর-শিপিং-কাস্টমস-সিএন্ডএফ, স্টিভিডোরিং, ফ্রেইড ফরোয়ার্ডার্স, পরিবহন এজেন্টসহ বন্দর-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত কর্মব্যস্ততা শুরু না হওয়া। আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত কাজেকর্মে এই ভাটা চলতে পারে। বন্দর-নির্ভর বেসরকারি আইসিডি তথা অফডকেও চলছে একই ঢিমেতালে অবস্থা। এতে করে আমদানি পণ্য জাহাজবহর থেকে জেটি-বার্থে যে হারে ও পরিমাণে খালাস হচ্ছে সেই তুলনায় ডেলিভারী পরিবহন হচ্ছে অনেক কম। আর ক্রমাগত বন্দরে পণ্যের মজুদ বৃদ্ধি থেকে বাড়ছে জট। বার্থে-ইয়ার্ডে কন্টেইনার খালাস ও রাখার মতো খালি জায়গা না থাকায় বহির্নোঙরে দেখা দিয়েছে জাহাজের জট।
তিন. চট্টগ্রাম বন্দরে গত প্রায় এক দশকের মধ্যে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম (ইকুইপমেন্টস) সংগ্রহ করা হয়নি। বন্দর দীর্ঘদিন যাবত ধুঁকছে যন্ত্রপাতির সঙ্কটে। এ সংক্রান্ত ১১শ’ কোটি টাকার ৬১ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জাম ক্রয় প্রকল্প ঝুলে গেছে। চার. বন্দরে কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনাল (কেসিটি) নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে করে কন্টেইনার ধারণ, মজুদ, সংরক্ষণ, হ্যান্ডলিংয়ের স্থানাভাব এবং সার্বিকভাবে সক্ষমতাও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। অথচ লালদিয়ার চরসহ বন্দরের ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য পটেনশিয়াল বিভিন্ন জায়গা-ভূমি ইজারায় ছেড়ে দেয়ার চরম অদূরদর্শী পদক্ষেপের জন্য আজ খেসারত দিতে হচ্ছে বন্দরকেই। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘকাল পর পরিকল্পিত পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল প্রকল্পের বাস্তবায়ন মুখ থুবড়ে পড়েছে সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বেড়াজালে। পাঁচ. বন্দরের যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতি এবং সক্ষমতার যখন নাজুক অবস্থা তখন বন্দরে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্যতম প্রধান কন্টেইনার জেটি-বার্থ চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) ভারী দুইটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন বেপরোয়া জাহাজের আঘাতে আংশিক বিধ্বস্ত হওয়ার সর্বশেষ এক ঘটনায়।
গত ২৫ জুন বিকেলে বহির্নোঙর থেকে আগত কন্টেইনার বোঝাই জাহাজ ‘এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজ’ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিসিটি জেটিতে তীব্র গতিতে আঘাত করে। ফলে সিসিটি জেটি-বার্থের উপর রেল ট্র্যাকে অবস্থানরত দুইটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এতে বন্দরের সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা। আংশিক বিধ্বস্ত দু’টি ক্রেনের মধ্যে একটি বেঁকে রেল ট্র্যাক থেকে স্থানচ্যুত হয়ে গেছে। আরেকটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ভেঙে গেছে। এরপর থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য সিসিটি জেটি-বার্থ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সিসিটির আরেকটি বার্থ চালু থাকলেও যান্ত্রিক সমস্যার কারণে সেটি প্রায়ই অচল থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, দেশীয় কারিগর দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কী গ্যান্ট্রি ক্রেন দু’টি মেরামত সম্ভব নয়। বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্ট কারিগরি টিমকে খবর দেয়া হচ্ছে। তারা আসার পর মেরামত হলেই চালু করা যাবে দুইটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন। এটি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষও হতে পারে। সিসিটির ৪টি ক্রেনের মধ্যে দু’টিই অচল হয়ে পড়ায় এই প্রধান কন্টেইনার স্থাপনায় সার্বিক উৎপাদনশীলতা অর্ধেক হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় বন্দরে যদি গিয়ারলেস (ক্রেনবিহীন) কন্টেইনার ফিডার জাহাজের আসা-যাওয়া বেড়ে যেতে থাকে তাহলেও কন্টেইনার এবং জাহাজের জট বৃদ্ধি পাবে। সিসিটি জেটিতে আঘাতকারী ‘এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজ’ জাহাজের বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তবে ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
সীমিত যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো
চট্টগ্রাম বন্দর-শিপিংয়ে প্রবৃদ্ধির সমানুপাতে বিশেষত জেটি-বার্থ, ইয়ার্ড-শেড, যান্ত্রিক সরঞ্জামসহ অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামো সুবিধা বাড়ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনারের প্রবৃদ্ধির হার বর্তমানে ১৫ শতাংশেরও ঊর্ধ্বে। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি-রফতানি প্রবাহ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দরে গতবছর ২০১৬ সালে ৭ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩১ মেট্রিক টন কার্গো এবং ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৯ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। ২০১৬ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং খাতে প্রবৃদ্ধি এসেছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। সাধরণ খোলা কার্গো (ব্রেক বাল্ক) হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধির হার ১৭ শতাংশ। অথচ দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরে অবকাঠামোর প্রবৃদ্ধির ধারা বছর বছর নেতিবাচক।
চট্টগ্রাম বন্দর ভারী যন্ত্রপাতি বা ইকুইপমেন্টের সঙ্কটে ধুঁকছে দীর্ঘদিন যাবত। বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও সিসিটিতে রাবার টায়ারড গ্যানট্রি ক্রেন (আরটিজি) রয়েছে মাত্র ১০টি। অথচ দৈনিক কাজ সামাল দিতে প্রয়োজন কমপক্ষে ২২টি। এতে করে জাহাজ থেকে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ছে কন্টেইনার জট। বহির্নোঙরে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে জাহাজের বহরকে। জরুরিভিত্তিতে বন্দরে ১১টি কী গ্যানট্রি ক্রেন কেনার প্রক্রিয়াও থমকে গেছে। শুধুই তাই নয় বন্দরে ১১শ’ ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬১ ধরনের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের মুনাফালব্ধ নিজস্ব তহবিল থেকে এরজন্য অর্থায়নের কথা। কিন্তু ক্রয় প্রক্রিয়ার ধরণ কী হবে এবং আরও বিভিন্ন জটিলতায় যান্ত্রিক সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে না। তবে এ সংক্রান্ত ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হয়নি এখনো। প্রস্তাবিত ৬১ ধরনের যন্ত্রপাতির হিসাবে রয়েছে- ১০টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন, রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেন, স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, রীচ স্ট্র্যাকার, কন্টেইনার মোভার, রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন প্রভৃতি। যার সবগুলোই কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী ভারী যন্ত্রপাতি। গত এক দশকে বন্দরে এ ধরনের সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়নি। শুধুই নৌ ও অর্থ মন্ত্রণালয় আর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ফাইল চালাচালি হয়ে আসছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।