পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : যাত্রীদের চাহিদা ও প্রাপ্তির মধ্যে অনেক ফারাক। তারপরেও উন্নতি হচ্ছে রেলওয়ের। চাহিদা অনুযায়ী টিকিট ও ট্রেন সংকট কাটেনি। তারপরেও এবার ঈদে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার যাত্রী বহন করেছে রেলওয়ে। নতুন কোচ যুক্ত হওয়ায় সারাদেশে ট্রেনের আসন সংখ্যা ৩০ হাজার বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে ১৭১টি নতুন কোচ ও ২১টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ট্রেনের বহরে যোগ হয়েছে। লাখ লাখ যাত্রী বহন করেও এবার ঈদে ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। বরং আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় উন্নতি হয়েছে। এসব কারনে ট্রেনের উপর যাত্রীদের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে টিকিটের চাহিদাও। জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের শতভাগ সেবা দেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনগণকে দরদ দিয়ে ভালোবাসেন বিধায় জনগণ যাতে স্বাচ্ছন্দে ট্রেনে ভ্রমণ করে স্বজনদের সাথে ঈদ করতে পারে-সেজন্য তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ি আমরা আমাদের কাজে তৎপর ছিলাম। সে কারনে গতবছরের মতো এবারও ট্রেনের সিডিউলের কোনো বিপর্যয় ঘটেনি। গত বছরের মতো এবারের ঈদেও আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। আগামীতেও হবো ইনশাল্লাহ।
‘৯ টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে’- এই প্রবাদটির এক সময় বহুল প্রচলন ছিল। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ছিল রেলের সবচে বড় সমস্যা। যাত্রীসেবার মান বলে কিছু ছিল না। গত কয়েক বছরে এ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পুরনো সেই বদনাম কাটিয়ে রেল এখন উন্নতির দিকে। রেলওয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা গেছে, ছয় বছরে রেলের সময়ানুবর্তিতা ৬২ দশমিক ৭৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০১২ সালে রেলের সার্বিক গড় সময়ানুবর্তিতা ছিল ৬২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বর্তমানে সার্বিক সময়ানুবর্তিতার উন্নতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশে। অর্থাৎ ছয় বছরে রেলের সময়ানুবর্তিতা বেড়েছে ২৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ট্র্যক (রেললাইন) সংস্কার, নতুন ইঞ্জিন ও কোচ সংগ্রহ, টিকেটিং ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিভিন্ন সেকশনে একাধিক সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইনে রূপান্তর, পুরনো সেতু সংস্কার ও লোকবল নিয়োগের কারণে রেলের সময়ানুবর্তিতায় এ গ্রগগতি হয়েছে। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোঃ হাবিবুর রহমান গতকাল এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, বিগত বছরগুলোর চেয়ে এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে ট্রেনের সিডিউলের শতভাগ অগ্রগতি হয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখনই শতভাগ অগ্রগতি দাবি করতে পারি। তবে আগামীতে সর্বক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি হবে। রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেসের সিডিউল বিপর্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তবে সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার প্রতিদিন ২ লাখ ৬৫ হাজার যাত্রী বহন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ হাজার এবং চট্টগ্রাম থেকে ১৫ হাজার যাত্রী বহন করা হয়েছে। এজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া ছিল। গত বছর ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৭০টি বিলাসবহুল কোচ আমদানীর পর এবার ট্রেনের আসন সংখ্যা ৩০ হাজার বেড়েছে। এর বাইরেও ঈদ উপলক্ষে ১৭১টি নতুন কোচ যুক্ত হয়ে মোট কোচের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১শ’ ৬১টি। অতিরিক্ত লোকোমোটিভ যোগ হয়েছে ২১টি। ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য ১৪টি স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। এসব ট্রেন ঈদের আগে ২৩ থেকে ২৫ জুন এবং ঈদের পর ২৮ জুন থেকে আগামী ৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে। এছাড়া ঈদের দিন শোলাকিয়া স্পেশাল-১ চলেছে ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার এবং শোলাকিয়া স্পেশাল-২ চলেছে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রেলপথে। ঈদের আগেই ১৭ জুন পার্বতীপুর-দিনাজপুর-পঞ্চগড় রেলপথে একজোড়া আন্ত:নগর শাটল ট্রেনের উদ্বোধন করেছেন রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক, এমপি। নতুন ওই দুটি ট্রেনে দেশের সর্ব উত্তরের তিন জেলায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমান রেলমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই রেলের উন্নতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও রেলেকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট বৃদ্ধি করেছেন। বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে আন্তঃনগর, মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলকারী মেইন লাইনগুলোর আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে প্রতিটি ট্রেনের গতি বাড়ানো হয়েছে। কমেছে গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়। এছাড়া সা¤প্রতিক সময়ে পুরনো বন্ধ স্টেশন চালু করা, স্টেশনমাস্টার নিয়োগ, ইন্টারলকিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সেকশনে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে ট্রেনের যাত্রা ও গন্তব্যে পৌঁছার সময়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে। রেলের বার্ষিক সময়ানুবর্তিতা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১২ সালে আন্তঃনগর ট্রেনের গড় সময়ানুবর্তিতা ছিল ৭০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। একই সময়ে মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা ছিল ৩৬ দশমিক ৮৪ এবং লোকাল ট্রেনের ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। যদিও পরের বছর বিভিন্ন কারণে গড় সময়ানুবর্তিতা নেমে আসে ৬১ দশমিক ২০ শতাংশে। ওই বছর আন্তঃনগর ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা ছিল ৬২ দশমিক ৪২, মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩৮ ও লোকাল ট্রেনের ৮৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে ২০১৪ সাল থেকেই সময়ানুবর্তিতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি শুরু হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট রেলপথের বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন, নতুন কোচ সংযোজনের কারণে গড় সময়ানুবর্তিতা ৬৬ দশমিক ১১ শতাংশে উঠে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে সময়ানুবর্তিতা বেড়ে ৮২ দশমিক ২৭ ও ২০১৬ সালে ৮৯ দশমিক ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসের গড় সময়ানুবর্তিতা ৯১ দশমিক ৬৭ শতাংশে উঠে এসেছে। যা রেলের ইতিহাসে অভিনব এবং অকল্পনীয়ও বটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।