তারেক সালমান : বাজেট অধিবেশনের কারণে রোজার মাসে এলাকায় খুব বেশি সময় দিতে না পারলেও ঈদে এলাকামুখী আওয়ামী লীগের নেতা ও এমপি-মন্ত্রীরা। নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশিরভাগই এবার ঈদ করবেন নিজ নিজ এলাকায়। অংশ নেবেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে। যারা ঈদের দিন এলাকায় যেতে পারছেন না, তারাও আগে-পরে সময় করে দেখা করবেন নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে। অংশ নেবেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। ফলে সব মিলিয়ে এবার ঈদ ছুটিতে জমজমাট নির্বাচনী হাওয়ার আবহ তৈরি হয়েছে। আর নেতা-মন্ত্রীদের কাছে পেয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঈদ উৎসবে চাঙাভাব দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ঈদকে কেন্দ্র করে জমজমাট হচ্ছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী রাজনীতিও। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এবার গণভবনেই ঈদ উদযাপন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতি বছরের মত এবারো ঈদের দিন সকালে গণভবনে রাজনৈতিক নেতা, ক‚টনৈতিকসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদের নামাজ ঢাকাতেই পড়বেন। তবে ঈদের দিন বিকালে বা পরদিন সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে যাবেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু নির্বাচনী এলাকা ঝালকাঠিতে, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভোলায়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নির্বাচনী এলাকা সিলেটে ঈদ করবেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবারো দেশের বাইরে ঈদ করবেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে লন্ডনে ঈদ করার কথা রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফের। এছাড়া সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, কাজী জাফরউল্লাহ এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামে ঈদ করবেন। অন্যদিকে আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঈদের দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন। ঢাকায় ঈদের দিন কাটিয়ে পরের দিন নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ যাবেন। সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঈদ করবেন সিলেটে। সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ঢাকাতেই ঈদ করবেন বলে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রোজার মাসে বেশ কয়েকবার নিজ জেলা টাঙ্গাইল ও নিজের নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছি। ইফতার পার্টিসহ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি নানান সামাজিক কর্মকান্ডেও ব্যস্ত থেকেছি। ঈদ রাজধানীতেই করব। পরে সময় মতো এলাকায় যাব।
এছাড়া দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ঢাকাতেই ঈদ করবেন। তিনি বলেন, আমি ঈদের আগেই আমার এলাকার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত করি। এবারও করে এসেছি। ইফতারসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। জাকাতের কাপড় বিতরণ করেছি।
দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে মাহবুবউল আলম হানিফ ঈদ করবেন নিজ এলাকা কুষ্টিয়ায়। জাহাঙ্গীর কবির নানকের নির্বাচনী এলাকা ঢাকা হওয়ায় তিনি ঢাকাতেই ঈদ করবেন। আর বাকী দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে নিজের নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুরে যাবেন। আবদুর রহমান ফরিদপুরের মধুখালিতে নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদ করবেন।
সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে একেএম এনামুল হক শামীম ঈদ করবেন নিজ এলাকা শরিয়তপুরে। ঈদের পরদিন তিনি রাজধানীতে ফিরবেন বলে জানান। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নিয়মিতই নিজ জেলা দিনাজপুর ও নির্বাচনী এলাকা বিরলে যান। তিনি জানান, ঢাকা অথবা দিনাজপুরে তার ঈদ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আহমদ হোসেন নেত্রকোনায়, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেটে, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম মাদারীপুরে, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঈদ করবেন জয়পুরহাটে।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রামে, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ মাদারীপুরে, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী ঈদের দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে বিকালে নোয়াখালীতে নিজ এলাকায় যাওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, ঈদের দিন বিকালে কয়েক দিনের জন্য এলাকায় যাবো। তথ্য ও গবেষণা সম্পদক আফজাল হোসেন ঈদ করবেন নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে।
সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল ঈদের দিন সকালে প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে চলে যাবেন নিজ এলাকা নেত্রকোনায়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস ঈদের দিন মুন্সীগঞ্জে থাকবেন।
জানা গেছে, দলের তৃণমূলকে কাছে টানতেই নিজ নিজ এলাকায় যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা-মন্ত্রীরা। এলাকায় উন্নয়ন ও সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। চেষ্টা করছেন নেতাকর্মী ও সাধারণের মন জয়ের। তাদের পক্ষে রোজা-ঈদের শুভেচ্ছা সংবলিত পোস্টার সেটে দোয়া চেয়েছেন কেউ কেউ। ছোট-বড় ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে প্রার্থী হওয়ার আগাম বার্তাও দিয়েছেন অনেকেই। আবার নেতা, মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ঈদে এলাকায় পেয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরাও খুশি। অনেক নেতা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদের প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই দলের নেতাকর্র্মীদের মাঝে পবিত্র ঈদ উপলক্ষে ঈদ উপহার ও অসচ্ছল নেতাকর্মীদের মাঝে ঈদের বাজারও পৌছে দিচ্ছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা ঘনিষ্ঠভাবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে দাড়াচ্ছেন। খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
ঈদের ছুটিতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার বিষয়ে টাঙ্গাইল নির্বাচনী এলাকা- ৫ (টাঙ্গাইল সদর ও দেলদুয়ারের কিছু অংশ) সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার নিয়মিতই যোগাযোগ আছে। জাতীয় সংসদ অধিবেশন না থাকলেই আমি টাঙ্গাইলে ছুটে আসি। রোজার মধ্যেও নিয়মিত আমি বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকেছি।
সানোয়ার বলেন, এবারের ঈদের সঙ্গে নির্বাচনী আমেজ ও ব্যস্ততাও রয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ১৩ জুলাই। সেই নির্বাচন নিয়ে অবশ্যই আমি ব্যস্ত। তবে ঈদের সময় বা অন্য যেকোনো সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আমার আগে থেকেই ছিল। আমার বাবাও নেতাকর্মীদের সঙ্গে, এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। উনার পর আমিও চেষ্টা করি নিয়মিত নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর পাশাপাশি থাকতে। তবে, দলে নেতাকর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক। সবার মন রক্ষা করা কঠিন। তবু চেষ্টা করি সব সময় তাদের পাশে থাকতে।