নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
মো: আলতাফ হোসেন : মার্শাল আর্ট পরিভাষাটি ব্যাপকভাবে প্রাচ্য এশীয় লড়াইয়ের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মানুষ আত্মরক্ষার জন্য এটা ব্যবহার করে। সুস্থ্য থাকা এবং ওজন কমানোর সহজ উপায় হিসেবে মার্শাল আর্ট কুংফু ও কারাতে খুবই জনপ্রিয় ব্যায়াম। ওরিয়েন্টার মার্শাল আর্ট হিসেবে কারাতে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পায় ষাট ও সত্তর দশকে। এ খেলায় হাত ও পায়ের ব্যবহারই মুখ্য। প্রিয় পাঠক ‘আত্মরক্ষায় কারাতে’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনে এর আগে আমরা দশম পর্ব পর্যন্ত আলোচনা করেছিলাম। কিছুদিনের বিরতিতে আজ ১১তম পর্বে শিখবো ‘ইচাগিরী’-
দশম পর্বের লেসনে ছিলো মাউশিগীরী। আজ শিক্ষার্থীরা শিখবে ইচাগিরী ব্যবহারের কৌশল ও কার্যকারিতা। যে কোনে খেলাধুলার পূর্বে কিছুক্ষণ ওয়ার্মআপ করে নিলে ভালো হয়। যেহেতু কারাতে প্রশিক্ষণ একটি কঠিন অনুশীলন তাই ওয়ার্মআপের মাধ্যমে কারাতে প্রশিক্ষণের জন্য শরীরকে প্রথমে নমরীয় করতে হয়, এরপর কারাতের ব্যায়াম করতে হয়। শরীর সুস্থ্য থাকলে মনও ভাল থাকে। তাই সুস্থ্য শরীরের জন্য খেলাধুর পূর্বে ওর্য়ামআপ এবং ব্যায়াম অপরিহার্য। আজ ১১তম পর্বে ইচাগিরী শুরু করার পূর্বে আগের লেসনগুলো করে নেবো। আগের লেসনগুলো করা শেষ হলে ইচাগিরীর জন্য প্রস্তত হবেন শিক্ষার্থী।
ইচাগিরী শুরু করার পূর্বে প্রথমে শিক্ষার্থীকে সালাম বা বো করে কিবাডাসী পজিশনে থাকতে হবে। অর্থাৎ দুই হাটুর উপর ভর করে দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় কোমড়ে থাকবে। হাটু দুু’টি ভাঙ্গা অবস্থায় রেখে পরিমান মতো পা দুটি একটু ফাঁক করে দাঁড়তে হবে। সেই সঙ্গে দুই হাটুর উপর ভর করে দাঁড়াতে হবে, যাতে শরীর সোজা অবস্থায় থাকে এবং হাটুর ওপর শরীরের ভারসাম্য থাকে। এ অবস্থাকে কিবাডাসী পজিশন বলে। শিক্ষার্থীকে মনে রাখতে হবে যে কোনো লেসন শুরুর পূর্বেই সালাম বা বো করে কিবাডাসী অবস্থা থেকেই শুরু করতে হবে। আজকের লেসনে প্রথমে কিবাডাসী থেকে ইচাগিরী করার সময় ডান পা বাম পায়ে স্পর্শ করে পেছনে চলে যাবে। একই সঙ্গে বাম হাটুর উপর বাম হাতটি মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকবে এবং ডান হাতটি ডান কোমড়ে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকবে। অর্থাৎ সায়মন সখী পজিশনে থাকবে। সায়মন সখী পজিশন থেকে প্রথমে ডান পাটির হাটু ভেঙ্গে একটু ঘুরে শরীর আর্টফুল রেখে সজোরে হাটু দ্বারা আঘাত করতে হবে। ডান পায়ে ইচাগিরী মারার সময় হাটু ভাঙ্গা ডান পার উপরে ডান হাত এবং বাম হাতটি একটু ভেঙ্গে ডান হাতের সাথে ব্যালেন্স করে আর্টফুল অবস্থায় থাকবে।
আবার বাম পায়ে ইচাগিরী করার সময় ঠিক একই কায়দায় মারতে হবে। ডান পায়ে ইচাগিরী করার সময় ডান হাটু দ্বারা সজোরে মারা হয়েছিল তখন ডান হাতটি ছিল ডান হাটুর উপর এবং বাম হাতটি ডান হাতের সঙ্গে ব্যালেন্স করে আর্টফুল অবস্থায় ছিল। এবার বাম পায়ে ইচাগিরী মারার সময় বাম হাটু দিয়ে সজোবে মারতে হবে। মারার সময় হাটুটি ভাঙ্গা অবস্থায় থাকবে। বাম হাতটিও হাটু ভাঙ্গা বাম পায়ের উপর থাকবে সেই সঙ্গে ডান হাতটি একটু ভেঙ্গে আর্টফুল অবস্থায় থাকবে। এভাবে একবার ডানহাটু দিয়ে ইচাগিরী মারতে হবে আবার বাম হাটু দিয়ে মারতে হবে। এভাবে পা বদল করেও ইচাগিরী করা যেতে পারে। আবার একবার ডান পায়ে বেশ কয়েকবার ইচাগিরী করে নিয়ে তারপর আবার বাম পায়েও ইচাগিরীর করা যেতে পারে। ইচাগিরী অনুশীলনের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী হয়ে ওঠতে পারেন আরো কৌশলী। এ কিকের মাধ্যমে হাটুর শক্তি বৃদ্ধি করে সেই সঙ্গে শিক্ষার্থী প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ইচাগিরী ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। এই কিকের মাধ্যমে খুব কাছ থেকেই হাত ও পায়ের ব্যবহার পাশাপাশি যেমন অন্যান্য কিকের মতো সুযোগে প্রতিপক্ষকে আচমাকা আঘাত করার জন্য ইচাগিরীর কার্যকারিতা অনেক বেশি।
কারাতে শিক্ষা একজন খেলোয়াড়কে অতি পটু করে তুলতে পারে বলেই খেলোয়াড়দের মধ্যে গড়ে ওঠে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। আর আত্মবিশ্বাসই হলো সাফল্য অর্জনের রহস্য। কারাতে যারা শিখবেন তাদের ক্রোধ দমনের ক্ষমতা থাকতে হবে। ক্রোধ যে কোনো মূহুর্তে বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাছাড়া এ বিদ্যা মানব কল্যাণের জন্য নিপীড়নের জন্য নয়। কথাটা মনে রাখতে হবে। এ বিদ্যায় দৈহিক শক্তি কৌশলের সাথে থাকা চাই উপস্থিত বুদ্ধি যা বেশি করে উপকারে আসে। খেলা হিসেবে কারাতে দর্শকের কাছে আকর্ষনীয় বটে আর একজন খেলোয়াড়ের কাছে কারাতে হচ্ছে শারীরিক ফিটনেসের রক্ষাকবজ।
আমরা অনেকেই আছি যারা নিয়মিত খেলাধূলা ও শরীর চর্চা ভালোবাসি। আমি নিজেও তাদের একজন। এক ঘেয়েমি কাটানো এবং ব্যায়াম দুটোই এক সঙ্গে করার জন্য শিখতে পারেন মার্শাল আর্ট। এ খেলাটি একদিকে যেমন উচ্চ মাত্রায় ব্যায়াম তেমন এর সঙ্গে পাবেন আত্মরক্ষার নানা কৌশল।
লেখক : সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ, কারাতে কোচ ও চেয়ারম্যান, মানিকগঞ্জ জেলা গ্রীন ক্লাব
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।