পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ঈদ করতে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে। যানজটের কারণে পথে পথে এমনিতেই ভোগান্তি; তারপর হঠাৎ করে ভাড়া বৃদ্ধি করায় চরম ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালে দেড়শ টাকার ভাড়া ৩শ টাকা এবং দু’শ টাকার বাস ভাড়া চারশ থেকে ৫শ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অসহায় যাত্রীদের বাধ্য হয়েই দ্বিগুন-তিনগুন অতিরিক্ত টাকায় টিকেট কাটতে হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ বাসের কাউন্টারে গেলে জানিয়ে দেয়া হয় টিকেট নেই; অথচ একটু বাঁকা পথেই বলা হয় এতো টাকা দিলেই টিকেট দেয়া হবে। আবার কোনো কোনো কাউন্টারেই দ্বিগুন তিনগুন বেশি টাকা নিয়ে টিকেট বিক্রী করা হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর তিনটি আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেল স্টেশনে মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। যানবাহন বেশি হওয়ায় ঢাকা রংপুর রুটে থেমে থেমে গাড়ী চলছে। টাঙ্গাইল, বঙ্গবন্ধু সেতু ও হাটিকুমরুলে যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ঘরমুখো মানুষ।
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদ কান্দি, চিটাগাংরোড, মোগড়াপাড়া, মেঘটা ব্রীজসহ কয়েকটি স্পটে যানজটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। থেকে থেমে চলছে গাড়ি। ঢাকা মানিকগঞ্চ রুট ও ঢাকা মাওয়া রুটে একই অবস্থা বিরাজমান। আইন শৃংখলা বাহিনী তৎপরতায় কোথাও কোথাও যানজট দীর্ঘস্থায়ী না হলেও ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত সারাদেশের মহাসড়কে যানজট রয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে কিছু ট্রেন সিডিউল ঠিক রাখতে পারলেও অনেক ট্রেন দেড় থেকে আড়াই ঘন্টা বিলম্বে যাত্রা করছে। সদরঘাটে তিল ধরণের ঠাই নাই। এবার ঈদের সরকারি ছুটি ২৫ জুন রোববার থেকে ২৭ জুন মঙ্গলবার। তার আগে দুদিন শুক্র আর শনিবার থাকায় কার্যত বৃস্পতিবার বিকাল থেকেই শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতুতে যানজট দেখা গেলেও গতকাল শুক্রবার ভোরে কমে আসে। কিন্তু সকালে সেতুতে একটি ট্রাক বিকল হওয়ায় ফের লেগেছে যানবাহন জট। ভোগান্তিতে পড়েছে ঘরমুখো মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি শেখ শরীফুল হাসান। তিনি জানান, মঘনা ব্রিজের গোড়ায় এখন কমে হাফ কিলোমিটারের মতো জ্যাম আছে। আস্তে আস্তে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মাওয়া মহাসড়কেও তেমন যানজট নেই বলে সায়েদাবাদ থেকে বরিশাল-খুলনা অঞ্চলগামী বাসগুলোর কাউন্টারকর্মীরা জানিয়েছেন। তারা বলেন, এই রুটে আশঙ্কার চেয়ে যানজট কম হয়েছে। উত্তরের পথে টাঙ্গাইলে মহাসড়কে গাড়িগুলোর গতি ধীর হওয়া ছাড়া আর তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। একইচিত্র মহাখালী থেকে ময়মনসিংহগামী বাসের ক্ষেত্রেও। যাত্রীরা জানান, ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে একদিন আগেও দীর্ঘ ৬০ কিলো মিটার যানজট থাকলেও তা কমে এসেছে। তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু, সিরাজগঞ্জের কড্ডার পাড় ও হাটিকুমরুলে যানজট ব্যপক।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিভিন্ন রুটের যানবাহনের ভিড় থাকলেও সকালে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় তেমন যানজট দেখা যায়নি। তবে দুপুরের পর যানজট লেগে যায়। মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সকালে ঢাকা বাইপাস সড়কে প্রচুর ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলতে দেখা গেছে।
সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় বেড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চগুলো দুপুরের পর থেকে ঘাট ছাড়তে শুরু করেছে। মধ্যরাত পর্যন্ত লঞ্চগুলো সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলে যায় বলে জানা যায়।
গাবতলীর কয়েকজন কাউন্টার ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সকাল ৯টা পর্যন্ত তারা নির্ধারিত সময়ে বাসগুলো ছাড়তে পেরেছেন। তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলে ধীরগতির কারণে পরে সমস্যা দেখা দেয়। সিডিউল ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এসআর ট্রাভেলেসের এজিএম টি আর প্লাবন বলেন, আমাদের হাতে গাড়ি ছিল, সেগুলো সকাল ৯টা পর্যন্ত ঠিক সময়ে ছাড়তে পেরেছি। কিন্তু যানজটের কারণে গতকাল বিকালের দিকে যাওয়া গাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে। এরপর থেকে লেট হবে। টিআরের এক ড্রাইভার জানান, গাড়ী ঢাকায় সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় গাড়ী ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, যমুনা ব্রিজ থেকে এদিকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া যেখানে যানজট নেই সেখানেও রাস্তার কারণে ধীর গতিতে চলছে গাড়ি। উত্তরবঙ্গমুখী বাসের আগমনী কাউন্টারের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট যেটা আছে সেটা স্বাভাবিকই বলতে হবে। কালকের যাওয়া গাড়িগুলো অনেকটা ঠিক সময়ে ফিরে আসছে। রাস্থায় যে পরিস্থিতি আছে সেটা অন্যান্য সময়ের মতোই। রাস্তা একেবারে ক্লিয়ার না থাকলেও গাড়ি ভালোভাবে ফিরে আসছে। এটা বজায় থাকলে পরবর্তীতেও ঠিক সময়ে গাড়ি ছেড়ে যেতে পারবে।
গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী ব্রিজ থেকে ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ পড়েছে এই মহাসড়কে। ভোগড়া বাইপাস থেকে কোনাবাড়ি হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত সড়কের যানবাহনের অত্যাধিক চাপ রয়েছে। তবে যানবাহন চলছে ধীর গতিতে। সালানা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হোসেন সরকার জানান, কোনাবাড়ি থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত যানবাহনের অনেক চাপ রয়েছে। গাড়িগুলো ধীর গতিতে চলছে। জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, যাত্রী ও যানবাহনের প্রচন্ড চাপে রাস্তায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি হয়েছে। রাস্তায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা যানবাহনের শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। তারপরও যানজট লেগেই আছে।
গাবতলী ও কল্যাণপুরের কাউন্টারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, অগ্রিম টিকেটের যাত্রীরা সকাল থেকে ঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা করতে পেরেছেন। তবে দক্ষিণ ও দক্ষিণপশ্চিমালহআচল মুখী গাড়ীরর কাউন্টারগুলোর সামনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
ট্রেনের ছাদেও মানুষ ঃ ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপে মঙ্গলবার ট্রেনের সময়সূচি এলোমেলো হয়ে গেলেও পরদিন বুধবার সামলে ওঠেছিল রেলওয়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেও কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনগুলো মোটামুটি সময় ধরে ছাড়ছে। তবে শুক্রবার সকালে রংপুর এক্সপ্রেস দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা দেরিতে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। ইঞ্জিনের ত্রæটি থাকায় এই বিলম্ব হয়। দুদিন থেকেই কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভীড়। যাত্রী সংখ্যা বেশি হওয়ায় নিয়ম ভেঙে প্রায় সব ট্রেনের ছাদেই মানুষকে চড়তে দেখা গেছে। ছাদে বিপুল সংখ্যা যাত্রী নিয়ে ট্রেনের যাত্রা ভয়াবহ বিপদের শঙ্কা থেকেই যায়। কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ১৪টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে। অধিকাংশ ট্রেনে যাত্রীর প্রচন্ড চাপ লক্ষ্য করা গেছে। তার আগে রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী সাংবাদিক ফারুক আহমেদ জানান, রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। ট্রেন প্লাাটফর্মে এসেছে। কিন্তু প্রচন্ড ভিড়। কমলাপুর রেলস্টেশনের আনসার কমান্ডার ইয়ার হোসেন বলেন, ট্রেনগুলো সময়সূচি অনুসারেই ছেড়ে যাচ্ছে। তবে গত দুই দিনের চেয়ে আজ যাত্রীদের অনেক বেশি ভিড়। তিনি জানান, খুলনার উদ্দেশে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস যায়। এরপর সিলেটের উদ্দেশে সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে পারাবত এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের উদ্দেশে সকাল ৭টায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে এগারসিন্দুর ৭টা ১৫ মিনিটে, দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশে তিস্তা ৭টা ৩০ মিনিট, চট্টগ্রামের উদ্দেশে মহানগর প্রভাতি ৭টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। চিলাহাটির উদ্দেশে নীলসাগর এক্সপ্রেস নির্ধারিত সকাল ৮টার পরিবর্তে ৮টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যায়।
চাপ বেড়েছে সদরঘাটে ঃ শুক্রবার সকালে সদরঘাটে লঞ্চ যাত্রীর চাপ দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা কমে যায়। দুপুরের পর আবার চাপ বৃদ্ধি পায়। সাধারণত সকালে চাঁদপুরসহ নিকট গন্তব্যের লঞ্চগুলো ঢাকা ছেড়ে যায়। মাঝে বিরতির পর বিকালে শুরু হয় বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ দূর গন্তব্যের লঞ্চগুলোর যাত্রা। বিআইডবিøউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) হুমায়ূন কবির বলেন, ভোর থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত যাত্রীর চাপ ছিল। সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৫টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায় সদরঘাট থেকে। বাকীগুলো রাতে ছাড়বে। বৃহস্পতিবার সারাদিনে সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়েছিল ৮২টি। বরিশালগামী এমভি টিপু লঞ্চের কর্মী সুজন মহাজন জানান, দুপুরের দিকে যাত্রী এমনিতেই কম থাকে। বিকালে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে। বিআইডবিøউটিএর যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন জানান, ঘাটের পরিস্থিতি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখছেন তারা। কোথাও ধরনের অপ্রীতিকর কিছু দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার সমাধান করা হচ্ছে।
পাটুরিয়া ফেরিঘাটে তীব্র জট ঃ ঈদে ঘরমুখো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী ও যানবাহনের চাপ পড়েছে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। ফেরি সংকটের কারণে যানবাহন পারাপারে যানবাহনকে তিন থেকে চার ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ব্যক্তিগত পরিবহন অর্থাৎ প্রাইভেটকার, মাইক্রেবাসের চাপ অনেক বেশি বেড়েছে। ফেরিঘাট ছাড়িয়ে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ছোট গাড়ির লাইন পড়ে গেছে। ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, শুক্রবার ভোররাত থেকে পাটুরিয়াঘাটে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। যে হারে ফেরিতে যানবাহন পার করা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি হারে যানবাহন ঘাটে এসে পৌঁছছে। এতে পারাপারে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিআইডবিøউটিসির আরিচা সেক্টরের এজিএম জিল্লুর রহমান জানান, ঈদ উপলক্ষে এই বহরে নতুন দুইটি ফেরি যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো ডকইয়ার্ড থেকে এখনো পাটুরিয়ায় পৌছেনি। বর্তমানে ১৫টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে গতকাল শুক্রবার থেকে ঈদের তিনদিন পর পর্যন্ত সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। পাটুরিয়ার টার্মিনালে ৫শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।